বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম ব্যারেলে ২০ ডলারে নেমে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলেও, উত্পাদন ছাঁটাইয়ের পথে তারা হাঁটছে না বলেই ইঙ্গিত দিয়েছে তেল রফতানিকারীদের সংগঠন অর্গানাইজেশন অব পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ বা ওপেক। ডিসেম্বরেই আগামী বছরের উত্পাদন লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করতে বৈঠকে বসছে তারা। কিন্তু সেখানেও তা কমানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
গত বছর নভেম্বরে ভিয়েনায় নিজেদের বৈঠকে ২০১৫ সালে তেলের উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ওপেক। যা বজায় থাকে গত জুনের বৈঠকেও। কিন্তু এর পর থেকেই ওপেকের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা শোনা গিয়েছে বিভিন্ন দেশের তরফে। বিশেষ করে দাম কমিয়ে বাজার ধরে রাখার সিদ্ধান্ত সৌদি আরবের অর্থনীতির ক্ষেত্রে বুমেরাং হতে পারে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। যাতে গলা মিলিয়েছে বিভিন্ন ওপেক দেশও। সম্প্রতি গোল্ডমান স্যাক্স ও জানিয়েছে, শোধিত তেলের দাম ২০ ডলারের নীচেও নেমে যেতে পারে। চলতি শতাব্দীর শুরুর দিকে শেষ বার যে দর দেখেছিল দুনিয়া। বিশ্ব জুড়েই প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি তেল উৎপাদন, ডলারের দাম বাড়া এবং চিনের আর্থিক বৃদ্ধির হার শ্লথ হওয়াই এই দর কমার কারণ হতে পারে বলে মনে করছে তারা।
এমনকী একই কথা জানিয়েছে ওপেকেরই সদস্য দেশ ভেনেজুয়েলাও। তাদের দাবি, ইরানের উপর থেকে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে উৎপাদন বাড়বে। ফলে দাম আরও কমার আশঙ্কা রয়েছে। যে কারণে ‘দামের যুদ্ধে’ না গিয়ে বাজারকে স্থিতিশীল করাই ওপেকের লক্ষ্য হওয়া উচিত বলে মনে করছে তারা। একমাত্র রাশিয়ার মতো ওপেকের বাইরের তেল উৎপাদনকারী দেশগুলি নিজেদের উৎপাদন কমালে তবেই এর কিছু সুরাহা হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। কিন্তু তা কতটা কার্যকর হবে, সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে বিশেষজ্ঞদের একাংশের মধ্যেই।
প্রসঙ্গত, আমেরিকার আমদানি কমানোর সিদ্ধান্ত গত বছরের বৈঠকে উৎপাদন বাড়ানোর অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। সে বার গত ৩০ বছরে প্রথম নাইজিরিয়া থেকে আমদানি বন্ধ করে মার্কিন মুলুক। আমেরিকায় পাহাড়ের খাঁজে আটকে থাকা তেল বা ‘শেল অয়েল’ উত্পাদন ২০০৮ সাল থেকে বাড়ছে দৈনিক ৪০ লক্ষ ব্যারেল। সেই কারণে কমে অর্ধেক হয়েছে ওপেক রাষ্ট্রগুলি থেকে তাদের আমদানি। এই অবস্থায় বিশ্বের প্রধান তেল রফতানিকারী দেশ সৌদি আরব আমেরিকাকে কম দামে তেল বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়। দর কমিয়ে নিজেদের বাজার দখল ধরে রাখাই ছিল যার লক্ষ্য। এই সবের জেরে প্রতি ব্যারেল অশোধিত তেলের দর নেমে আসে ৬৫ ডলারে। এর পর গত জুনেও একই ভাবে উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বজায় রাখে ওপেকের দেশগুলি। যার প্রভাবে তেলের দাম আরও নেমে ৪৫ ডলারে দাঁড়ায়।
এ দিকে, যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরিয়ায় ফ্রান্স, আমেরিকা এবং রাশিয়া বিমান হামলা শুরু করেছে। সব মিলিয়ে সে দেশের গৃহযুদ্ধ ইতিমধ্যেই বিশ্ব রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছে। এর প্রভাবেই মঙ্গলবার তেলের দর সামান্য বেড়েছে বলে ধারণা তাঁদের। তবে স্বল্প মেয়াদে তেলের দর বাড়লেও, দীর্ঘ মেয়াদে তা নীচের দিকেই থাকবে বলে মনে করছেন তাঁরা। সব মিলিয়ে এখন তাই ইরানের উপর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা ওঠা, ওপেকের সিদ্ধান্তের দিকেই তাকিয়ে সবাই।