প্রথমে নোটবন্দি, তারপর তড়িঘড়ি জিএসটি চালু। জোড়া ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে এখনও জেরবার ব্যবসায়ীরা। কেন্দ্রের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে তাঁরা বলেছেন, ইতিমধ্যেই ১০ শতাংশের মতো ছোট ব্যবসায়ী ঝাঁপ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। কাজ হারাতে হয়েছে অনেককে।
নোটবন্দির ফলে ডিজিটাল লেনদেন অবশ্যই বেড়েছে। কিন্তু বড়বাজারের ছোট যন্ত্রপাতির ব্যবসায়ী এবং কনফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন্সের সভাপতি ফিরোজ আলির মন্তব্য, নোট নাকচের দাম চোকাতে হয়েছে ২৫% ব্যবসা খুইয়ে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে ছোট ব্যবসায়ীদেরই। সে প্রসঙ্গে আলি জানান, ‘‘বেশ কিছু ক্ষেত্রে একটি ক্ষেত্রের সমস্যার জের গিয়ে পড়েছে তার সঙ্গে সংযুক্ত একাধিক ক্ষেত্রে। যেমন, নোটবন্দির পরে নগদ টাকার অভাবে চাষ-আবাদ মার খেয়েছে। এর ফলে বিক্রি কমেছে টিলার বা ট্রাক্টর এবং তার যন্ত্রপাতির।’’
হোসিয়ারির ক্ষেত্রে বেচাকেনা প্রায় ৪০% কমেছে বলে অভিযোগ করেছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল হোসিয়ারি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ঠাকুরদাস চোতরানি-র। তিনি জানান, নোটবন্দির ফলে ব্যবসার যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাতে এ বারের ইদ, পুজো এবং দীপাবলির বাজারও খারাপ গিয়েছে। একই অভিযোগ এনেছেন, হগ মার্কেট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অশোক গুপ্তও।
ফেডারেশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন্সের চেয়ারম্যান মহেশ সিংহানিয়া বলেন, ‘‘নোটবন্দির পরে যে-সমস্যাটা বিশেষত ছোট ব্যসায়ীদের মুশকিলে ফেলেছে তা হল, সরবরাহ করা পণ্যের দাম পেতে আগের থেকে এখন অনেক বেশি সময় লাগছে। আমরা পণ্য বেচে পাওয়া টাকা দিয়েই নতুন মালপত্র কিনে বিক্রি করি। সমস্যা সেখানেই।’’
সমস্যা বেড়েছে গয়না শিল্পেও। স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি বাবলু দে বলেন, ‘‘নোটবন্দির পরে তো বেশ কিছু দিন ব্যবসা প্রায় ৮০% পড়ে গিয়েছিল। এখন অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। তবে সে সময়ে কাজ না-পেয়ে বেশ কিছু কারিগর পেশাই ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে দক্ষ কারিগরের কিছুটা অভাব দেখা দিয়েছে।’’
তবে গয়না কেনার ক্ষেত্রে ডিজিটাল লেনদেন উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে। কিন্তু বাবলুবাবুর অভিযোগ, ‘‘ডিজিটাল লেনদেনের খরচ বহন করতে হচ্ছে দোকানিদের। এখন অধিকাংশ ক্রেতাই ক্রেডিট কার্ডে গয়না কিনছেন। কিন্তু তাতে পেমেন্ট পেতে চার্জ হিসেবে দিতে হচ্ছে বাড়তি ১.৫% থেকে ২% টাকা।’’