চলতি বছরে বর্ষা ভাল হবে বলে জানিয়েছে দেশের আবহাওয়া দফতর। আর এই খবরেই বুধবার জোয়ার এল শেয়ারের দামে।
ফের নজির গড়ল সেনসেক্স এবং নিফ্টি। সেনসেক্স ৩১৪.৯২ অঙ্ক বেড়ে থামল ৩০,২৪৮.১৭ অঙ্কে। নিফ্টি ৯০.৪৫ পয়েন্ট বেড়ে থিতু হল ৯,৪০৭.৩০ অঙ্কে। খাতায়-কলমে ভাল বর্ষার ইঙ্গিত থাকলেও দেশের কোনও কোনও অঞ্চলে তার পরিমাণ নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। তবে গড়ে ভাল বর্ষার পূর্বাভাসেই লগ্নিকারীরা উৎসাহিত হয়েছেন।
গত ২৬ এপ্রিল সেনসেক্স নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করে পৌঁছেছিল ৩০,১৩৩.৩৫ অঙ্কে। আর নিফ্টি গত ৪ মে ৯,৩৫৯.৯০-এ শেষ হয়ে নজির গড়েছিল। কিন্তু এ দিন পুরনো সব রেকর্ড ভেঙে সর্বকালীন নতুন উচ্চতা ছুঁয়ে ফেলে দুই সূচকই। এর ফলে ভারতে মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনও (বাজারে সমস্ত শেয়ারের মোট মূল্য) প্রায় ২ লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের কাছে চলে এসেছে।
তবে এ দিন ডলারে টাকার দাম এক ধাক্কায় পড়ে যায় ৩২ পয়সা। ফলে বিদেশি মুদ্রার বাজার বন্ধের সময়ে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৬৪.৬৩ টাকা। মূলত আমদানিকারীদের তরফে ডলারের বাড়তি চাহিদার ফলেই তার দাম বেড়ে গিয়ে দ্রুত পতন হয় টাকার।
য়াদাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন।’’ পিনাকীবাবুর কন্যা সংযুক্তা পেশায় চিকিৎসক। তিনিও থাকেন কলকাতায়।
আরও পড়ুন: হেরিটেজ লালবাতি, নাছোড় বরকতি
উল্লেখযোগ্য খবর হল, বিদেশি লগ্নি সংস্থাগুলি ফের ভারতের বাজারে শেয়ার কিনতে শুরু করেছে। বেশ কিছু দিন ধরে তারা টানা বিক্রি করেছে। মঙ্গলবার থেকেই তাদের ক্রেতার ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে বলে শেয়ার বাজার সূত্রের খবর। গত দু’দিনেই ওই সব সংস্থা ভারতের বাজারে প্রায় ১১৮২ কোটি টাকা লগ্নি করেছে।
এ দিন বাজারে প্রাণ ফেরানোর জন্য মূলত ভাল বর্ষার পূর্বাভাসই দায়ী বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ২০১৬-’১৭ আর্থিক বছরে যথেষ্ট বৃষ্টিপাত হয়েছে। ২০১৭-’১৮ সালেও ভাল বর্ষা হওয়ার পূর্বাভাস বাস্তবায়িত হলে তা বৃদ্ধির চাকায় গতি ফেরাবে বলে মনে করছে মূলধনী বাজার মহল।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বড় নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত দেশের আর্থিক ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে যে-আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছিল, তা অবশ্য পুরোপুরি সত্যি হয়নি। এ পর্যন্ত প্রকাশিত সিংহভাগ শিল্প সংস্থার ২০১৬-’১৭ আর্থিক বছরের ফলাফল আশাতীত ভাবে ভাল হয়েছে।
বাজার চাঙ্গা হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রবীণ বিশেষজ্ঞ অজিত দে বলেন, ‘‘এর উপর পরিকাঠামো ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার খরচের বহর দ্রুত বাড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মতো প্রকল্পে জোর দেওয়ার ফলে পরিকাঠামো ক্ষেত্রের সংস্থাগুলি চাঙ্গা হবে। যা শেয়ার বাজারকে চাঙ্গা করতে রসদ জোগাবে বলেই
আমার বিশ্বাস।’’
তবে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অবশ্য কেউ কেউ মনে করছেন যে, কোনও সংশোধন ছাড়াই দ্রুত বাড়ছে বাজার। তাই যে-কোনও সময়েই পতনের সম্ভাবনা রয়েছে। স্টুয়ার্ট সিকিউরিটি়জের চেয়ারম্যান কমল পারেখ বলেন, ‘‘গত চার মাসের মধ্যেই নিফ্টি প্রায় ১৭০০ পয়েন্ট বেড়েছে। সেনসেক্স বেড়েছে ৬ হাজার পয়েন্টের মতো। এই বৃদ্ধি ঘটেছে বাজারে কোনও কারেকশন ছাড়াই। তাই আমার আশঙ্কা, যে-কোনও সময়েই সংশোধনের জেরে পতন হতে পারে সূচকের।’’
অবশ্য বিশেষজ্ঞদের মধ্যে আবার অনেকেই এই আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন। যেমন অজিতবাবু বলেন, ‘‘বাজারে এক সঙ্গে বড় মাপের পতন হয়নি বটে। কিন্তু মাঝেমধ্যেই সূচক ২০০-৩০০ পয়েন্ট পড়ছে। যেহেতু শেয়ার বাজার এখন ভাল অবস্থায় রয়েছে, তাই নিট হিসাবে সূচকের গতি উপরের দিকেই আছে। এটাকে কারেকশন ছাড়া সূচকের উত্থান বলে আমি মানতে নারাজ।’’
তবে এই পরিস্থিতিতে সাধারণ ক্ষুদ্র লগ্নিকারীদের অবশ্য সাবধানে পা ফেলতে পরামর্শ দিয়েছেন প্রায় সব বিশেষজ্ঞই। অজিতবাবু বলেছেন, ‘‘বাজার যখন উঁচুতে উঠে রয়েছে, তখন লগ্নি না-করে বাজারের পতনের সময়ে তাঁদের উচিত ভাল ভাল সংস্থার শেয়ারে পুঁজি ঢালতে থাকা। এটা করতে পারলে, শেষে গিয়ে মুনাফার মুখ দেখার সম্ভাবনাই বেশি থাকবে বলে মনে করি আমি।’’