বছর শেষ হতে মাত্র তিন দিন বাকি। ২০২৫ সালে কী পেলাম আর কী হারালাম, তার হিসাবনিকাশ শুরু হয়েছে। তথ্য সাজলে দেখা যাবে, অনেক বিড়ম্বনার মধ্যেও প্রাপ্তি মোটেই কম নয়। সেই লাভ-ক্ষতির হিসাবে এক বার নজর রাখা যাক—
- প্রাপ্তি শুরু ফেব্রুয়ারির প্রথম দিনে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বাজেটে নতুন কর কাঠামোয় বছরে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত হবে বলে জানান। এ ছাড়া কর কমানোর প্রস্তাব ছিল ২৪ লক্ষ পর্যন্ত আয়ে। এর ফলে বহু মানুষ করের আওতা থেকে বার হয়েছেন। যাঁরা রয়েছেন, তাঁদেরও বড় অংশ বাঁচাচ্ছেন বেশ কিছু টাকা।
- অর্থনীতি ভাল জায়গায় থাকায় বছরভর খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার নেমেছে। অক্টোবরে ছিল ০.২৫%, নভেম্বরে ০.৭১%। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের লক্ষ্যের চেয়ে অনেকটা নীচে। মূল্যবৃদ্ধি মাথা নামানোয় ফেব্রুয়ারি থেকে কয়েক দফায় রেপো রেট (যে সুদে ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ দেয় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক) মোট ১২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। তা হয়েছে ৫.২৫%। ফলে সব ধরনের ঋণ সস্তা হয়েছে। কমেছে বাড়ি-গাড়ি ঋণের মাসিক কিস্তি। স্বস্তি পেয়েছেন মধ্যবিত্ত। তবে এর বিরূপ প্রভাবও রয়েছে। সুদ কমেছে ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য আমানতেও। ফলে সুদ নির্ভর মানুষদের ঘুম উড়েছে। কেন্দ্রের স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলির সুদে এখনও হাত পড়েনি। জানুয়ারি থেকে তা কোন পথে এগোয়, জানা যাবে দু’দিনেই।
- আর একটি বড় প্রাপ্তি জিএসটি সংস্কার। এতে বহু পণ্যের কর কমেছে।ওষুধ ও বিমার প্রিমিয়াম সস্তা হয়েছে। সুরাহা হয়েছে মধ্যবিত্তের। আয়কর ও জিএসটি বাবদ সাশ্রয় মিলিয়ে থাকছে বেশ কিছুটা উদ্বৃত্ত অর্থ। এর একাংশ পণ্যের চাহিদা বাড়িয়েছে। আর এক অংশ লগ্নি হচ্ছে বিভিন্ন প্রকল্পে।
- বিশ্ব বাণিজ্যের পক্ষেও বছরটা ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতি বিশ্বকে কার্যত নাড়িয়ে দিয়েছে। প্রথমে চিন-সহ বিভিন্ন দেশের পণ্যে চড়া শুল্ক চাপান তিনি। পরে শর্তসাপেক্ষে কিছু দেশের পণ্যে শুল্ক কমান। কিন্তু ভারত রাশিয়ার তেল কেনা থেকে বিরত না হওয়ায় এ দেশের পণ্যে ২৫ শতাংশের পরে আরও ২৫% (মোট ৫০%) শুল্ক চেপেছে। যা দিল্লির কাছে উদ্বেগের কারণ। এতে আমেরিকায় রফতানিতে ধাক্কার লক্ষণ ইতিমধ্যেই দেখা যাচ্ছে। লোকসান পুষিয়ে নিতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির পথে এগোচ্ছে কেন্দ্র। সম্প্রতি নিউ জ়িল্যান্ডের সঙ্গে অবাধ বাণিজ্য চুক্তির কথা শেষ হয়েছে। যা কার্যকর হলে ভারত সে দেশে বহু পণ্য বিনা শুল্কে রফতানি করতে পারবে। তেমন নিউ জ়িল্যান্ড থেকেও বিনা শুল্কে আমদানিকৃত বেশ কিছু পণ্য পাওয়া যাবে ভারতে। তার দামও হবে এখনকার তুলনায় কম।
- নজির গড়ে ২০২৫ সালে প্রথম শেয়ার ছেড়ে ১.৭৬ লক্ষ কোটি টাকা তুলেছে ১০৩টি সংস্থা। আটটি বড় ইসু তুলেছে ৭৮,৩০০ কোটি (৪৪.৫%)। সামগ্রিক ভাবে বাজার অবশ্য সে ভাবে মাথা তোলেনি। এ বছর এখনও পর্যন্ত বেড়েছে ৬৯০২ পয়েন্ট (৮.৮৩%)।
- সেই তুলনায় সোনার দাম বেড়েছেপ্রায় ৭৫%। রুপো ১৫০%। সেরা রিটার্ন দিয়েছে মাল্টি অ্যাসেট ফান্ড ও গোল্ড অ্যান্ড সিলভার ইটিএফ।
(মতামত ব্যক্তিগত)
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)