সংস্কৃতিতে মিল, দূরত্ব বাড়ছে কি উড়ানের অভাবে

একই কথা বলেছেন ইন্দোনেশিয়ার ডেপুটি পর্যটক মন্ত্রী ই গিডে পিটানা। তাঁর বক্তব্য, ভারতীয় পর্যটকেরা এখনও মূলত ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপেই বেড়াতে যান।

Advertisement

স্যমন্তক ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৮ ০৩:০১
Share:

ভারত থেকে সরাসরি ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার কোনও উড়ানের ব্যবস্থা করছে না বিমান সংস্থাগুলি।

বছরে পাঁচ লক্ষ ভারতীয় পর্যটক বেড়াতে যাচ্ছেন ইন্দোনেশিয়ায়। প্রতি বছর পর্যটক বৃদ্ধির হার প্রায় ২৮ শতাংশ। অথচ ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলি সরাসরি ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার কোনও উড়ানের ব্যবস্থা করছে না। বাইপাসের ধারের একটি পাঁচতারা হোটেলে বালি খাদ্য উৎসবের আয়োজনে এসে অভিমান করলেন ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রদূত সিদ্ধার্থ সূর্যদিপুরো। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বর্তমানে ভারতের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার যে বিমান পরিবহণ চুক্তি আছে, তাতে সপ্তাহে ২৮টি বিমান চালানো যায়। প্রয়োজনের তুলনায় যা নেহাতই কম।’’ তবে তিনি আশাবাদী, এই চুক্তির রদবদল ঘটবে। সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দোনেশিয়া সফরে গিয়ে জানিয়েছেন, বিমান পরিবহণ চুক্তির বদল হবে। উড়ানের সংখ্যা বাড়লে এবং ভারতীয় বিমান সংস্থাগুলি দু’দেশের মধ্যে সরাসরি বিমান যোগাযোগ চালু করলে পর্যটকের সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই সিদ্ধার্থের বিশ্বাস।

Advertisement

একই কথা বলেছেন ইন্দোনেশিয়ার ডেপুটি পর্যটক মন্ত্রী ই গিডে পিটানা। তাঁর বক্তব্য, ভারতীয় পর্যটকেরা এখনও মূলত ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপেই বেড়াতে যান। অন্য দ্বীপগুলিকেও যাতে একই ভাবে পর্যটকদের সামনে তুলে ধরা যায়, তার ব্যবস্থা তাঁরা করছেন। কারণ ভারতের সঙ্গে ইন্দোনেশিয়ার পর্যটন যোগাযোগ শতাব্দীপ্রাচীন। ইন্দোনেশিয়া চায়, এই যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি পাক।

ভারত এবং ইন্দোনেশিয়ার সম্পর্ক নিয়ে কাজ করছেন গবেষক সুদীপ সেন। খাদ্য উৎসবের অনুষ্ঠানে ‘প্রাইড অ্যান্ড গ্লোরি অব বালিযাত্রা’ নামক একটি তথ্যচিত্র দেখান তিনি। যার মূল কথা, দু’দেশের সম্পর্ক। কেমন ছিল সেই সম্পর্ক? সুদীপ জানাচ্ছেন, ‘‘প্রায় দু’হাজার বছরের পুরনো এই ইতিহাস।’’ পূর্ব ভারতের কলিঙ্গ অঞ্চল থেকে বহু মানুষ সে সময়ে পাড়ি জমাতেন ইন্দোনেশিয়ার সৈকতে। কার্তিক পূর্ণিমার দিন অনুষ্ঠিত হত ‘বালিযাত্রা’। সারা দিন পুজো করে সন্ধ্যায় জাহাজ নিয়ে রওনা দিতেন অভিযাত্রীরা। যাঁদের অনেকেই মাঝ সমুদ্রে হারিয়ে যেতেন। জলদস্যুদের হাতে বন্দি হতেন। যাঁরা পৌঁছতেন, তাঁরা কেবল ব্যবসা করে ফিরে আসতেন না। বালিতে রেখে আসতেন নিজেদের সংস্কৃতি, ধর্মীয় ঐতিহ্য। বহু অভিযাত্রী থেকেও যেতেন। এখনও বালির জনসংখ্যার একটি বড় অংশ কলিঙ্গ বংশোদ্ভূত। আর আছেন, কিছু দক্ষিণ ভারতীয়। এখনও বালি দ্বীপে ভারতীয় সংস্কৃতির বহু নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায়।

Advertisement

সুদীপকে সমর্থন জানিয়ে সিদ্ধার্থের সংযোজন, ‘‘ইন্দোনেশিয়ার সংস্কৃতিতে ভারতীয় ঐতিহ্য এতটাই গভীরে যে, ওয়াশিংটনে ইন্দোনেশিয়ার দূতাবাসের বাইরে দেশের প্রতীক হিসেবে সরস্বতীর মূর্তি বসানো হয়েছে। যা তৈরি করেছেন বালির এক শিল্পী। ইন্দোনেশিয়া মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও হিন্দু সংস্কৃতিকে এতটাই গুরুত্ব দেওয়া হয়। সেই গুরুত্বের পিছনে আছে দীর্ঘ দু’হাজার বছরের ইতিহাস।’’

সিদ্ধার্থের কথার রেশ ধরে সুদীপ বলেন, ইন্দোনেশিয়ার বহু অঞ্চলে হিন্দু সংস্কৃতির ছায়া এখনও স্পষ্ট। অন্য দিকে, ওড়িশার উপকূলে এখনও প্রতি বছর কার্তিক পূর্ণিমায় ‘বালিযাত্রা’ উৎসব উদ্‌যাপিত হয়।

সুদীপ ও সিদ্ধার্থ দু’জনেই চাইছেন, দু’দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ক আরও গাঢ় হোক। বিমানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাক। পূর্ব ভারতের সঙ্গে বালি দ্বীপের সরাসরি বিমান যোগাযোগ তৈরি হোক। এয়ার ইন্ডিয়া সূত্রের খবর, পূর্ব ভারত, বিশেষত কলকাতা থেকে বালি যাওয়ার প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। এই সেক্টরে বিমান চালানোর ব্যাপারে ভাবনা-চিন্তাও চলছে। কিন্তু নতুন রুট তৈরির ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় বিমানমন্ত্রক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন