দিল্লির নর্থ ব্লকে প্রথা অনুযায়ী হালুয়া তৈরি এবং বিতরণের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার শুরু হয়ে গেল বাজেটে শেষ টান দেওয়া এবং তা ছাপার কাজ। ওই দিন থেকে সংসদে বাজেট পেশ শেষ না-হওয়া পর্যন্ত অর্থ দফতরের যে-সব কর্মী বাজেট তৈরির কাজে ব্যস্ত, তাঁরা নর্থ ব্লক ছেড়ে বাড়ি যেতে পারবেন না। সে কারণেই রীতি মেনে থাকছে তাঁদের পেটপুজোর আয়োজনও।
এ বার বাজেট পেশ হবে ১ ফেব্রুয়ারি। অর্থাৎ হাতে আর মাত্র আটটি দিন। নোট বাতিল ঘিরে বিতর্ক ছেড়ে এ বার কিছুটা হলেও নজর ঘুরবে বাজেটের দিকে। এ বারের বাজেট নিয়ে কৌতূহল সকলের। মানুষের আশা, নোট নাকচের কারণে তাঁদের ভোগান্তি এবং লোকসানে মলম লাগাতে বাজেটে কিছু ব্যবস্থা থাকবে। বাজেটে জন-মনোরঞ্জন করা হতে পারে পাঁচ রাজ্যে নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেও। ব্যক্তিগত করদাতারা আশা করছেন, কিছুটা হলেও এ বার করের বোঝা কমবে। পাশাপাশি শিল্প-বাণিজ্য মহল আশা করছে, এ বার কোম্পানি কর কমবে। আখেরে কী হয়, তা জানা যাবে সরস্বতী বন্দনার দিন জেটলির ব্রিফকেস থেকে কী বার হয়, তা জানার পরেই। ওই দিন বহু মানুষ বিদ্যার দেবীর পাশাপাশি ধনের দেবীরও আরাধনা করবেন।
বাজেট ছাড়াও বাজারে উত্তেজনা আছে তৃতীয় ত্রৈমাসিক কোম্পানি ফলাফলকে কেন্দ্র করে। কয়েকটি বড় মাপের সংস্থার ফল প্রকাশিত হয়েছে গত সপ্তাহে। সুপার হেভিওয়েট রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ-এর বিক্রি ১৬% বেড়ে পৌঁছেছে ৮৪,১৮৯ কোটি টাকায়। ৩.৬% বেড়ে লাভ ছাড়িয়েছে ৭৫০০ কোটি টাকার মাত্রা। বেসরকারি অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক বেশ খারাপ ফল প্রকাশ করলেও ইয়েস ব্যাঙ্ক কিন্তু ফলাফলে খুশি করেছে লগ্নিকারীদের। আজ ফলাফল প্রকাশ করবে হিন্দুস্তান ইউনিলিভার। এফএমসিজি কোম্পানি বা ভোগ্যপণ্য সংস্থাগুলি ফল প্রকাশ করলে বোঝা যাবে তাদের উপর নোট বাতিলের ধাক্কা কতটা পৌঁছেছে।
আরবিআই গভর্নরের কথা অনুযায়ী বাজারে এসে গিয়েছে ৯.২০ লক্ষ কোটি টাকা মূল্যের নতুন নোট। অর্থাৎ প্রাণ ফিরছে নগদ লেনদেনের বাজারে। টাকা তোলার ঊর্ধ্বসীমা তুলে নেওয়া হলেই পণ্যের চাহিদা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এ কথা মাথায় রেখে শেয়ার বাজার শক্তি ধরে রেখেছে। সপ্তাহের শেষে বাজারে কিছুটা আশঙ্কার মেঘ দেখা গিয়েছিল ফেড রেট বাড়ার সম্ভাবনায় ও ভিসার নিয়মে কড়াকড়ি করা নিয়ে ট্রাম্পের মন্তব্যে। এ দিকে, আজ সোমবার বাজারে শেয়ার ছাড়ছে মুম্বই স্টক এক্সচেঞ্জ বা বিএসই লিমিটেড।
২০১৭-’১৮ সালের বাজেট যখন দোরগোড়ায়, তখন ২০১৬-’১৭ আর্থিক বছরের জন্য কর সাশ্রয়ের কথাটি কিন্তু ভুললে চলবে না। হাতে আছে আর মাত্র ২ মাস ৮ দিন। যাঁদের ৮০সি ধারার অধীনে এখনও লগ্নি করা বাকি, তাঁরা সময় নষ্ট না-করে কাজটি সেরে নিন হাতে সময় থাকতে থাকতে। যাঁদের পুরো লগ্নি করা হয়ে গিয়েছে, তাঁরা অতিরিক্ত ৫০,০০০ টাকার উপর কর সাশ্রয় করতে পারেন এনপিএস (নিউ পেনশন সিস্টেম) প্রকল্পে লগ্নি করে। এই প্রকল্পে সংগৃহীত তহবিল বাজারে খাটানো হয় ৭টি ফান্ড পরিচালন সংস্থার মাধ্যমে। গত এক বছরে নানা কারণে বাজারে ওঠা-পড়া চললেও এনপিএস প্রকল্পগুলি কিন্তু ভাল রিটার্নের ব্যবস্থা করতে পেরেছে। সঙ্গের সারণিতে দেওয়া হল এই তথ্য। স্বনির্ভর মানুষ এবং যে-সব সংস্থার কর্মীদের পেনশনের ব্যবস্থা নেই, তাঁরা এনপিএস প্রকল্পে যোগদান করে নিজেদের জন্য পেনশনের ব্যবস্থা করতে পারেন। পিপিএফের মতো দীর্ঘ মেয়াদে টাকা জমানোর জন্য এটিও একটি ভাল জায়গা। এ ছাড়া টাকা জমানোর কথা ভাবা যেতে পারে মিউচুয়াল ফান্ডের ইএলএসএস প্রকল্পে। ব্যাঙ্ক-ডাকঘরে সুদ অনেকটাই নেমে আসায় শেয়ার বাজার ও মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি বাড়তে শুরু করেছে। আজকের জায়গায় দাঁড়িয়ে দীর্ঘ মেয়াদে ভারতের শেয়ার বাজারের ভবিষ্যৎ ভালই বলে মনে করা হচ্ছে।