পেরিয়ে এলাম এক টগবগে সপ্তাহ। উত্তেজনায় ঠাসা। সব দিক থেকে ভাল খবরের জোয়ার। ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রজ্জ্বলিত হয়েছে আশার মশাল। ফলে ঠেকিয়ে রাখা যায়নি সেনসেক্স ও নিফ্টিকে। নজির ভেঙে দুই সূচকই পৌঁছেছে নতুন উচ্চতায়। সপ্তাহের শেষে সেনসেক্স ও নিফ্টি থেমেছে যথাক্রমে ৩০,৪৬৫ ও ৯,৪২৮ অঙ্কে। তবে অনেকেরই ধারণা, ম্যারাথনের এখনও অনেকটাই বাকি।
কেন? দেখে নেব এক নজরে।
• মে মাসে পূর্ণ হল কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের তিন বছর। শেয়ার বাজার এবং কর্পোরেট দুনিয়া এখনও পর্যন্ত এই সরকারের কাজকর্মে খুশি। প্রতিশ্রুত আর্থিক সংস্কার রূপায়ণ অনেকটাই এগিয়েছে এই তিন বছরে। বাদবাকি সংস্কার কর্মসূচিও যে প্রত্যাশা মাফিক এগোবে, তা নিয়ে আশাবাদী শিল্প ও বাণিজ্য মহল। অনেক ক্ষেত্রে ‘অচ্ছে দিন’-এর দেখা না-মিললেও শেয়ার বাজার কিন্তু খুশি এই তিন বছরের কর্মকাণ্ডে। পরিসংখ্যানের দিকে নজর রাখলেও তার ইঙ্গিত মিলবে। কারণ, গত তিন বছরে সেনসেক্স বেড়েছে ৩৫%, প্রধান ৩০টি মিড-ক্যাপ (মাঝারি মূলধনের সংস্থার দর) বেড়েছে ২২৭% এবং প্রধান ৩০টি স্মল-ক্যাপ (কম মূলধনের সংস্থা) গড়ে বেড়েছে ১২৪৯%। ফলে মোদীতে মজেছে দেশের এবং বিদেশের লগ্নিকারীরা।
আরও পড়ুন: ফ্লেক্সে নেই কেন মমতা
• সারা দেশে বর্ষার আগমন আর মাত্র কয়েকটি রাজ্য দূরে। এরই মধ্যে সে পৌঁছে গিয়েছে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে। কেরলে বর্ষা ঢুকেছে ২ দিন আগেই। এ বার দেশ স্বাভাবিক বর্ষা পাবে, এই পূর্বাভাস চাঙ্গা রেখেছে বাজারকে। যার জেরে এরই মধ্যে তেতে উঠেছে গাড়ি, মোটরবাইক, এফএমসিজি-সহ বেশ কয়েকটি শিল্প। মারুতির শেয়ার দর পৌঁছে গিয়েছে সর্বকালীন উচ্চতায়। এই শেয়ার এখন ৭,০০০ ছুঁইছুঁই। গত তিন বছরে মারুতির শেয়ার বেড়েছে ২৫৭%। এফএমসিজি-র ক্ষেত্রে বাজারে প্রথম স্থানে থাকা হিন্দুস্তান ইউনিলিভার প্রথম বারের জন্য প্রবেশ করেছে ১,০০০ টাকার দুনিয়ায়। আইটিসি গুটি গুটি এগোচ্ছে ৩০০ টাকার দিকে। গাড়ি ও তার সহযোগী শিল্পগুলির অবস্থাও বেশ ভাল। এপ্রিলে আকর্ষণীয় হারে বেড়েছে গাড়ি বিক্রি।
• ধীরে ধীরে সুদিন দেখতে পাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি। লাভের খাতায় ফিরেছে ব্যাঙ্ক অব বরোদা, পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক, এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক ও ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক। তবে এখনও বিপুল বকেয়া ঋণের জেরে অনুৎপাদক সম্পদ জমে ওঠার সমস্যার কিছুটা সুরাহা হতে আরও দেড় থেকে দু’বছর লাগবে বলে মনে করা হচ্ছে।
• প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা শেয়ার বাজারে লগ্নি করে গত এক বছরে ভাল লাভের সন্ধান পেয়েছে কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ড সংগঠন (ইপিএফও)। প্রস্তাব, এই লগ্নি ১০% থেকে বাড়িয়ে ১৫% (নতুন জমার ক্ষেত্রে) করার। সিদ্ধান্তে পরিণত হলে তা শেয়ার বাজারকে জোগাবে বড় শক্তি।
• ১ জুলাই থেকে চালু হচ্ছে পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) আইন। প্রায় সব পণ্য ও পরিষেবার উপর করের হার এই সপ্তাহে ঠিক করা হয়েছে। কেন্দ্রের দাবি, নতুন এই পরোক্ষ কর ব্যবস্থা চালু হলে দেশে খাদ্যশস্যের দাম কমবে। বিভিন্ন শিল্প এখন অঙ্ক কষছে, কার উপর জিএসটি-র কতটা প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়ে। জিএসটি চালু হওয়া শেয়ার বাজারের পক্ষেও ভাল খবর।
• গত সপ্তাহে গৃহঋণে সুদ কমিয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক। ৩০ বেসিস পয়েন্ট কমে সুদের হার নেমে এসেছে ৮.৩৫ শতাংশের আশেপাশে। নির্মাণ শিল্প এবং তার সহযোগীদের পক্ষে এটি একটি ভাল খবর।
• গত সপ্তাহে ভাল রকম সাফল্য পেয়েছে সরকারি সংস্থা হাডকো-র পাবলিক ইস্যু। ৬০ টাকার এই ইস্যুতে আবেদন জমা পড়েছে প্রায় ৮০ গুণ। গত শুক্রবার এই শেয়ার নথিবদ্ধ হয়েছে ২১/২২ শতাংশ প্রিমিয়ামে।
• কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কয়েকটি বড় মাপের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। অর্থনীতির পক্ষে এটি কিন্তু আদৌ ভাল খবর নয়। এর ফলে চাহিদা কমতে পারে বাড়ি ও গাড়ি শিল্পে। এই কারণে শেয়ারের দাম কমেছে কয়েকটি সংস্থার। তবে শেয়ার বাজারের আশা, যে-সব তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানি মার্কিন বরাতের উপর তেমন নির্ভরশীল নয়, তারা কিন্তু আগামী দিনে ভাল করবে।
• আর মাত্র ৯ দিনের মধ্যে শেষ হবে শেষ ত্রৈমাসিক তথা ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষের ফলাফল প্রকাশের পালা। যা আশা করা হয়েছিল, এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত ফলাফল তার থেকে ভাল। মনে করা হচ্ছে, তা আরও উন্নত হবে চলতি বছরে।
• এত আশার মধ্যেও প্রধান আশঙ্কা, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী দিনে কোন পথে হাঁটেন, তা নিয়ে। ট্রাম্প যদি নতুন করে কোনও প্রতিকূল (ভারতের পক্ষে) সিদ্ধান্ত না-নেন, তা হলে আগামী দিনে ভারতের অর্থনীতি অনেকটাই মজবুত হবে বলে মনে করা হচ্ছে।