বাজেটের আগে অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে শেয়ার বাজার। ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো দুলছে সূচক। আগের দিন ৩৩৭ পয়েন্ট ওঠার পর বৃহস্পতিবার এক ধাক্কায় সেনসেক্স পড়ে গেল ২৫১.০৭ পয়েন্ট। বাজার বন্ধের সময়ে এ দিন সূচক এসে দাঁড়িয়েছে ২৫,০৬২.৬৭ অঙ্কে।
এই পতনের তাৎক্ষণিক কারণ অবশ্য কেন্দ্রীয় সরকারের এখনই প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম না-বাড়ানোর খবর। গত পরশু সংসদের অর্থনীতি বিষয়ক কমিটি প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম নির্ধারণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি ৩ মাসের জন্য পিছিয়ে দিয়েছে। শেয়ার বাজার-সহ সংশ্লিষ্ট সমস্ত মহলেরই ধারণা ছিল, কেন্দ্রীয় সরকার এ ব্যাপারে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু ওই কমিটি সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দেওয়ার ফলে শেয়ার বাজার মহল হতাশ।
প্রাকৃতিক গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি পিছিয়ে যাওয়ার ফলে বিশেষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রিলায়্যান্স, ওএনজিসি-সহ গ্যাস উৎপাদনকারী সংস্থাগুলি। এর ফলে এ দিন বিএসই-র গ্যাস সূচকের আওতায় থাকা ১০টি গ্যাস সংস্থার শেয়ার দরই পড়ে যায়।
তবে সূচকের পতন সত্ত্বেও বাজারের মেজাজ ভালই আছে বলে মন্তব্য করেছেন শেয়ার বিশেষজ্ঞ এবং বিএনকে ক্যাপিটাল মার্কেটসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অজিত খান্ডেলওয়াল। তিনি বলেন, “গ্যাসের দাম নির্ধারনের সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি এ দিনই ছিল জুন মাসের ডেরিভেটিভের আগাম লেনদেনের সেট্লমেন্টের দিন। সাধারণত সেট্লমেন্ট এবং তার আগের দিন দুই-তিন বাজার একটু দ্রুত ওঠানামা করে। তবে এ বার কিন্তু ওঠা-নামার গতি আগের মাসের থেকে কম ছিল।”
এ ছাড়া বাজেটের আগে লগ্নিকারীরা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একটু সতর্কতা অবলম্বন করে চলছেন বলে শেয়ার বাজার সূত্রের খবর। আগামী ১০ জুলাই কেন্দ্রের নতুন বিজেপি সরকার তাদের প্রথম বাজেট সংসদে পেশ করবে। অজিতবাবু বলেন, “সাধারণ মানুষ বাজেট থেকে অনেক কিছুই প্রত্যাশা করছেন। তাঁদের প্রত্যাশা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি কতটা পূরণ করতে পারবেন, তা নিয়ে কিন্তু আমার সংশয় রয়েছে। তাই বাজেটের প্রতিক্রিয়া শেয়ার বাজারে কী ভাবে পড়বে, তা নিয়ে এখনই কিছু বলা মুশকিল।”
অজিতবাবুর কথা থেকে এটা স্পষ্ট যে, বাজেট নিয়ে ইতিমধ্যেই একটা অনিশ্চয়তা বাজারে তৈরি হয়েছে। অনেকেরই আশঙ্কা, বাজেট মনমতো না-হলে শেয়ার বাজারে তার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। তবে সেটা যে সাময়িক হবে, তা নিয়েও অবশ্য সন্দেহ নেই সংশ্লিষ্ট মহলের। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই হাতের শেয়ার বিক্রি করে মুনাফার টাকা তুলে নিয়ে আপাতত হাত গুটিয়ে রাখতে চাইছেন। এই বিষয়টিও সূচকের পতন ত্বরান্বিত করেছে বলে মনে করেন অজিতবাবু। তিনি বলেন, “ওই সব লগ্নিকারী বাজেটের পরে সুযোগ বুঝে ফের বাজারে বিনিয়োগ করতে নামবেন।”
তবে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির বিনিয়োগে অবশ্য ভাটা পড়েনি। পিটিআইয়ের খবর, ওই সব সংস্থা গত বুধবারই ভারতের শেয়ার বাজারে ৬৯৪.৬৩ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছে।
বাজারে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়ায় শুধু গ্যাস সংস্থাগুলির শেয়ার দরই যে পড়েছে, তা নয়। এই দিন আই সি আই সি আই ব্যাঙ্ক, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, এইচডিএফসি, স্টেট ব্যাঙ্ক, টাটা মোটরস, এনটিপিসি, কোল ইন্ডিয়া-সহ বিএসইতে নথিভুক্ত ১৫৩৯টি সংস্থার শেয়ার দরই পড়েছে বলে সংবাদ সংস্থার খবর।