যেমন ভাবা হয়েছিল, ঘটেছে ঠিক তাই। ঋণনীতি পর্যালোচনার পরে এ বারও সুদ কমানোর পথে হাঁটেনি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক (আরবিআই)। যেহেতু সুদ কমতে পারে, এমন কোনও আশা বাজারের ছিল না, তাই বুধবার শীর্ষ ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্ত ঘোষিত হওয়ার পরে কিন্তু বাজার পড়েনি। বরং সে দিন শেষ বেলায় সেনসেক্সও কিছুটা উঠেছে।
এপ্রিলে মূল্যবৃদ্ধির হার কমেছে। শীর্ষ ব্যাঙ্ক দেখতে চায় দাম বাড়ার হার আগামী মাসগুলিতে নীচের দিকে থাকে কি না। বাজারের আশা অগস্টে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমাবে। ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষে এক বারই সুদ কমবে বলে মনে করছে বাজার। কৃষি উৎপাদন ভাল হলে খাদ্যপণ্যের দাম কমই থাকবে আশা করা যায়। দামের উপর পণ্য-পরিষেবা করের (জিএসটি) কী প্রভাব পড়ে, তা-ও দেখে সিদ্ধান্ত নিতে চায় শীর্ষ ব্যাঙ্ক। বড় মাপের ঋণে ঝুঁকির মাত্রা কমানো নিয়ে আরবিআইয়ের সিদ্ধান্ত অবশ্য গৃহঋণে সুদ কমার পথ কিছুটা প্রশস্ত করেছে। স্টেট ব্যাঙ্ক এরই মধ্যে বড় মাপের গৃহঋণে (৭৫ লক্ষ টাকার বেশি) সুদ ১০ বেসিস পয়েন্ট কমানোর কথা ঘোষণা করেছে।
এই দফায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো রেট না-কমানোয় আশা করা যায় বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি জমার উপর এখনই সুদ ছাঁটাই করবে না। আগামী ১ জুলাই ডাকঘর ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পগুলির সুদ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা-ই এখন দেখার। নতুন নিয়মে বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তিন মাস অন্তর এই সব প্রকল্পে সুদ ফিরে দেখা হয়।
আরও পড়ুন: জিএসটি বৈঠকে কথা প্রস্তুতি নিয়ে
জিএসটি চালু হওয়ার প্রস্তাবিত দিন এগিয়ে আসছে। সারা দেশে এক লপ্তে পরোক্ষ কর ব্যবস্থা আমূল পাল্টে ফেলা সরকারের কাছে নিঃসন্দেহে বড় চ্যালেঞ্জ। ছোট সংস্থাগুলি এ ব্যাপারে এখনও তেমন প্রস্তুত নয় বলে জানা যাচ্ছে। এই আইন চালু করা নিয়ে কোনও গোলযোগ দেখা দিলে, তার প্রভাব কিন্তু শেয়ার বাজারে পড়বে। পুরো ব্যাপারটি মানুষের সড়গড় না-হওয়া পর্যন্ত অনেক পণ্যের বিক্রিবাটার উপরও এর প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। করের হার ঘোষিত হওয়ার পরে বিভিন্ন শিল্প এখনও লাভ-ক্ষতির অঙ্ক কষতে ব্যস্ত। জুলাইয়ের আগেই মজুত ভাণ্ডার খালি করার জন্য ভাল ছাড় দিচ্ছে বেশ কিছু শিল্প। ১,০০০ টাকা পর্যন্ত তৈরি পোশাকের উপর কর বসবে ৫%। এতে খুশি বস্ত্রশিল্প।
জিএসটি, ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদ, ভারত-পাক সীমান্তে সংঘর্ষ ইত্যাদির উপর নজর রেখে চলেছে বাজার। এ সব বিষয় নিয়ে কিছুটা আশঙ্কা থাকলেও, সেনসেক্স কিন্তু ৩১ হাজার ছেড়ে নীচে নামছে না। ভাল বৃষ্টিপাত অর্থনীতিকে গতি দেবে, এই আশায় বর্ষার সঙ্গে সঙ্গেই সূচকও গুটিগুটি এগোচ্ছে।
কোন পথে অর্থনীতি
• নয়া ঋণনীতির জেরে গৃহঋণে সুদের বোঝা কমার ইঙ্গিত
• আরবিআই রেপো রেট না কমানোয় এখনই না-ও কমতে পারে ব্যাঙ্ক-জমায় সুদের হার
• ডাকঘর ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে সুদ ফিরে দেখার তারিখ ১ জুলাই
• জিএসটি চালু নিয়ে ডামাডোল দেখা দিলে জের পড়বে বাজারে
• জিনিসপত্রের বিক্রিবাটাতেও প্রভাব পড়ার আশঙ্কা
• বাজারের নজরে জিএসটি ছাড়াও বর্ষা, ব্যাঙ্কের ঋণের বোঝা, ভারত-পাক সীমান্তে সংঘাত
• সেনসেক্স আপাতত ৩১ হাজারের ঘরে
• ভাল বাজারের আশায় নতুন ইস্যু নিয়ে হাজির হচ্ছে বেশ কিছু সংস্থা
• প্রথম বার শেয়ার বাজারে পা রাখছে মিউচুয়াল ফান্ড, সাধারণ বিমা সংস্থা
বাজার ভাল থাকবে, এই আশায় নতুন ইস্যু নিয়ে হাজির হওয়ার পথে বেশ কিছু সংস্থা। প্রথম বারের জন্য বাজারে শেয়ার ছাড়তে (আইপিও) চলেছে মিউচুয়াল ফান্ড এবং সাধারণ বিমা শিল্প। গত বছরে জীবনবিমা সংস্থা হিসেবে প্রথম বাজারে এসেছিল আইসিআইসিআই প্রুডেন্সিয়াল লাইফ ইনশিওরেন্স। লগ্নিকারীরা প্রথম দিকে তেমন লাভের মুখ না-দেখলেও, সম্প্রতি এই শেয়ারের দাম ইস্যুর তুলনায় ১০০ টাকা করে বেড়েছে। এ বার আমরা বাজারে দেখতে পাব এই গোষ্ঠীরই সাধারণ বিমা সংস্থা আইসিআইসিআই লম্বার্ডকে। এ ছাড়া শেয়ার ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বিমা সংস্থা নিউ ইন্ডিয়া অ্যাশিওরেন্সও। এরা সফল হলে আশা করা যায় আগামী দিনে আরও কিছু বিমা সংস্থা শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত হবে।
সাধারণ বিমা সংস্থার পাশাপাশি, মিউচুয়াল ফান্ড শিল্প থেকে প্রথম বার বাজারে আসতে দেখা যাবে রিলায়্যান্স মিউচুয়াল ফান্ডকে। প্রথম দফায় এরা সংস্থার ১০% এবং তিন বছরে আরও ১৫% শেয়ার ছাড়তে চায়। যত বেশি শিল্প এবং সংস্থা নথিভুক্ত হয়, ততই তা বাজার ও লগ্নিকারীর পক্ষে ভাল।
আর দু’এক সপ্তাহের মধ্যে শুরু হয়ে যাবে বার্ষিক সাধারণ সভা ডাকা এবং শেয়ারে ডিভিডেন্ড ঘোষণার মরসুম। করমুক্ত হওয়ায় লগ্নিকারীদের কাছে ডিভিডেন্ডের স্বাদই আলাদা। ইনফোসিস, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের মতো বড় সংস্থার বার্ষিক রিপোর্ট ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে লগ্নিকারীদের ঘরে। কিছু দিনের মধ্যেই ডিভিডেন্ড পৌঁছতে শুরু করবে তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। লগ্নিকারীরা নজর রাখুন সব ডিভিডেন্ড অ্যাকাউন্টে ঢুকল কি না, সে দিকে। আর যাঁরা ‘ওয়ার্যান্ট’ মারফত ডিভিডেন্ড পান, তাঁদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে, পর পর সাত বছর তা না-ভাঙালে, সংশ্লিষ্ট শেয়ারই কিন্তু চলে যাবে সরকারের ঘরে, ইনভেস্টর এডুকেশন অ্যান্ড প্রোটেকশন ফান্ড বা আই ই পি এফ অ্যাকাউন্টে।