বিশেষজ্ঞদের মতে, মাঝেমধ্যে মাথা তুললেও আপাতত জোরালো ভাবে বাজারের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা কম।
ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম এখনও খাদে। সঙ্গে রয়েছে প্রথমে বেশ কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা এবং আগামী বছরে লোকসভা ভোটের বাজনা। দেশে এই সমস্ত কারণের পাশাপাশি আমেরিকা-চিন বাণিজ্য যুদ্ধ এবং ইরানের উপরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারির দিন এগিয়ে আসার কারণে অনিশ্চয়তার চাদর মুড়ি দিয়ে রয়েছে বিশ্ব বাজারও। ঘরে-বাইরে এমন হাজারো সমস্যার জেরে শুক্রবার সাত মাসের মধ্যে সব থেকে নীচে নেমে এল সেনসেক্স। এ সপ্তাহে নিট হিসেবে তা খুইয়েছে ৯৬৬.৩২ পয়েন্ট। নিফ্টি ২৭৩.৫৫ অঙ্ক।
শুক্রবার পতনের পরে সেনসেক্স দাঁড়িয়েছে ৩৩,৩৪৯.৩১ অঙ্কে। নিফ্টি থিতু হয়েছে ১০,০৩০.০০ পয়েন্টে। ডলারে টাকার দামও ফের পড়েছে ২০ পয়সা। মার্কিন মুদ্রার দাম পৌঁছেছে ৭৩.৪৭ টাকায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাঝেমধ্যে মাথা তুললেও আপাতত জোরালো ভাবে বাজারের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা কম। বিএনকে ক্যাপিটাল মার্কেটসের এমডি অজিত খন্ডেলওয়াল বলেন, ‘‘বাজার চাঙ্গা হওয়ার কোনও কারণ চোখে পড়ছে না। বরং দেশে-বিদেশে অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি তাকে আরও টেনে নামাতে পারে। নিফ্টি খোয়াতে পারে আরও প্রায় চারশো পয়েন্ট।’’
স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান কমল পারেখ এবং ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন ডিরেক্টর এস কে কৌশিকের বক্তব্য, সব থেকে বড় অনিশ্চয়তা সম্ভবত আমেরিকা-চিনের শুল্ক যুদ্ধ এবং ৪ নভেম্বর থেকে ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার হুমকি। যার বিরূপ প্রভাব বিশ্ব বাজারে স্পষ্ট।
এ ছাড়া, নীরব মোদীর ব্যাঙ্ক প্রতারণা, আইএল অ্যান্ড এফএসের মতো কাণ্ডের পরে দেশের মূলধনী বাজারে নগদের জোগানে টান পড়েছে। তার উপর বেশ কিছু বড় সংস্থার আর্থিক ফলাফলও হতাশ করেছে বাজারকে। তার উপর সামনেই চার রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। লোকসভা ভোট আগামী বছরে। নির্বাচনের ঠিক আগে চিরকালই অনিশ্চিত থাকে বাজার। লগ্নিকারীরা কিছুটা হাত গুটিয়ে নেন। এখনও তেমনটা ঘটছে।
পতনের বহর
• শুক্রবার ফের ৩৪০.৭৮ পয়েন্ট পড়ল সেনসেক্স। ৯৪.৯০ অঙ্ক নামল নিফ্টিও।
• চলতি সপ্তাহে নিট হিসেবে সেনসেক্সের পড়েছে ৯৬৬.৩২ পয়েন্ট। নিফ্টি ২৭৩.৫৫ অঙ্ক।
দেশে কারণ
• টাকার দাম এখনও খাদে। শুক্রবারও ডলারের দর ফের বেড়েছে ২০ পয়সা।
• বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপরে নিষেধাজ্ঞার কারণে পুঁজিতে টান। নগদে টান মূলধনী বাজারেও।
• ভোট না মেটা পর্যন্ত বাজারে অস্থিরতা। সঙ্গে অনিশ্চয়তাও।
• দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে একাধিক বড় সংস্থার হতাশাজনক ফলাফল।
• বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলির টানা শেয়ার বিক্রি।
বিদেশে সমস্যা
• আমেরিকা-চিনের শুল্ক যুদ্ধ।
• ৪ নভেম্বর থেকে ইরানের উপরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা জারি হলে, চিন্তা তেল নিয়ে।
• এই সমস্ত কারণে প্রায় টানা পড়ছে বিভিন্ন দেশের বাজারও।
বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির টানা শেয়ার বিক্রিও বাজারে সমস্যা তৈরি করছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। তারা গত দু’দিনে শেয়ার বেচেছে প্রায় ২,৮৫২ কোটির। আরও বড় পতন রুখছে মিউচুয়াল ফান্ড-সহ ভারতীয় আর্থিক সংস্থাগুলির টানা বিনিয়োগই।