প্রতীকী ছবি।
করোনার প্রথম দফার সংক্রমণেই বিপুল ধাক্কা খেয়েছিল পর্যটন ব্যবসা। গত বছরে লকডাউনের তালা খোলার পরে অন্যান্য ক্ষেত্রের ব্যবসা শুরু হলেও সব শেষে সেই সুযোগ পায় এই শিল্প। সংক্রমণে কিছুটা রাশ পড়ায় তারপর থেকে পর্যটকেরা কাছের গন্তব্য দিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে অল্পবিস্তর দূরের পরিকল্পনায় মন দিতে থাকেন। অন্তত ব্যবসা টিকিয়ে রাখার মতো বরাত পেতে শুরু করে বহু পর্যটন সংস্থাই। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ফের অন্ধকারে ডুবছে পর্যটন ব্যবসা। উপরন্তু, সংক্রমণের হার বৃদ্ধির জেরে অন্যান্য দেশ ভারত নিয়ে সতর্কবার্তা জারি করায় অদূর ভবিষ্যতে বিদেশি পর্যটকের ব্যবসা পাওয়া নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে পুজোর মরসুমের আগে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা দেখছে না তারা।
দেশের জিডিপি-র ৯ শতাংশের সূত্র পর্যটন। বিদেশি মুদ্রা আয়েরও অন্যতম উৎস। প্রায় ১৩% কর্মসংস্থান হয় এই ক্ষেত্রেই। কিন্তু গত বছরে একপ্রস্ত বেহাল দশা কাটানোর পরে এ বার ফের ব্যাপক হারে সংক্রমণের জেরে পুনরুজ্জীবন অনেকটা পিছিয়ে গেল, দাবি ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব ট্যুর অপারেটর্স-এর (আয়োটো) প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট প্রণব সরকার এবং রাজ্যে ওই সংগঠনের চেয়ারম্যান দেবজিৎ দত্তের। প্রণববাবু বলেন, ‘‘ঋণ ছাড়া কেন্দ্রের তরফে তেমন আর্থিক সাহায্য না-মেলায় রোজগারের টানে বেরোতে হয়েছিল অধিকাংশ মানুষকে। সচেতনতার অভাবে বিধিনিষেধ মেনে চলাতেও শিথিলতা ছিল। ফলে বেড়েছে সংক্রমণ। মার্চ-এপ্রিলে যেটুকু চাকা ঘোরার আশা ছিল, তা-ও উধাও হয়েছে।’’
এর মধ্যে ভারত থেকে কাউকে নিজেদের দেশে ফেরার ক্ষেত্রে কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ব্রিটেন, আমেরিকা-সহ নানা দেশ। কবে ফের বিদেশি পর্যটকদের ভারতে আসার প্রাথমিক প্রক্রিয়া চালু করা যাবে, তা-ও ঘোর অন্ধকারে। আয়োটার প্রেসিডেন্ট রাজীব মেহরা জানান, যে ভাবে প্রতিষেধক দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে, তাতে পরিস্থিতির উন্নতি হলে বিভিন্ন দেশকে সেই সব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আর্জি জানাবেন তাঁরা।
গত বছরে দীর্ঘদিন ঘরবন্দি থেকে হাঁপিয়ে ওঠা অনেকেই সংক্রমণে রাশ পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেরোতে শুরু করেছিলেন, বলছেন ট্র্যাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের সেক্রেটারি নীলাঞ্জন বসু। তিনি বলেন, ‘‘ফের সংক্রমণ তাতেই তো জল ঢেলে দিল। পুজোর আগে আর কোনও সম্ভাবনাই কার্যত নেই।’’
ভারতে এসে চিকিৎসার জন্য ই-ভিসা চালু করলেও পড়শি বাংলাদেশ আবার সেই তালিকায় নেই। রাজীবের দাবি, এ বারে সেই তালিকায় অনুমোদনপ্রাপ্ত দেশের সংখ্যাও কমানো হয়েছে। দেবজিতের মতে, বাংলাদেশকে তালিকাভুক্ত করলে কিছুটা অন্তত ব্যবসার সূত্র মিলবে। তবে প্রতিষেধক বণ্টনের হার বাড়লে পরিস্থিতির উন্নতির আশায় রয়েছেন তাঁরা। তৃতীয়বার যেন নিয়ম মানার ক্ষেত্রে আর কোনও ভুল করা না-হয়, সেই বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি আপাতত সেই আশাতেই দিন গুনছে পর্যটন শিল্প।