সৌদি প্রস্তাবে কপালে ভাঁজ কেন্দ্রের

দর বাড়াতে অস্ত্র উৎপাদন ছাঁটাই

ভারতের মতো তেল আমদানিকারী দেশগুলির কপালে ভাঁজ বাড়িয়ে প্রথম খবরটা এল আবু ধাবি থেকে। রবিবার ভারতীয় সময় অনুযায়ী মধ্য রাতে সৌদি আরবের তেলমন্ত্রী খলিদ আল-ফলি ঘোষণা করলেন, বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের চাহিদা ও জোগানে সাযুজ্য রাখতে দিনে ৫ লক্ষ ব্যারেল উৎপাদন ছাঁটবেন তাঁরা। আগামী মাস থেকেই।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

আবু ধাবি শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৫৭
Share:

আলোচনা: বৈঠকে তিন দেশের তেলমন্ত্রী। (বাঁ দিক থেকে) আরব আমিরশাহির সুহেল মহম্মদ ফরাজ আল-মজরুই, সৌদি আরবের খলিদ আল-ফলি ও রাশিয়ার আলেকজান্ডার নোভাক। এএফপি

ভারতের মতো তেল আমদানিকারী দেশগুলির কপালে ভাঁজ বাড়িয়ে প্রথম খবরটা এল আবু ধাবি থেকে। রবিবার ভারতীয় সময় অনুযায়ী মধ্য রাতে সৌদি আরবের তেলমন্ত্রী খলিদ আল-ফলি ঘোষণা করলেন, বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের চাহিদা ও জোগানে সাযুজ্য রাখতে দিনে ৫ লক্ষ ব্যারেল উৎপাদন ছাঁটবেন তাঁরা। আগামী মাস থেকেই। যাতে পড়তে থাকা তেলের বাজার দর ফের বাড়ে। তবে রাত ভোর হতেই ইঙ্গিত স্পষ্ট, ৫ লক্ষ নয়, সরবরাহ কমানো হতে পারে দ্বিগুণ। দিনে প্রায় ১০ লক্ষ ব্যারেল। হয়তো আগামী বছর থেকে। তাতে সহযোগী দেশগুলিরও সায় মিলেছে বলে দাবি ফলির।

Advertisement

এই খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে ভারতের শেয়ার বাজার। অক্টোবরে ব্যারেল পিছু অশোধিত তেলের দাম ৮০ ডলার থেকে ৭০ ডলারে নামায় তাকে কিছুটা হলেও নিশ্চিন্ত হতে দেখা গিয়েছিল। কারণ, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জেরে ইরান থেকে তেলের জোগান বন্ধের জেরে দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা করেছিলেন লগ্নিকারীরা।

তার উপর বিশ্ব বাজারে তেলের দামের নিরিখেই পেট্রল-ডিজেলের দর বাড়ে-কমে। গত এক মাসে অশোধিত তেল কিছুটা মাথা নামানোয় দেশে নাগাড়ে সস্তা হয়েছে পেট্রোপণ্যগুলি। উৎপাদন ছাঁটার জেরে অশোধিত তেলের দর ফের চড়লে উপরের দিকে মুখ তুলবে পেট্রল-ডিজেলও। ভোটের দামামা বেজে যাওয়ার পরে সেটা মোদী সরকারের পক্ষেও যথেষ্ট অস্বস্তির। কারণ তা আমজনতার ক্ষোভ বাড়াবে। বিরোধীদের হাতে জোরদার করবে সমালোচনার অস্ত্র। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় তেল ৮০ ডলার ছাড়ানোর সময়ে যে অভিজ্ঞতা ইতিমধ্যেই হয়েছে কেন্দ্রের।

Advertisement

বৈঠকে দরদাম

সেপ্টেম্বর, ২০১৬: দেড়-দু’বছরের মধ্যে ব্যারেলে ১১৫-১২০ থেকে ৩০-৩৫ ডলারে নেমেছিল অশোধিত তেলের দাম। তাই আলজিরিয়ার বৈঠকে উৎপাদন কমাতে রাজি ওপেক। ২০০৮ সালের পরে প্রথম। সিদ্ধান্ত, দিনে ৭.৫০ লক্ষ ব্যারেল উৎপাদন ছাঁটাইয়ের।

ডিসেম্বর, ২০১৬: ওপেকের সঙ্গে যৌথ ভাবে জোগান ছাঁটতে সম্মত হল ওই গোষ্ঠীর বাইরের দেশও। যেমন, রাশিয়া। ২০০১ সালের পরে প্রথম। যাতে তলানিতে ঠেকা দর কিছুটা ওঠে।

মে, ২০১৭: দর বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে ভিয়েনা বৈঠকে উৎপাদনে আরও ন’মাস (২০১৮ সালের মার্চ) রাশ টেনে রাখার সিদ্ধান্ত।
জুন, ২০১৮: যোগসাজশের মাধ্যমে সর্বোচ্চ উৎপাদন বেঁধে রেখে ওপেক তেলের দাম বাড়াচ্ছে— অভিযোগ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের।

জুন, ২০১৮: ভিয়েনা বৈঠকে সৌদি নেতৃত্বাধীন ওপেক ও রাশিয়ার সিদ্ধান্ত উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত। দিনে ১০ লক্ষ ব্যারেল।

সেপ্টেম্বর, ২০১৮: ব্যারেলে ৮০ ডলার ছাড়ানো দাম কমাতে উৎপাদন বাড়ানোর জন্য হুঁশিয়ারি ট্রাম্পের। কিন্তু ওপেক ও রাশিয়া জানিয়েছিল, সেই সম্ভাবনা নেই।

১১ নভেম্বর, ২০১৮: রবিবার ভারতীয় সময় মধ্যরাতে আবু ধাবিতে সৌদি আরবের তেলমন্ত্রী খলিদ-আল-ফলির ঘোষণা, আগামী দিনে বছরে তেল উৎপাদন দিনে প্রায় ১০ লক্ষ ব্যারেল কমানোর কথা ভাবছে ওপেক ও তার সহযোগীরা।

অথচ সে ক্ষেত্রে দাম না বাড়িয়েও উপায় নেই, বলছে তেল শিল্প মহল। অনেকেরই দাবি, বেশি দামে তেল আমদানি করেও যদি পেট্রল-ডিজেলের দর কম রাখতে হয়, তবে ক্ষতি গুনতে হবে সংস্থাগুলিকে।

সৌদি তেলমন্ত্রীর দাবি, তাঁরা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন, বাজার দরে সামঞ্জস্য রাখতে হলে অক্টোবরের উৎপাদনের তুলনায় দিনে ১০ লক্ষ ব্যারেল জোগান কমানো জরুরি। কারণ, বাড়তির ধাক্কায় ইতিমধ্যেই গত এক মাসে অশোধিত তেলের দাম কমে গিয়েছে এক পঞ্চমাংশ।

কেন্দ্রের চিন্তা

• ওপেক জোগানে রাশ টানলে বিশ্ব বাজারে বাড়তে পারে অশোধিত তেলের দাম। বিশেষত যেখানে ইরানের তেল নিয়ে আপাতত ছাড় দিলেও, এখনও কড়া আমেরিকা। সে ক্ষেত্রে ভারতে ফের মাথা তুলতে পারে পেট্রল-ডিজেলের দর। যা গত প্রায় এক মাস ধরে পড়ছিল।

• ধাক্কা খেতে পারে শেয়ার বাজার। সোমবারই সেনসেক্স নেমেছে ৩৪৫ পয়েন্ট।

• তেলের বাড়তি দাম মেটাতে গিয়ে ডলারের চাহিদা বাড়লে তার সাপেক্ষে পড়তে পারে টাকার দর। এ দিন ডলার বেড়েছে ৩৯ পয়সা।

• পেট্রল-ডিজেলের দাম চড়লে ক্ষোভ বাড়বে আমজনতার। ভোটের আগে যা কেন্দ্রের কাছে আদৌ স্বস্তির নয়।

সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ অবশ্য বলছেন, অশোধিত তেলের দামকে আসলে খুব কমতে দিতে চায় না সৌদি। কারণ, তাদের সরকারি সংস্থা অ্যারামকোকে বাজারে নথিভুক্তির পরিকল্পনা আছে। সে ক্ষেত্রে শেয়ার দর বাড়লে লাভ। কিন্তু তেলের দর পড়লে তার মুখ দেখা মুশকিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন