KYC

ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার ফর্মে এ কেমন প্রশ্ন!

স্টেট ব্যাঙ্কের কেওয়াইসি ফর্ম নেওয়ার পরে দেখা যাচ্ছে, তাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ‘পলিটিক্যালি এক্সপোজ়ড’ বা ‘রিলেটেড টু পলিটিক্যালি এক্সপোজ়ড’ কি না জানতে চেয়ে একটি অংশ রয়েছে।

Advertisement

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:২২
Share:

প্রতীকী ছবি।

এখন কেওয়াইসি ছাড়া কোনও ব্যাঙ্কেই অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন না গ্রাহক। নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছর সেই কেওয়াইসি ব্যাঙ্ক যাচাইও করে নেয়। কিন্তু সম্প্রতি গ্রাহকদের একাংশ অভিযোগ তুলেছেন, অ্যাকাউন্ট খুলতে স্টেট ব্যাঙ্কের কেওয়াইসি ফর্ম নেওয়ার পরে দেখা যাচ্ছে, তাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ‘পলিটিক্যালি এক্সপোজ়ড’ বা ‘রিলেটেড টু পলিটিক্যালি এক্সপোজ়ড’ কি না জানতে চেয়ে একটি অংশ রয়েছে। চাইলে তিনি ‘কোনওটাই না’ (নান)-ও বলতে পারেন। তবে ওই গ্রাহকদের আশঙ্কা, ‘পলিটিক্যালি এক্সপোজ়ড’ বলতে নিশ্চয়ই কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত কি না, তা জানতে চাওয়া হচ্ছে। তাঁদের প্রশ্ন এনপিআর, সিএএ এবং এনআরসির আবহে এই অংশটি কি নতুন যোগ করা হয়েছে?

Advertisement

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সূত্রের দাবি, ‘পলিটিক্যালি এক্সপোজ়ড’ সংক্রান্ত অংশটি নতুন কিছু নয়। ২০০৮ সালেই এই নিয়ম চালু করেছে আরবিআই। সব ব্যাঙ্কের জন্য। অ্যাকাউন্ট খোলা বা ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ফর্মের ওই অংশে জানাতে হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা তাঁর ঘনিষ্ঠ কোনও আত্মীয় জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসনিক কর্তা (যেমন, রাজ্যপাল, সাংসদ, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্তা, বিচার বিভাগীয় উচ্চপদস্থ কর্তা, সেনা অফিসার, পঞ্চায়েত বা পুরসভার প্রধান) কিনা। ওই সূত্রের বক্তব্য, শুধু ব্যাঙ্ক নয়, মিউচুয়াল ফান্ড ও বিমা ক্ষেত্রেও এমন বিধি পুরোদস্তুর চালু।

তবে গ্রাহকদের একাংশের পাল্টা প্রশ্ন, এই ব্যাখ্যা ব্যাঙ্ক নিজেই দিচ্ছে না কেন? বিশেষত বিষয়টি নিয়ে যেখানে ইতিমধ্যেই তোলপাড় শুরু হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়! তাঁদের মতে, গ্রাহকদের সকলের পক্ষে ফর্মের এত খুঁটিনাটি বোঝা বা জানা সম্ভব নয়। অনেকেই ইংরেজি জানেন না। এমনকি বহু গ্রাহক সাক্ষরও নন। ফলে নির্দিষ্ট কোনও শব্দবন্ধ নিয়ে যদি আশঙ্কা বা আতঙ্ক ছড়ায়, তবে তা দূর করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কেরই। না-হলে গ্রাহকেরা বুঝবেন কী করে! কারণ, তাঁদের মতে স্টেট ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খোলার এই কেওয়াইসি ফর্ম (সিকেওয়াইসি) নতুন। আর ওই ফর্মে এমন প্রশ্ন তাঁরা আগে কখনও দেখেননি। ফলে ‘পলিটিক্যালি এক্সপোজ়ড’ অংশের ব্যাখ্যা তাঁদের নিজেদের মতো করেই বুঝে নিতে হচ্ছে। যে-কারণে আতঙ্ক দানা বাঁধছে অনেকের মনে।

Advertisement

আরও পড়ুন: রাষ্ট্রপুঞ্জে জয় পেয়ে তোপ পাক-চিনকে

স্টেট ব্যাঙ্কের এক কর্তা বলছেন, ‘‘সিকেওয়াইসি ফর্মে গ্রাহক তথ্য যাচাইয়ের নিয়ম নতুন নয়। প্রায় বছর দুয়েক আগেই চালু হয়েছে।’’ অর্থাৎ প্রায় দু’বছর আগে চালু হলেও তা নিয়ে এত দিন গ্রাহকদের মনে তেমন ভাবে কোনও প্রশ্ন জাগেনি। সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের অবশ্য মত, বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে গ্রাহকের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। বিশেষত ব্যাঙ্কের তরফে যেহেতু কোনও ব্যাখ্যাই তেমন ভাবে পাওয়া যাচ্ছে না বলে তাঁদের অভিযোগ।

আরও পড়ুন: ৭০ পূর্তির উৎসবে দিল্লি ও তেহরান

স্টেট ব্যাঙ্কের সিকেওয়াইসি ফর্মের তথ্য সামলানোর কাজ করে সেন্ট্রাল রেজিস্ট্রি অব সিকিওরিটাইজ়েশন অ্যাসেট রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড সিকিওরিটি ইন্টারেস্ট অব ইন্ডিয়া (সিইআরএসএআই)। যা একটি সরকারি সংস্থা। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন, আসল কথা হল বর্তমান সরকারের মেরুকরণের রাজনীতি সার্বিক ভাবে আতঙ্কিত করে তুলেছে মানুষকে। অনেকের মনেই দানা বাঁধতে শুরু করেছে অবিশ্বাস। তাই স্টেট ব্যাঙ্কের মতো এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাঙ্ক ওই ধরনের তথ্য জানতে চাওয়ায় অনেকের মনেই উঁকি দিচ্ছে প্রশ্ন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন