বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদে লাগাম পরাতে এ বার বাড়তি তৎপরতা শুরু করল ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
কোনও একটি শিল্প গোষ্ঠীকে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক সর্বোচ্চ কতটা ঋণ দিতে পারবে, তার সীমা কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। সময় মতো শিল্পঋণ আদায় করতে না-পারায় ক্রমশ বাড়ছে ব্যাঙ্কগুলির অনুৎপাদক সম্পদের বোঝা। তাদের ব্যালান্স শিটেও তা ছাপ ফেলছে। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির এই ঝুঁকি কমাতেই ওই প্রস্তাব এনেছে আরবিআই। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, যে-কোনও ব্যাঙ্ক তার ‘কোর ক্যাপিটাল’-এর সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত একটি শিল্প সংস্থাকে ঋণ বাবদ দেওয়ার অনুমতি পাবে ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে। এত দিন এই ঊর্ধ্বসীমা ছিল ৫৫ শতাংশ। প্রসঙ্গত, কোর ক্যাপিটাল-এর আওতায় থাকে শেয়ার মূলধন ও ঘোষিত সংরক্ষিত মূলধন।
পাশাপাশি আরবিআই শিল্প সংস্থাগুলির ব্যাঙ্কঋণের উপর অত্যধিক নির্ভরতা কমাতে আর একটি প্রস্তাবও দিয়েছে। ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে: যে-কোনও শিল্প সংস্থাকে তার প্রয়োজনীয় মূলধনের একটি ন্যূনতম অংশ জোগাড় করতে হবে বন্ড এবং অন্যান্য ঋণপত্রের বাজার থেকে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ধারণা, কর্পোরেট মহল তার আর্থিক প্রয়োজনের জন্য ব্যাঙ্কঋণের দিকেই তাকিয়ে থাকে বলে অন্য বিকল্পগুলি খতিয়ে দেখে না।
এই দু’টি প্রস্তাব মিলিয়ে একটি প্রস্তাবনাপত্র সম্প্রতি পেশ করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এটির উপর মতামত জানাতে হবে আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে। তার ভিত্তিতেই শীর্ষ ব্যাঙ্ক স্থির করবে, এগুলি কার্যকর হবে কি না।
আরবিআই আগেই জানিয়েছিল, তারা শিল্প সংস্থাকে দেওয়া ব্যাঙ্কঋণের ঊর্ধ্বসীমা ফিরে দেখতে চায়। তার লক্ষ্য আন্তর্জাতিক মাপকাঠির সঙ্গে তাল মিলিয়ে একটি সংস্থাকে দেওয়া ব্যাঙ্কঋণের ঊর্ধ্বসীমা ধাপে ধাপে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের সংস্কার সংক্রান্ত বাসেল কমিটিই এই সুপারিশ করেছিল।
প্রসঙ্গত, ঋণ দিয়ে তার সুদ বা আসল কোনওটাই ফেরত পাওয়া না-গেলে, একটি নির্দিষ্ট সময় পরে তাকে চিহ্নিত করা হয় অনুৎপাদক সম্পদ হিসেবে। গত কয়েক বছরে দেশে শিল্পের হাল খারাপ হওয়ায় ব্যাঙ্কের ধার শোধ করতে পারেনি বহু সংস্থাই। তার উপর অনেকে আবার মনে করেন দেশে দেউলিয়া ঘোষণার আইনি পথ সরল না-হওয়ায়, ব্যাঙ্কগুলির পক্ষে আরও কঠিন হয় ধারের টাকা উদ্ধার করা। ফলে সব মিলিয়ে, গত আর্থিক বছরের শেষ দিকে প্রায় প্রতিটি ব্যাঙ্কেরই অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে।