চাকা ঘুরছে, তবে উল্টো দিকে।
লোকসানের বোঝায় নুইয়ে পড়া অনলাইন ফ্যাশন দুনিয়া চিরাচরিত ইট-কাঠ-পাথরের দোকান খোলার দিকে ঝুঁকছে। ব্যবসা বাঁচাতে এ বার নিজস্ব বা অন্য গোষ্ঠীর বিপণিতে জিনিস বিক্রি করবে মিন্ত্রা, জিভামে, ইয়েপমি ও ফ্যাব অ্যালির মতো ফ্যাশন সংস্থা। লক্ষ্য, ঢালাও ছাড় ও বিপণনের খরচ বাঁচিয়ে লাভের মুখ দেখা।
ক্রেতা টানতে বিশেষ সময় নেয়নি অনলাইন ফ্যাশন সংস্থাগুলি। বিক্রি বেড়েছে লাফিয়ে লাফিয়ে। তবে সঙ্গে বেড়েছে লোকসানও। কারণ দেশের ই-কমার্স দুনিয়ায় ছাড়ের মোড়কে লাভের গুড় ক্রেতারাই খেয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ শিল্পমহলের। বিশেষজ্ঞদের দাবি, ক্রেতা প্রতি ২৫০ থেকে ৪০০ টাকা খরচ করে ছোট-বড় অনলাইন সংস্থা। এর সিংহভাগই ছাড় বাবদ।
প্রথমে ইট-কাঠ পাথরের দোকানের বিক্রি নিজেদের দিকে টানতে শুরু হয়েছিল অনলাইন বিপণনে ছাড়ের ধারাবাহিকতা। ক্রমশ নেট দুনিয়ায় ক্রেতা টানার প্রাথমিক শর্তই হয়ে দাঁড়িয়েছে ছাড়ের পরিমাণ। ক্রেতা টানার এই চিরকালীন কৌশল কাজে এসেছে ঠিকই। অনলাইন বাজারের মূল আকর্ষণ এখনও যে ছাড়ের রমরমা, তা বণিকসভা অ্যাসোচ্যামের সমীক্ষাতেও উঠে এসেছে। ৭০% ক্রেতা ছাড়ের কারণেই এই বাজারের দিকে ঝুঁকেছেন। কিন্তু একই সঙ্গে পুঁজিতে টান পড়েছে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। নতুন পুঁজি টানতে পারেনি যারা, তারা লোকসানের বোঝায় নুয়ে পড়েছে।
নেট দুনিয়াও এই কঠিন বাস্তব মেনে ছাড় দেওয়ার প্রতিযোগিতায় রাশ টানতে চাইছে। ঘুরে দাঁড়াতে এ বার অনলাইন ফ্যাশন দুনিয়ার বাজি তাই সাধারণ বিপণি। যেমন জিভামে। ২০১৪ থেকে ২০১৫ সালে ব্যবসা ২৩ কোটি থেকে বেড়ে ৪৫ কোটি টাকা হয়েছে। কিন্তু লোকসানও ১২ কোটি থেকে বেড়ে ছুঁয়েছে ৩০ কোটি। লাভের মুখ দেখতে চলতি আর্থিক বছর শেষে ৪০-৫০টি বিপণি খোলার পরিকল্পনা করছে সংস্থা।
এই তালিকা ক্রমশ লম্বা হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞদের দাবি। পরামর্শদাতা সংস্থা কেপিএমজি-র শ্রীধর প্রসাদের দাবি, অনেক অনলাইন সংস্থাই চিরাচরিত দোকান খোলার পরিকল্পনা করছে। লক্ষ্য সেই লোকসান এড়ানো ও বাজার বড় করা। বিশেষ করে ছোট শহরের ব্যবসা টানতে দোকানের সংখ্যা বাড়াতে চাইছে তারা। উদাহরণ হিসেবে উঠে এসেছে ইয়েপমি। সংস্থার কর্তা বিবেক গওর জানান, মধ্যবিত্ত ক্রেতা ধরতে ছোট শহরে দোকান খোলা লাভজনক। কারণ এ সব বাজারে ‘ব্র্যান্ড’-এর উপস্থিতি কম। কিন্তু চাহিদা রয়েছে।
অন্য দিকে অনলাইন কেনাকাটার সিংহভাগ এখনও বড় শহরগুলিরই দখলে। অর্ডার প্রতি গড় খরচের পরিমাণের বিচারেও বড় শহরের তুলনায় পিছিয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের শহর।