Stock Market

বাড়তি বিদেশি পুঁজির জোয়ারেই চাঙ্গা বাজার

অনেক কারণই রয়েছে এর পিছনে। অন্যতম একটি, বাজারে করোনার টিকা পাওয়ার আশা। যার হাত ধরে অর্থনীতির চেহারাটা মুহূর্তের মধ্যে পাল্টে যেতে পারে বলে আশা লগ্নিকারীদের।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:০৪
Share:

—ফাইল চিত্র

লম্বা দৌড়ের পরেও ক্লান্তি নেই দুই শেয়ার সূচকের। গত শুক্রবার সেনসেক্স প্রথম বারের জন্য ৪৭ হাজারের স্বাদ পেয়ে গিয়েছে। পরে অবশ্য বিক্রির চাপে কিছুটা নেমে থিতু হয় ৪৬,৯৬১ পয়েন্টে। নিফ্‌টি থামে ১৩,৭৬১-তে। দুই সূচকেরই নতুন নজির। যদিও গত সপ্তাহে পাঁচটি কাজের দিনের প্রতিটিতে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে তারা। ৪৬ থেকে ৪৭ হাজারে পাড়ি দিতে সেনসেক্স নিয়েছে মাত্র ছ’টি কাজের দিন।

Advertisement

এত উঁচু বাজারে পতনের আশঙ্কা থাকেই। তার উপরে অর্থনীতির এমন কোনও উন্নতি ঘটেনি, যার হাত ধরে এখনই সঙ্কটের মেঘ কেটে যেতে পারে। তবু সূচক উঠছে ঝড়ের বেগে। প্রশ্ন হল কেন?

অনেক কারণই রয়েছে এর পিছনে। অন্যতম একটি, বাজারে করোনার টিকা পাওয়ার আশা। যার হাত ধরে অর্থনীতির চেহারাটা মুহূর্তের মধ্যে পাল্টে যেতে পারে বলে আশা লগ্নিকারীদের। তবে সূচকের উত্থানের সব থেকে বড় কারণ নজিরবিহীন ভাবে নাগাড়ে বিদেশি আর্থিক লগ্নিকারী সংস্থাগুলির বিনিয়োগ। যাদের আশা, করোনা বিদায়ের পরে সারা বিশ্বে অনেকের তুলনায় দ্রুত গতিতে ছুটবে ভারতের মতো সম্ভাবনাময় দেশের অর্থনীতি। ডিসেম্বরে এখনও পর্যন্ত ভারতে তারা ৫৪,৯৮০ কোটি টাকা ঢেলেছে। এর মধ্যে শেয়ারে ৪৮,৮৫৮ কোটি আর ঋণপত্রের বাজারে ৬১২২ কোটি টাকা। পরিস্থিতির উন্নতির আশায় দেশীয় লগ্নিকারীদেরও ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। বাজারের এমন উত্থানে একাংশের প্রত্যাশা কার্যত লাগামহীন হয়েছে। ওই সব লগ্নিকারীর লক্ষ্য এ বার ৫০ হাজার।

Advertisement

এ দিকে, পাইকারি দর বাড়লেও, নভেম্বরে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার ৬.৯৩ শতাংশে নামায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে সরকার ও সাধারণ মানুষের মনে। অক্টোবরে তা ছিল ৭.৬১%। নভেম্বরে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার ১০.১৬% থেকে নেমেছে ৮.৭৬ শতাংশে। আনাজের ক্ষেত্রে তা ২২.৫১% থেকে ১৫.৬৩%। জ্বালানি ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির হার ২.২৮% থেকে কমে হয়েছে ১.৯০%। শীতের ফসল বাজারে আসতে শুরু করায় তা আরও কিছু দিন নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলেই আশা। তবে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার এখনও আরবিআইয়ের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যমাত্রার (৬ শতাংশ) উপরে। ফলে এখনই সুদ কমার সম্ভাবনা কম।

আরও পড়ুন: দিল্লির আন্দোলন থেকে বাড়িতে ফিরে কৃষকের আত্মহত্যা!

আরও পড়ুন: কাশ্মীরে ভিড় পর্যটকের, প্রায় সব হোটেল ভর্তি জানুয়ারি পর্যন্ত

ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে আগামী বছরের বাজেট প্রক্রিয়া। সংসদে ২০২১-২২ অর্থবর্ষের বাজেট পেশ হবে ১ ফেব্রুয়ারি। বিভিন্ন মহলের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। তাঁর দাবি, বিভিন্ন দিক থেকে এ বারের বাজেট হবে অভিনব। শিল্পমহল চাইছে কোষাগারের দিকে না-তাকিয়ে আর্থিক ত্রাণে আরও টাকা ঢালুক সরকার।

ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পগুলির সুদের হার পর্যালোচনা হবে চলতি মাসের শেষ দিকে। হারে পরিবর্তন হলে তা চালু হবে ১ জানুয়ারি থেকে। গত শুক্রবার ১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ডের ইল্ড বেড়ে হয়েছে ৫.৯৬%। কোনও কোনও ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পের সুদ ইল্ডের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। জাতীয় সঞ্চয়পত্রের (এনএসসি) সুদের হারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করযোগ্য ভারত সরকারের বন্ডের উপর দেয় সুদ। এনএসসি-র তুলনায় ৩৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ বেশি থাকে ভারত সরকারের ওই বন্ডের সুদ, যা বর্তমানে ৭.১৫%।

বছরের শেষ ক’দিন শেয়ার বাজার থেকে এক রকম ছুটি নেয় বিদেশি লগ্নিকারীরা। ফলে আগামী কয়েক দিন উত্তজনার কিছুটা ঘাটতি থাকতে পারে শেয়ার বাজারে। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে সেনসেক্স বন্ধ হয়েছিল ৪১,২৫৪ পয়েন্টে। এ বার তা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটাই দেখার। করোনার আঘাতে সাময়িক তলিয়ে গেলেও, পরে অভূতপূর্ব ভাবে বেড়েছে দুই সূচক। ফলে বেশ ভাল অবস্থায় শেয়ার নির্ভর ফান্ডগুলিও। সামগ্রিক ভাবে খুশি শেয়ার ও ফান্ডের লগ্নিকারীরা।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন