টেকনো ইন্ডিয়া গোষ্ঠীর তরুণ কর্তা মেঘদূত রায়চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত।
প্র: রায়চৌধুরী পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্ম তা হলে ব্যবসায় ঢুকে পড়ল?
মেঘদূত: হ্যাঁ, ঢুকেই পড়লাম। ফর্ম্যালি জয়েন করেছি ২০১৭-র জুলাইতে, ডায়রেক্টর-গ্লোবাল অপারেশনস হিসেবে। কিন্তু আসলে অনেক বছর আগেই ব্যবসায় জুড়ে গিয়েছি।
প্র: কত দিন আগে? বিদেশ থেকে ফিরলেন তো ২০১৭ সালেই।
মেঘদূত: হ্যাঁ, ২০১৭-র জুলাইতেই ফিরেছি, ওই মাসেই ফর্ম্যালি অফিস জয়েন করেছি। সেটা ঠিক। কিন্তু আমার বয়স যখন ৫-৬ বছর, তখন থেকেই আমি এই পারিবারিক ব্যবসার সঙ্গে ছিলাম। চোখের সামনে টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপকে এত বড় হতে দেখলাম।
প্র: ৫-৬ বছর বয়স থেকে! কী ভাবে?
মেঘদূত: আসলে ব্যবসাটা তো বাবার হাত ধরে শুরু। আমার বাবার বাবা, মানে দাদু, তিনি তো এ সবের ধারে-কাছেও ছিলেন না। তিনি ছোটখাটো সরকারি চাকরি করতেন, ও পার বাংলায় পোস্টমাস্টার ছিলেন। আমি সে সব দিন দেখিনি। ১৯৯১ সালে আমার জন্ম। তার পরে যখন ৫-৬ বছর বয়স হল, তখন থেকেই বাবার সঙ্গে ঘুরতাম। টেকনো ইন্ডিয়া গ্রুপ তখন ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। সবটাই আমার চোখের সামনে। তাই কিছুই নতুন লাগছে না।
প্র: ছোটবেলা থেকেই তার মানে পারিবারিক ব্যবসা সম্পর্কে বেশ উৎসাহী আপনি। বাঙালি পরিবারগুলো সাধারণত যে দৃশ্য বিরল...
মেঘদূত: হ্যাঁ, ছোটবেলা থেকেই আমার ভাল লাগত। আমার হায়ার স্টাডিও সেই লক্ষ্যেই।
প্র: বিজনেস ম্যানেজমেন্ট নিশ্চয়ই?
মেঘদূত: এগজ্যাক্টলি, বিজনেস ম্যানেজমেন্টই পড়েছি। পারিবারিক ব্যবসাটা কী ভাবে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব, সেটাও মাথায় ছিল। সে রকম বেশ কিছু কোর্স করেছি।
প্র: কোথায় পড়েছেন?
মেঘদূত: মূলত ফ্রান্সে। তবে আমি তিন দেশের তিনটে ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেছি। ফ্রান্স ছাড়াও, স্টেটসে (আমেরিকা) পড়েছি, পড়েছি ইজরায়েলেও।
প্র: তার পরে দেশে ফিরেছেন?
মেঘদূত: নট এগজ্যাক্টলি। আমি বিদেশে কিন্তু শুধু পড়াশোনা করিনি, ইন্টার্নশিপ করেছি, চাকরি করেছি, বিভিন্ন প্রজেক্টে কাজ করেছি। সেই সূত্রে জার্মানিতে থাকতে হয়েছে কিছু দিন। কিছু দিন কেটেছে চেক রিপাবলিকে, কিছু দিন ব্রাজিলেও।
ছবি: সংগৃহীত।
প্র: শুনতে সত্যিই ভাল লাগছে মেঘদূত। মাত্র ২৬ আপনি, এর মধ্যেই পৃথিবীর অনেকটা দেখে ফেলেছেন, অনেক অভিজ্ঞতাও ঝুলিতে ভরেছেন।
মেঘদূত: হ্যাঁ, সেটা ঠিকই। কিন্তু আমি সেই সুযোগটা পেয়েছি এই রকম একটা পরিবারে জন্মেছি বলেই। এডুকেশন শুধু আমাদের ব্যবসা নয়, এডুকেশন আমাদের পরিবারের ভালবাসা বলতে পারেন। আমি নিজেও সেই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়েছি। পরিবারও আমাকে সব রকম সুযোগ দিয়েছে।
প্র: টেকনো ইন্ডিয়ার অন্যতম ডায়রেক্টর হওয়ার পর কী ভাবে এগনোর কথা ভাবছেন? যে ব্যবসা রয়েছে, তাতেই মন দিচ্ছেন? নাকি আরও নতুন নতুন ব্যবসার কথাও ভাবছেন?
মেঘদূত: অফ কোর্স, নতুন ভাবনা রয়েছে। ইমার্জিং টেকনোলজি নিয়ে আমরা অনেক নতুন নতুন কাজ করছি। আধুনিক জীবনে টেকনোলজি তো অনেকটা জায়গা নিয়ে নিয়েছে। আরও অনেক নতুন টেকনোলজি সামনে আসছে, জীবনকে আরও সহজ করে তোলার জন্য। সে সব নিয়ে আমরা এখন অনেক কাজ করছি।
আরও পড়ুন: গ্যাস ক্ষেত্রে পথ খুলল ৪০ হাজার কোটি লগ্নির
প্র: একটু ভেঙে বলবেন?
মেঘদূত: আমরা একটা ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি ল্যাব নিয়ে কাজ করছি। ধরুন একটা চশমা, যে চশমাটা পরলে, আপনার সামনে যা বাস্তবে নেই, আপনি সেটাই দেখতে পাবেন। ডাক্তারি পড়েন যাঁরা, তাঁদের তো হিউম্যান বডি নিয়ে কাজ করতে হয়, কাটাছেঁড়া করতে হয়। এ বার প্রত্যেক ছাত্রকে একটা করে হিউম্যান বডি দেওয়া হবে, তাঁরা কাটাছেঁড়া করে ডাক্তারি শিখবেন, তেমনটা তো সম্ভব হয় না। সেখানে এই চশমা কাজে লাগবে। কোনও বডিই লাগবে না। চশমাটা চোখে পরে নিলেই সামনে হিউম্যান বডি দেখতে পাওয়া যাবে, কাটাছেঁড়াও করা যাবে।
প্র: এই সব ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি ইনস্ট্রুমেন্টস কি আপনারা বানাচ্ছেন?
মেঘদূত: শুধু বানাচ্ছি না, ল্যাবও থাকছে। অর্থাৎ ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি নিয়ে আর কত রকমের কাজ করা যায়, সে সব বিষয়ে গবেষণা হবে। তার সঙ্গে কমার্শিয়াল প্রোডাকশনও হবে।
প্র: আর কী কী করছেন?
মেঘদূত: আইওটি ল্যাব থাকছে। স্মার্ট সিটির যে ধারণা ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে, তাতে অদূর ভবিষ্যতে কোন কোন প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়বে, সে সব সম্ভাবনা আমাদের ল্যাবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সেই অনুযায়ী উৎপাদনের ব্যবস্থাও রাখা হচ্ছে। আমরা ড্রোন টেকনোলজি নিয়েও খুব বড় পদক্ষেপ করছি। দৈনন্দিন জীবনে ড্রোন কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, আগামী বছর খানেকে সেটা দেখতে পাবেন। আমাদের হাত ধরেই হবে সেটা।
প্র: তা হলে টেকনো ইন্ডিয়া গোষ্ঠীর ফোকাস এখন আর শুধুমাত্র শিক্ষা জগতের উপরে নয়?
মেঘদূত: না, না। এ রকম ভাবার কোনও কারণ নেই। এডুকেশনই টেকনো ইন্ডিয়ার ফোকাস ছিল, এডুকেশনই থাকবে। কিন্তু তার পাশাপাশি আমরা আধুনিক প্রযুক্তি নিয়েও কাজ করব। আমাদের ল্যাবে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট তো চলবেই। তার পাশাপাশি আমরা দেখব, কোন প্রজেক্ট কতটা জনপ্রিয় হচ্ছে। সেই অনুযায়ী প্রোডাকশনও করব। শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, গোটা পূর্ব ভারতে কেউ এখনও এই রকম গবেষণাগার তৈরির কথা ভাবেননি।
আরও পড়ুন: এ বার ঘর গোছানোর পালা বাজারে
প্র: আপনাদের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের পড়ুয়ারাও তো এই প্রজেক্টগুলো থেকে লাভবান হতে পারেন।
মেঘদূত: অবশ্যই পারেন। সেটাও তো আমাদের এই ভাবনার অন্যতম কারণ। যাঁরা আমাদের কলেজে পড়তে আসছেন, তাঁরা নিখরচায় আমাদের এই বিশাল ল্যাব ইনফ্রাস্ট্রাকচার পাবেন। অনেক রকমের গবেষণার সুযোগ থাকবে। আর যে হেতু আমরা প্রোডাকশন ইউনিটও তৈরি করছি, সে হেতু কাজের সুযোগও তৈরি হবে।
প্র: তার মানে, টেকনো ইন্ডিয়ায় পড়লে টেকনো ইন্ডিয়াতেই চাকরি পাওয়ার সুযোগ থাকছে।
মেঘদূত: একেবারেই তাই। কাজের সুযোগ তো আমাদের তৈরি করতেই হবে। এত ছেলে-মেয়ে প্রতি বছর ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করছে। তাঁদের প্লেসমেন্টের জন্য পুরোপুরি অন্য সংস্থার উপর নির্ভর করাটা ঠিক নয়। চেষ্টা করছি যাতে, নিজেরাই কাজ দিতে পারি।
প্র: বোঝা গেল। তরুণ বাঙালি পুঁজিপতি শিক্ষা আর আধুনিক থেকে আধুনিকতর প্রযুক্তি নিয়ে খুব উৎসাহী।
মেঘদূত: উৎসাহের আরও কয়েকটা ফিল্ড রয়েছে। আমাদের একটা রেস্তোরাঁ রয়েছে, নিউ টাউনেই। সেটা নিয়ে খুব বড় করে ভাবছি। আর্সালান আর বিরিয়ানি— অনেকটা সমার্থক হয়ে উঠেছে বিষয়টা। হতেই পারে যে, আমার রেস্তোরাঁ আর কলকাতার সেরা কন্টিনেন্টালের ঠিকানা সমার্থক হয়ে উঠল।
ছবি: সংগৃহীত।
প্র: গান-বাজনায় উৎসাহ রয়েছে শুনেছি।
মেঘদূত: খুব উৎসাহ রয়েছে। আমার একটা স্টুডিও রয়েছে তো। সল্টলেক সেক্টর ফাইভে। এ দেশের প্রায় সব বড় সিঙ্গারই আমার স্টুডিওয় রেকর্ডিং করেছেন। আমি নিজেও একটু-আধটু গান-বাজনা করি।
প্র: মাল্টি-ট্যালেন্ট বলে পারি?
মেঘদূত: ট্যালেন্ট কি না জানি না। কিন্তু আমি আসলে খুব তাড়াতাড়ি বোরড্ হয়ে যাই। তাই অনেক কিছু নিয়ে থাকি।
প্র: এত কিছু সামলাতে ক্লান্ত লাগে না?
মেঘদূত: একেবারেই না। এত কিছু নিয়ে থাকতেই ভাল লাগে। তাতেই এনার্জি পাই।