কোনও দিন ৪০০ পয়েন্ট পতন। আবার পরের দিনই প্রায় ততটা উত্থান। ৩৯,০০০-এর গণ্ডি ভেঙে সেনসেক্স এক দিন নামলে, পরের দিনই হয়তো ফিরে আসছে আগের জায়গায়। গত সপ্তাহে শেয়ার বাজারের ছবিটা ছিল অনেকটা এই রকম। সূচক একটু উঠলেই লগ্নিকারীরা লাভের টাকা ঘরে তোলার তাগিদে শেয়ার বিক্রি করছেন, ফলে স্থায়ী হয়নি উত্থান।
তার উপরে আশঙ্কা বাড়িয়েছে বিশ্ব বাজারে তেলের দরের ঊর্ধ্বগতি। মে থেকে ইরানের তেল আমদানিতে ভারত-সহ আটটি দেশকে দেওয়া ছাড় তুলে নেওয়ার কথা গত সোমবার জানিয়েছে আমেরিকা। তার পরেই চড়েছে তেলের দাম। বৃহস্পতিবার এক সময়ে তা পৌঁছয় ব্যারেলে ৭৫ ডলারে। অক্টোবরের পরে সর্বোচ্চ। সপ্তাহ শেষে দাম নামলেও, চিন্তা যাচ্ছে না। ফলে সে দিকে নজর রাখছেন লগ্নিকারীরা। সব মিলিয়ে ওঠানামার পরে শুক্রবার সেনসেক্স দাঁড়িয়েছে ৩৯,০৬৭ অঙ্কে। নিফ্টি ১১,৭৫৫ পয়েন্টে।
ইরান থেকে তেল আমদানি নিয়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার খবর তো ছিলই। উপরন্তু মান খারাপ হওয়ায় রাশিয়া থেকে পোল্যান্ড এবং জার্মানির মতো কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের তেল আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্তও গত সপ্তাহে তার দরকে ঠেলে তুলেছে। আর তেল এতটা বৃদ্ধি পাওয়ায় চাপ বেড়েছে টাকার দামে। সপ্তাহ শেষে ডলারের দাম দাঁড়িয়েছে ৭০.০২ টাকায়।
এমনিতেই অর্থনীতির চিন্তা ছিল শিল্প বৃদ্ধি ও মূল্যবৃদ্ধির পরিসংখ্যান নিয়ে। তার উপরে আশঙ্কা, তেলের দাম এই ভাবে উঠতে থাকলে বাড়তে আমদানি খরচ। যার জেরে চড়তে পারে জিনিসপত্রের দাম। সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে সুদ বৃদ্ধিরও। যার ফল হিসেবে পড়তে পারে বাজার।
তেলের চড়া দর বাদ দিলে অবশ্য বাজার বেশ ভাল জায়গাতেই আছে। তেল আর না-ভোগালে ভোটের ফল বেরনোর পরে মে মাসে সূচকের আরও উপরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
গত সপ্তাহেও প্রকাশিত হয়েছে বেশ কয়েকটি সংস্থার আর্থিক ফল। গত অর্থবর্ষের শেষ তিন মাসে মারুতি-সুজুকির নিট মুনাফা ৪.৬% কমে হয়েছে ১,৭৯৬ কোটি টাকা। হিরো মোটোকর্পের ক্ষেত্রে তা ২৪.৫% নেমে হয়েছে ৭৩০ কোটি। গত বছরের জানুয়ারি-মার্চে ২,১৮৮ কোটি লোকসান করেছিল অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক। এ বছর একই সময়ে ১,৫০৫ কোটি মুনাফা হয়েছে। মহীন্দ্রা ফিনান্সের নিট লাভ ৮৭% বেড়ে পৌঁছেছে ৫৮৮ কোটিতে। আল্ট্রাটেক সিমেন্টের নিট মুনাফা বেড়ে হয়েছে ১,০৩৪ কোটি।
আর্থিক ফল ছাড়াও গত সপ্তাহে আরও কিছু তথ্য হাতে এসেছে, যা বাজারের উপর কমবেশি প্রভাব ফেলতে পারে। এগুলি হল—
• সিএমআইই-র রিপোর্ট বলছে এপ্রিলের প্রথম তিন সপ্তাহে দেশে বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৭.৯%, ৮.১% এবং ৮.৪%।
• বন্ধন ব্যাঙ্কের ৯.৯% শেয়ার অধিগ্রহণ করতে এইচডিএফসিকে অনুমতি দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
• টাটা স্টিলের সঙ্গে মিশতে চলেছে ভূষণ স্টিল।
(মতামত ব্যক্তিগত)