জিওর আত্মপ্রকাশে মুকেশ, নীতা এবং আকাশ অম্বানি।
যুদ্ধের দামামা বেজে গিয়েছে। একেবারে কুরু পাণ্ডবদের যুদ্ধ যেন। পার্থক্য শুধু একটাই। ভারতের সুবিশাল টেলিফোন সাম্রাজ্যের বাজার ধরতে সব পক্ষই নিজেদের ‘পাণ্ডব’ বলে দাবি করছে। দাবি করছে সত্যের সঙ্গে রয়েছেন একমাত্র তারাই।
কল একেবারে ফ্রি করে কেবলমাত্র ডেটার জন্য পয়সা নিয়ে বাজারে একেবারে ধামাকাদার এন্ট্রি নিয়েছে রিলায়েন্স জিও। জিওর বাজারে আসার সঙ্গে সঙ্গেই শেয়ার দর পড়তে শুরু করে এয়ারটেল, আইডিয়ার মতো সংস্থার। জিও সিম নেওয়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে অপেক্ষা করতেও দেখা যায় গ্রাহকদের। এ পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল। সমস্যা শুরু হল কিছু দিন পর থেকে। জিও সিম থেকে অন্য সিমে কল করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে শুরু করেন গ্রাহকেরা। জিওর তরফে অভিযোগ করা হয়, ভোডাফোন, এয়ারটেলের মতো সংস্থারা তাদের যথেষ্ট পরিমাণে পয়েন্ট অব ইন্টারকানেকশন (পিওআই) দিচ্ছে না। ফলে সমস্যায় পড়ছেন গ্রাহকেরা। যথেষ্ট পিওআই না দেওয়ার অভিযোগ অবশ্য প্রথম থেকেই খারিজ করে সংস্থাগুলি। বিষয়টি গড়িয়েছে ট্রাই পর্যন্ত। জিওর এক কর্তার দাবি, “অন্য সংস্থাগুলি যে আমাদের যথেষ্ট পিওআই দিচ্ছে না, তার প্রমাণ রয়েছে আমাদের হাতে। ট্রাই খুব শীঘ্রই এই সমস্যার সমাধান করবে বলে আশা করছি আমরা।”
এই সমস্যা সমাধানে ট্রাইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলেও বাজার ধরতে কিন্তু একেবারে কোমর বেঁধে নামছে রিলায়্যান্স। “আমরা এমন কিছু প্রযুক্তি আনতে চলেছি, যা আমাদের মোবাইল সংক্রান্ত এত দিনের ধারণা একেবারে ম্যাজিকের মতো বদলে দেবে”— দাবি করলেন জিওর এক আধিকারিক।
কী সেই নয়া প্রযুক্তি?
মুম্বইয়ে জিওর এক্সপিরিয়েন্স সেন্টারে গিয়ে দেখা গেল সেই ‘ম্যাজিক’। গ্রাহকদের জন্য সেখানে রয়েছে একাধিক বিস্ময়। এখন যে কোনও সংস্থার সিম অ্যাক্টিভেট হতে দিন দু’য়েক সময় লাগে। আগামী দিনে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে সিম ভেরিফিকেশন করতে চলেছে রিলায়্যান্স। সংস্থার দাবি, এই প্রক্রিয়ায় ৫-১০ মিনিটের মধ্যেই অ্যাক্টিভেট হয়ে যাবে সিম। তবে এ ক্ষেত্রে আধার কার্ড থাকাটা বাধ্যতামূলক। এই পদ্ধতিতে ডুপ্লিকেট সিমের সমস্যারও সমাধান করা যাবে বলে দাবি সংস্থার। একটি ফোন থেকে অন্য ফোনে কল কানেক্ট হতে যে সময় লাগে তাকে বলে কল ল্যাটেন্সি। সাধারণ ভাবে এখন কল কানেক্ট হতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে। “আমাদের নতুন প্রযুক্তি এই সময়কে নামিয়ে আনবে কয়েক মিলি সেকেন্ডে। অর্থাত্ এ বার মিসড কল করতে আপনাকে বেগ পেতে হবে”— মুচকি হেসে জানালেন আধিকারিক। জিওর নতুন অ্যাপের সাহায্যে আপনি ভয়েস কলকে মুহূর্তে ভিডিও কলে পরিবর্তন করতে পারবেন। নতুন প্রযুক্তিতে আপনার কথা শোনা যাবে আরও স্পষ্ট ভাবে। এ ছাড়াও গ্রাহকদের একগুচ্ছ সুবিধা দিচ্ছে জিও। ১০টি ভাষায় প্রায় পাঁচ হাজার ম্যাগাজিনের এক বিশাল সম্ভার আনছে জিও। মোবাইলে তা পড়ার পাশাপাশি ইচ্ছা করলে গ্রাহককে তা পড়ে শুনিয়ে দেওয়ারও ব্যাবস্থা থাকছে অ্যাপে। থাকছে বিভিন্ন ভাষার খবরের কাগজ পড়ার সুবিধাও। এ ছাড়াও থাকছে জিও মানি, জিও হেল্থ, জিও এডুকেশনের মতো অ্যাপ। এর জন্য বিভিন্ন ব্যাঙ্ক, রিটেল স্টোর, হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধছে রিলায়্যান্স। মেট্রোর কার্ড বাড়িতে ভুলে গিয়েছেন? জিওর নতুন অ্যাপে আগামী দিনে স্মার্ট গেটে মোবাইল ঠেকালেই কেল্লা ফতে। এমনকী ভবিষ্যতে আপনার গাড়ির সুরক্ষার দায়িত্বও অ্যাপের মাধ্যমে নিতে কাজ করছে জিও।
বাজাররূপী হস্তিনাপুরের দখল নিতে একেবারে অস্ত্র-সহ তৈরি জিও। এ বার অপেক্ষা যুদ্ধের ফলাফলের।
আরও পড়ুন:
জিও বিপ্লব, দেশের মধ্যে যে কোনও নেটওয়ার্কে বিনা পয়সায় কল, ফ্রি রোমিং