এ বারও ব্যর্থ হল বিজয় মাল্যের কিংগ্ফিশার এয়ারলাইন্সের বকেয়া ঋণের কিছুটা উদ্ধার করার প্রচেষ্টা।
শনিবারই সংস্থার বিভিন্ন প্রতীকচিহ্ন (ট্রেডমার্ক) নিলামে তুলেছিল ১৭টি ঋণদাতা ব্যাঙ্কের কনসোর্টিয়াম। ন্যূনতম দাম রাখা হয় ৩৬৬.৭০ কোটি টাকা। কিন্তু সেগুলি কিনতে দরই হাঁকলেন না কেউ। এর আগে গত মাসেও মুম্বইয়ে সংস্থার অফিস কিংগ্ফিশার হাউস নিলামে তুলেছিল ঋণদাতা ব্যাঙ্কগুলি। সে বারও সাড়া দেননি কেউই।
মার্চেই কিংগ্ফিশারের ন’টি ট্রেডমার্ক বাজেয়াপ্ত করেছিল কনসোর্টিয়াম। ২০১০-এ ঋণ নেওয়ার সময়ে এগুলিই গ্যারান্টি হিসেবে স্টেট ব্যাঙ্কের কাছে দাখিল করে সংস্থা। তখন সংস্থা জানিয়েছিল, তারা ঋণ ফেরত দিতে না-পারলে এগুলি বিক্রি করা যাবে। যার মধ্যে ছিল ‘কিংগ্ফিশার’ লোগো, ‘ফ্লাই দ্য গুড টাইমস’-এর মতো ট্যাগলাইন। ‘ফ্লাইং মডেলস’, ‘ফানলাইনার’, ‘ফ্লাই কিংগ্ফিশার’, ‘ফ্লাইং বার্ড ডিভাইস’ ইত্যাদি ট্রেডমার্ক। ঋণ পুনর্গঠন সংক্রান্ত আইনের আওতায় ঋণদাতাদের তরফে এ দিন সব ক’টিই নিলামে তোলে এসবিআই-ক্যাপ ট্রাস্টি কোম্পানি। কিন্তু কোনওটির জন্যই ক্রেতা পাওয়া যায়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এর কারণ মূলত দু’টি—
প্রথমত, নিলামে ন্যূনতম দর অনেক বেশি রাখা হয়েছিল। বিমান পরিষেবা সংস্থাটির সেরা সময়ে শুধুমাত্র কিংগ্ফিশার ব্র্যান্ডেরই মূল্য ৪১১১ কোটি টাকা ছিল বলে জানিয়েছিল আন্তর্জাতিক উপদেষ্ট সংস্থা। কিন্তু এখন তা-ই ৬ কোটি টাকাও হবে না বলে মনে করছে তারা। অথচ এই অবস্থায় নিলামের ন্যূনতম দর রাখা হয়েছিল ৩৬৬.৭০ কোটি। সে ক্ষেত্রে কেন কেউ স্বেচ্ছায় এগুলি কিনতে চাইবে, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে সংশ্লিষ্ট মহল।
দ্বিতীয়ত, নিলামের কথা ঘোষণা হওয়ার পরই কিংগ্ফিশারের মূল সংস্থা মাল্যের ইউনাইটেড ব্রুয়ারিজ গোষ্ঠী হুমকি দিয়েছিল, নিলামে ওঠা তাদের এই লোগো একমাত্র বিমান পরিষেবা সংস্থা তৈরির ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যাবে। অন্য কোনও ক্ষেত্রে যদি সেই নাম ব্যবহার হয়, তা হলে আদালতের দ্বারস্থ হবে তারা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অবস্থায় নিলামে আগ্রহ দেখাতে পারত বিভিন্ন বিমান পরিষেবা সংস্থা। কিন্তু বন্ধ হয়ে থাকা সংস্থার লোগো ও ট্রেডমার্ক কিনে তা ঢেলে সাজার চেয়ে, নতুন করে সংস্থা তৈরি করা অনেক সহজ বলে তারা মনে করছে বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞদের। সেই কারণে নিলামে দর হাঁকেননি কেউ। যদিও এই সব ট্রেডমার্ক নিলামের প্রভাব মাল্যের কিংগ্ফিশার বিয়ার ব্র্যান্ডের উপর পড়বে না বলেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, বিমান সংস্থার কিংগ্ফিশার লোগোটিকে আলাদা নথিভুক্ত করা হয়েছিল। এর সঙ্গে বিয়ার ব্র্যান্ডের কোনও সম্পর্ক নেই।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত মাসেই ব্যাঙ্কের তরফে নিলামে তোলা হয়েছিল মুম্বইয়ের আন্ধেরিতে অবস্থিত কিংফিশার হাউস। ১৭ হাজার বর্গফুটের এই বাড়ির ন্যূনতম দাম ঠিক হয়েছিল ১৫০ কোটি টাকা। কিন্তু সে বারও নিলামে দর হাঁকেননি কোনও ক্রেতা। তখনও চড়া দামের জন্যই এ রকম হয়েছিল বলে মনে করা হয়। যে কারণে নতুন করে শর্ত বেঁধে ফের নিলামে তোলা হবে বলে সে যাত্রায় ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়। অথচ এ বারও একই ভাবে চড়া দামের জেরেই ব্যর্থ হল দ্বিতীয় নিলাম।