মিউচুয়াল ফান্ডে রেকর্ড বিনিয়োগ

অর্ধ শতকের পথ পাড়ি তিন বছরেই

এই রকেট গতিতে উৎসাহিত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৌড় তো সবে শুরু। আগামী দিনে ফান্ডে বিনিয়োগ বাড়বে বিদ্যুৎ গতিতে। আর তার জেরে চাঙ্গা থাকবে শেয়ার বাজারও।

Advertisement

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:২৯
Share:

প্রথম দশ লক্ষ কোটি টাকা ছুঁতে সময় লেগেছিল পাঁচ দশকেরও বেশি। ৫১ বছর। সেখানে এ দেশে মিউচুয়াল ফান্ডে পরের ১০ লক্ষ কোটি বিনিয়োগ এসেছে চোখের পলকে। মাত্র তিন বছরে! আর তাতে ভর করেই ফান্ডে লগ্নির অঙ্ক পৌঁছেছে সর্বকালীন রেকর্ডে। গত নভেম্বরেই তা ছিল ২২.৭৯ লক্ষ কোটি টাকা।

Advertisement

এই রকেট গতিতে উৎসাহিত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দৌড় তো সবে শুরু। আগামী দিনে ফান্ডে বিনিয়োগ বাড়বে বিদ্যুৎ গতিতে। আর তার জেরে চাঙ্গা থাকবে শেয়ার বাজারও।

১৯৬৩ সালে ইউটিআই প্রতিষ্ঠার হাত ধরে এ দেশে মিউচুয়াল ফান্ড ব্যবসার শুরু। তখন থেকে ২০১৪ সালের মে পর্যন্ত ৫১ বছরে ফান্ডে মোট লগ্নি ছিল ১০ লক্ষ কোটি টাকা। অর্থাৎ, সমস্ত ফান্ড মিলিয়ে খাটত ১০ লক্ষ কোটির তহবিল (অ্যাসেট আন্ডার ম্যানেজমেন্ট বা এইউএম)। সেখানে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে সেই এইউএম গিয়ে ঠেকে ২০.৪০ লক্ষ কোটিতে। নভেম্বরেই ফের তা বেড়ে হয় ২২.৭৯ লক্ষ কোটি।

Advertisement

বিশেষজ্ঞদের মতে, এর কারণ, ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরে সুদ কমা, মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার তাগিদ, শেয়ার বাজার, ফান্ড সম্পর্কে ‘ভয়’ কিছুটা কমা এবং অনলাইনে লগ্নির সুবিধা। অ্যাসোসিয়েশন অব মিউচুয়াল ফান্ডস অব ইন্ডিয়ার (অ্যামফি) দাবি, ওই ভয় কাটাতে নাগাড়ে প্রচার চালিয়ে গিয়েছে তারা।

বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরাসরি শেয়ারে টাকা ঢেলে মুনাফার মুখ দেখা সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। তার জন্য বাজার, অর্থনীতির হাল-হকিকত ইত্যাদি সম্পর্কে পোক্ত ধারণা জরুরি। সঠিক শেয়ার বাছতে চাই নিয়মিত খোঁজখবর রাখা। সকলের সেই দক্ষতা বা সময় না-থাকাটাই স্বাভাবিক। সেখানেই মুশকিল আসান হয়ে ফান্ড বিপুল বাজার দখল করেছে বলে তাঁদের অভিমত। সেই সঙ্গে রয়েছে পড়তি সুদের জমানায় মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে যোঝার তাগিদও।

শামুক থেকে বুলেট গতি

• দেশে মিউচুয়াল ফান্ডের ব্যবসা শুরু ১৯৬৩ সালে

• ২০১৪ সালের মে পর্যন্ত ৫১ বছরে মোট লগ্নি ১০ লক্ষ কোটি টাকা

• পরের ১০ লক্ষ কোটি আসতে লেগেছে মাত্র তিন বছর

• গত নভেম্বরের শেষে মোট বিনিয়োগ ২২ লক্ষ ৭৯ হাজার কোটি

কেন এমন?

• ব্যাঙ্কে ও ডাকঘরের স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে সুদের হার অনেকখানি কমা

• মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চড়া রিটার্ন পেতে মানুষের উৎসাহ

• লাগাতার প্রচারে শেয়ার বাজার, ফান্ড সম্পর্কে ‘ভয়’ কমেছে। আগের থেকে অনেক বেশি জন বাজারমুখী

• অনলাইনে লগ্নির সুবিধা

সবে শুরু

• বিশেষজ্ঞদের মতে, ফান্ডে টাকা ঢালা সবে গতি পাচ্ছে দেশে। এ বার বাড়বে বিদ্যুৎ গতিতে

• উন্নত দুনিয়ায় ব্যাঙ্কের থেকে বেশি অর্থ জমা পড়ে ফান্ডে। ভারতে এখনও তা ২৫ শতাংশেরও কম। এই ছবিও দ্রুত বদলানোর সম্ভাবনা

অ্যামফির সিইও এন এস বেঙ্কটেশের দাবি, ‘‘বেশ কয়েক বছর ধরে ব্যাঙ্ক সুদের দ্বিগুণের বেশি রিটার্ন মিলছে ফান্ডে। ২০১৬-’১৭ সালেই গড়ে তা ছিল ১৮%-২২%।’’

ব্রোকিং সংস্থা শেয়ারখানের সিইও জয়দীপ অরোরার মতে, ‘‘ফান্ডে লগ্নি আরও বাড়বে। শুধু সুদ কমা নয়, ২০১৮ সালে বাজার আরও চাঙ্গা থাকার সম্ভাবনাও তার কারণ।’’ এ প্রসঙ্গে বেঙ্কটেশ বলেন, ‘‘উন্নত দুনিয়ায় ব্যাঙ্কে যত টাকা জমা পড়ে, তার থেকে ২৫% বেশি পড়ে ফান্ডে। অথচ এ দেশে ব্যাঙ্ক আমানতের (প্রায় ১০৪ লক্ষ কোটি টাকা) পাশে তা (২৩ লক্ষ কোটি) এখনও বামন। ভবিষ্যতে তা দ্রুত বাড়ার সম্ভাবনা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন