মজুত কয়লা অত্যধিক, বিপাকে বিদ্যুৎ কেন্দ্র

এ বছর গ্রীষ্মে রেকর্ড পরিমাণ কয়লা মজুত করা হয়েছিল রাজ্যের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে। ফলে গরমে প্রবল চাহিদার সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে জ্বালানির কোনও সমস্যা হয়নি পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের।

Advertisement

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৬ ০৪:০৭
Share:

এ বছর গ্রীষ্মে রেকর্ড পরিমাণ কয়লা মজুত করা হয়েছিল রাজ্যের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে। ফলে গরমে প্রবল চাহিদার সময়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে জ্বালানির কোনও সমস্যা হয়নি পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের। কিন্তু মজুত করা সেই কয়লা মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্যুৎ-কর্তাদের। কারণ টন-টন কয়লা পোড়ানোর পরেও বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে আর কয়লা রাখার জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে কোল ইন্ডিয়ার কাছ থেকে আপাতত কয়লা কেনা কমিয়ে দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম। ঠিক হয়েছে, মজুত কয়লা আরও খানিকটা খরচের পরেই কয়লা কেনা বাড়ানো হবে।

Advertisement

সমস্যা কোথায়?

নিগম সূত্রে খবর, অতিরিক্ত কয়লা মজুত হয়ে যাওয়ায় রেকে করে কয়লা এলে তা নামানোর জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না। রেকের কয়লা সরাসরি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বয়লারে পাঠাতে হচ্ছিল। ফলে রেলের রেকগুলি দাঁড় করিয়ে রাখতে হচ্ছিল। আর তার জেরে ক্ষতিপূরণ গুনতে হচ্ছিল নিগমকে। এ ছাড়াও মজুত কয়লায় আগুন লেগে যাওয়ার ভয় থেকে শুরু করে অন্যান্য সমস্যা তো আছেই। সেই কারণেই এখন যতটা সম্ভব কম কয়লা কেনা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

এ বছর গরমকালে নিগমের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে অতিরিক্ত ২৫% কয়লা মজুত করা হয়েছিল। এপ্রিল মাসে পাঁচটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র মিলিয়ে মোট কয়লা মজুত হয়েছিল ১২ লক্ষ টনের মতো। বিদ্যুৎ কর্তাদের মতে যা প্রায় রেকর্ড। মজুত করা সেই কয়লাই এখন পুড়িয়ে সাড়ে ৮ লক্ষ টনে নিয়ে আসা হয়েছে। আপাতত এই পরিমাণ কয়লাই মজুত রাখা হবে বলে ঠিক হয়েছে। ভাঁড়ার বাড়ানো হবে না।

এক বিদ্যুৎ-কর্তা বলেন, ‘‘এমনিতেই কয়লা রাখার জায়গা নেই। তার উপর সামনে বর্ষা এসে যাচ্ছে। ফলে খোলা আকাশের নীচে বেশি কয়লা ফেলে রাখলে বৃষ্টিতে ভিজবে। কয়লার মানও নষ্ট হবে। তা-ই আপাতত প্রতিদিন গড়ে ৮-১০ রেক করে কয়লা কেনা হচ্ছে। সাধারণ নিয়মে এর থেকে অনেক বেশি রেক কয়লা কেনা হয়।’’

কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের অধীন সংস্থা সেন্ট্রাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটির (সিইএ) হিসেব মতো এ বছর মে মাসে রাজ্যে বিদ্যুতের সর্বাধিক চাহিদা (সব ক’টি লাইসেন্স এরিয়া মিলিয়ে) উঠেছিল ৭,৭১৯ মেগাওয়াটের মতো। সেই চাহিদার পুরোটাই মেটানো গিয়েছে। এক মেগাওয়াটও ঘাটতি হয়নি। এ ক্ষেত্রে নিগমের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি তাদের ক্ষমতার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উৎপাদন করার পাশাপাশি পর্যাপ্ত জ্বালানি থাকায় বিদ্যুৎ-কর্তাদের সমস্যায় পড়তে হয়নি। এখনও যে-পরিমাণ কয়লা মজুত রয়েছে, তাতে সিইএ-র হিসেব মতো রাজ্যে এমন একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নেই, যেখানে কয়লার সমস্যা রয়েছে।

এ রাজ্যের বিদ্যুৎ-কর্তারা জানাচ্ছেন, সাধারণত নিগমের বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিতে ৭ লক্ষ টনের মতো কয়লা মজুত থাকলেই তা যথেষ্ট বলে ধরা হয়। সেখানে আরও দেড় লক্ষ টন বেশি কয়লা মজুত রয়েছে। তা-ই নিগম কর্তৃপক্ষের কয়লা কম কেনার সিদ্ধান্ত সঠিক বলেই তাঁদের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন