পড়ল বন্ড, টাকা, ব্যাঙ্ক শেয়ারের দাম

বাড়তি নগদ ঠেকাতেই ব্যবস্থা আরবিআইয়ের, দাবি কেন্দ্রের

অর্থনীতিতে ভবিষ্যতে নগদের অত্যধিক জোগান ঠেকাতেই ব্যাঙ্কে জমা পড়া বাতিল নোটের একাংশ নিজের ঘরে জমা নিচ্ছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৬ ০২:৫৪
Share:

অর্থনীতিতে ভবিষ্যতে নগদের অত্যধিক জোগান ঠেকাতেই ব্যাঙ্কে জমা পড়া বাতিল নোটের একাংশ নিজের ঘরে জমা নিচ্ছে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।

Advertisement

১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ১১ নভেম্বরের মধ্যে ব্যাঙ্কগুলির হাতে আসা বাড়তি তহবিলের ১০০% নগদ জমার অনুপাত বা সিআরআর খাতে জমা দিতে বলেছে আরবিআই। তার কারণ হিসেবে সোমবার এই যুক্তিই দাখিল করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থনীতি বিষয়ক সচিব শক্তিকান্ত দাস।

তবে নোট-কান্ডের জেরে ঘরে আসা অতিরিক্ত টাকার কিছুটা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ে নেওয়ার এই সিদ্ধান্ত ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকেই। তবে অনেকের মতে, সিআরআর হিসাবে নেওয়া হলেও ওই টাকার উপর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ দেওয়ার কথা ভাবতে পারে। প্রসঙ্গত, আমানত হিসাবে সংগৃহীত টাকার ৪% সিআরআর খাতে জমা রাখতে হয় ব্যাঙ্কগুলিকে। এই টাকার উপর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে কোনও সুদ পায় না তারা।

Advertisement

বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরো পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেই এই টাকা বাজারে কতটা ছাড়া হবে, সে ব্যাপারে শীর্ষ ব্যাঙ্ক সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু এতে ব্যাঙ্কের আর্থিক বোঝা বাড়া়র সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা। যেমন, ইউ বি আইয়ের প্রাক্তন সিএমডি ভাস্কর সেন বলেন, ‘‘সিআরআর হিসাবে ওই টাকার উপর রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ না-দিলেও ব্যাঙ্ককে কিন্তু আমানতে সুদ মেটাতে হবে। এতেই তাদের আর্থিক বোঝা বাড়বে।’’ ভাস্করবাবুর মতে, সিআরআর হিসাবে আমানতের ৪ শতাংশের উপর সুদ না-পেলেও ব্যাঙ্কগুলি বাকি অর্থের আয় থেকে আমানতকারীদের সুদ মেটাতে পারত। কিন্তু এখন এতটা টাকা বিনা সুদে রাখতে হলে সমস্যায় পড়বে ব্যাঙ্ক। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত টাকা আসায় সুদ আরও কমার যে-সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই সিদ্ধান্তে তা-ও হাতছাড়া হতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁর।

তবে ভাস্করবাবুর সঙ্গে একমত হলেও ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞ এবং ইউকো ব্যাঙ্কের প্রাক্তন এগ্‌জিকিউটিভ ডিরেক্টর বি কে দত্ত বলেন, ‘‘অতিরিক্ত যে-টাকা আরবিআই ব্যাঙ্কগুলির কাছ থেকে নিচ্ছে, তার উপর সুদ বা অন্য কোনও খাতে টাকা ব্যাঙ্কের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।’’

যে-সমস্ত কারণে বাড়তি নগদ শুষে নিতে আরবিআই এই পদক্ষেপ করেছে, শক্তিকান্তবাবুর মতে তার মধ্যে রয়েছে:

জমা নোটের বেশিটা ঋণ খাতে গ্রাহকের হাতে এলে টাকার জোগান বাড়ত। ফলে চাপ আসত তার দামে, ইতিমধ্যেই যা তলানি ছুঁয়েছে।

ব্যাঙ্কগুলি জমা পড়া তহবিলের কিছু অংশ ইতিমধ্যেই সরকারি বন্ড বা ঋণপত্রে লগ্নি করেছে, যার জেরে বাড়ছিল বন্ডের চাহিদা ও দাম। কমছিল তার ইল্ড বা আয়। পাশাপাশি, সরকারি বন্ডের জোগানেও টান পড়ার আশঙ্কা।

সরকারি ঋণপত্র বা বন্ডের দাম বাড়ায় নিশ্চিত আয়ের ওই ধরনের ১০ বছর মেয়াদি বন্ডে আয় কমেছে ৫০ বেসিস পয়েন্টেরও বেশি। নেমেছে সাড়ে সাত বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে নীচে। ফলে বন্ডের চাহিদায় রাশ টানাও এই পদক্ষেপের লক্ষ্য।

তবে এটি অস্থায়ী বন্দোবস্ত বলেও জানিয়েছে আরবিআই। পুরো বিষয়টি ফিরে দেখা হবে ৯ ডিসেম্বর।

আরবিআইয়ের সিদ্ধান্তের প্রভাব সোমবারই বাজারে পড়েছে বলে সূত্রের খবর। এ দিন উল্লেখযোগ্য ভাবে পড়েছে ব্যাঙ্কের শেয়ার দর। বাজারের ধারণা ছিল, নোট-কান্ডের জেরে ব্যাঙ্কগুলির ঘরে যে-অতিরিক্ত টাকা এসেছে, তা ব্যাঙ্কের আর্থিক স্বাস্থ্য আরও মজবুত করবে। কিন্তু আপাতত সিআরআর বাড়ানোর নির্দেশে সোমবার পড়ে যায় বিভিন্ন ব্যাঙ্কের শেয়ার দর। বন্ডের বাজারেও এ দিন ছাপ পড়েছে এই সিদ্ধান্তের। বন্ডের চাহিদা কমায় পড়েছে তার দাম, যা অবশ্য সিআরআর বাড়ানোর পিছনে কেন্দ্রের অন্যতম লক্ষ্য।

এ দিকে, এ দিন ফের পড়েছে টাকার দাম। সোমবার সপ্তাহের শুরুতেই ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম ৩০ পয়সা পড়ে যায়। যার ফলে এ দিন বিদেশি মুদ্রার বাজার বন্ধের সময়ে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৬৮.৭৬ টাকা। চলতি বছরে এর আগে টাকার দাম এতটা নীচে নামেনি বলে বাজার সূত্রের খবর। বিদেশি মুদ্রার চূড়ান্ত অনিশ্চিত বাজারে ডলার মজুত করে রাখতে এ দিন আমদানিকারীরা এবং বেশ কিছু শিল্প সংস্থা ডলার কিনতে থাকে। যার জেরেই মার্কিন মুদ্রাটির দাম হু হু করে বেড়ে যায় বলে বিদেশি মুদ্রার বাজার সূত্রের খবর।

সামান্য হলেও উঠেছে শেয়ার বাজার। এ দিন সেনসেক্স আগের দিনের থেকে ৩৩.৮৩ পয়েন্ট উপরে উঠে থিতু হয় ২৬,৩৫০.১৭ অঙ্কে। নিফ্‌টিও ১২.৬০ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৮,১২৬.৯০ অঙ্কে। এ দিন এশিয়ার বিভিন্ন শেয়ার বাজারেও সূচকের মুখ ছিল উপরের দিকে। তবে পড়েছে ইউরোপের বাজার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন