ব্যাঙ্কে সুদ নির্ধারণে কাজের অস্ত্র নয় রেপো রেট, দাবি অরুন্ধতীর

বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কে সুদের হার ঠিক করার ক্ষেত্রে রেপো রেট তেমন কাজের অস্ত্র নয়। বরং বেশ ভোঁতা (ব্লান্ট ইন্সট্রুমেন্ট)। বৃহস্পতিবার কলকাতায় বণিকসভা বিএনসিসিআই আয়োজিত সভায় এই দাবি করলেন স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারপার্সন অরুন্ধতী ভট্টাচার্য।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ০২:২৮
Share:

বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কে সুদের হার ঠিক করার ক্ষেত্রে রেপো রেট তেমন কাজের অস্ত্র নয়। বরং বেশ ভোঁতা (ব্লান্ট ইন্সট্রুমেন্ট)। বৃহস্পতিবার কলকাতায় বণিকসভা বিএনসিসিআই আয়োজিত সভায় এই দাবি করলেন স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারপার্সন অরুন্ধতী ভট্টাচার্য।

Advertisement

তাঁর কথায়, ব্যাঙ্কের সুদ নির্ধারণে অন্তত ভারতে অস্ত্র হিসেবে তেমন কার্যকর নয় রেপো রেট। কারণ, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ওই সুদের (রেপো রেট) কমা-বাড়ার উপর ভিত্তি করে সব সময় বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কে সুদের হার নির্ধারণ অসম্ভব। অনেক সময়ই দেখা যায়, শীর্ষ ব্যাঙ্ক রেপো রেট কমালেও, তাতে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির তহবিল সংগ্রহের খরচ সে ভাবে কমেনি। ফলে তখন সুদ কমানো শক্ত হয় ব্যাঙ্কগুলির পক্ষে।

উল্লেখ্য, এর আগে রেপো রেট ছাঁটাই করার পরে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সুদের হার না-কমানোয় বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির দিকে একাধিক বার তোপ দেগেছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নর রঘুরাম রাজন। এমনকী এই মঙ্গলবারই এ বিষয়ে ফের উষ্মা প্রকাশ করেছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো রেট ১২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছে। কিন্তু তার অর্ধেকও সুদ কমায়নি বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি। ফলে এই মুহূর্তে তাদের সামনে সুদ ছাঁটাইয়ের পর্যাপ্ত সুযোগ আছে বলে দাবি করেন তিনি।

Advertisement

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক স্বল্প মেয়াদে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে যে সুদে ঋণ দেয়, তাকেই বলে রেপো রেট। বাজারে সুদের হার নিয়ন্ত্রণের জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হাতে যে সব কৌশল রয়েছে, তার মধ্যে তা অন্যতম। সাধারণত শীর্ষ ব্যাঙ্ক রেপো রেট কমালে, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কেও সুদ কমবে বলে প্রত্যাশা তৈরি হয়। কারণ মনে করা হয় যে, রেপো রেট কমলে ব্যাঙ্কগুলির তহবিল সংগ্রহের খরচ কমবে। ফলে সুদ ছাঁটাই করা সহজ হবে তাদের পক্ষে। আবার রেপো রেট বাড়লে, ঠিক তার উল্টোটা।

কিন্তু অরুন্ধতীদেবীর দাবি, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির পক্ষে রেপো রেটের ভিত্তিতে সুদ ঠিক করা শক্ত। এর যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, তহবিল সংগ্রহের জন্য ব্যাঙ্কগুলিকে মূলত নির্ভর করতে হয় আমানতের উপর। ঋণের উপর নয়। সিংহভাগ তহবিলই আসে আমানত থেকে। তার তুলনায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে তৈরি তহবিলের অঙ্ক অনেক কম। তা ছাড়া, বহু ক্ষেত্রেই ব্যাঙ্কগুলিকে দীর্ঘ মেয়াদে ধার দিতে হয়। সেখানে রেপো রেটে টাকা মেলে স্বল্পকালীন ভিত্তিতে।

তহবিল সংগ্রহের পরিসংখ্যান তুলে ধরে স্টেট ব্যাঙ্কের কর্ণধার বলেন, ব্যাঙ্কে মোট যে আমানত জমা পড়ে, তার ৪০ শতাংশই কারেন্ট ও সেভিংস অ্যাকাউন্টে। বাকি প্রায় ৬০ শতাংশ মেয়াদি আমানতে। কারেন্ট ও সেভিংস অ্যাকাউন্টে যে টাকা জমা হয়, তার সঙ্গে রেপো রেটের সম্পর্কই নেই। তাই তার প্রভাব পড়ে বড়জোর ৬০ শতাংশের উপরে। তা ছাড়া, অন্য অনেক দেশে ব্যাঙ্কের তহবিলের ৩০-৪০ শতাংশই আসে বাজার থেকে ধার করে। কিন্তু ভারতে তা নয়। সেখানে আমানতই তহবিলের মূল উৎস। আর এই সমস্ত কারণেই আমানত সংগ্রহের খরচ এবং ঋণে সুদ থেকে আয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখা জরুরি বলে তাঁর দাবি।

তাঁর আরও দাবি, ‘‘অনেক সময় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো রেট বাড়ালেও, আমরা সুদ বাড়াইনি।’’ উদাহরণ হিসেবে ২০১৩ সালের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘‘ওই বছর শীর্ষ ব্যাঙ্ক ৩০০ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট বাড়ালেও ব্যাঙ্কগুলি সেই হারে সুদের হার বাড়ায়নি।’’ ব্যাঙ্কের ‘বেস রেট’ বা ন্যূনতম সুদের হার নির্ধারণে কী নীতি মেনে চলা হবে, সে বিষয়েও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের খসড়া প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয় বলে এ দিন সভার শেষে মন্তব্য করেন অরুন্ধতীদেবী। জানান, এ বিষয়ে স্টেট ব্যাঙ্ক-সহ বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ইতিমধ্যেই নিজেদের সুপারিশ জমা দিয়েছে শীর্ষ ব্যাঙ্কের কাছে।

এ ছাড়া, পেশার দুনিয়ায় মহিলাদের উন্নতির জন্য সব রকম সহায়তার উপরেও জোর দেন স্টেট ব্যাঙ্কের প্রথম মহিলা কর্ণধার। তিনি বলেন, ‘‘পুরুষদের সঙ্গে এক সঙ্গে চাকরি জীবনে উন্নতির দৌড় শুরু করেও অনেক সময়ই মহিলাদের মাঝ পথে ভাটা পড়ে।’’ পরামর্শ দেন, প্রতিবন্ধকতার সামনে রণে ভঙ্গ দেওয়ার বদলে এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা চালানোর জন্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন