ছোটর বেলা হাজার গেরো। বড়র বেলায় দরাজ হাত। এমনকী বারবার বড় সংস্থা ধার শোধ না দিয়ে পার পেলেও, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে দু’ধরনের শিল্পের প্রতি ব্যাঙ্কের বৈষম্যমূলক মনোভাব বদলায়নি বলে অভিযোগ ছোট সংস্থাগুলির। হিরে ব্যবসায়ী নীরব মোদী ও মেহুল চোক্সীর পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ককে প্রতারণার বিষয়টি সামনে আসার পরে তাই রসিকতার ছলে ছোট-মাঝারি শিল্প মহল বলছে, ‘‘এ ভাবেই জীবন চলতে থাকে।’’
ঋণ পাওয়ার সমস্যা ছোট শিল্পের বরাবরের অভিযোগ। তাদের দাবি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অল্প পুঁজি লাগে। কিন্তু অনেকে তা-ই জোগাড় করতে পারেন না। অথচ ব্যাঙ্কগুলির দরজায় দরজায় ঘুরেও সহজে সাড়া মেলে না। হাজারটা নথির পাশাপাশি ঋণের বদলে সম্পদ বন্ধক রাখতে বলা হয়।
এই শিল্পের সংগঠন ফসমির প্রেসিডেন্ট বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য ও ফ্যাকসির প্রেসিডেন্ট হিতাংশু গুহর দাবি, ১১ হাজার কোটি টাকা তো দূর অস্ত্, তাঁদের অধিকাংশেরই লাগে এক কোটিরও কম পুঁজি। অথচ তা জোগাড় করতেই জুতোর শুকতলা ক্ষয়ে যাওয়ার অবস্থা হয়। সুদও দিতে হয় বেশি। কখনও কখনও ঋণের চেয়েও বেশি টাকার সম্পদ বন্ধক রাখতে হয়। বন্ধকহীন ঋণ প্রকল্পে বন্ধক দাবি করা হয়। আবার সময়ে ধার না শোধ করলেও দ্রুত ব্যবস্থা নেয় ব্যাঙ্ক।
বিশ্বনাথবাবুর প্রশ্ন, ‘‘এই যখন অবস্থা, তখন পিএনবির এত অডিট সত্ত্বেও কী করে এত বড় প্রতারণা করতে পারলেন অভিযুক্তরা?’’ হিতাংশুবাবু রসিকতার ছলে বলেন, ‘‘ওঁদের হয়তো যোগ্যতা বেশি। তাই সহজে এত ঋণ পান।’’ তাঁর আক্ষেপ, ব্যবসা দাঁড় করাতে ছোট সংস্থাই বেশি লড়ে। কিন্তু এমন চললে তেমন বহু শিল্পোদ্যোগীই উৎসাহ হারাবেন।
এই শিল্পের জাতীয় সংগঠন ফিসমের সেক্রেটারি জেনারেল অনিল ভরদ্বাজের শুক্রবার দিল্লি থেকে ফোনে অভিযোগ, কর্মসংস্থান সবচেয়ে বেশি হয় ছোট-মাঝারি সংস্থায়। অথচ ঋণ পায় না। আর টেলিকম, কয়লা, খনিজ শিল্পের মতো ক্ষেত্রে টাকা নয়ছয় হয়। তাঁর অভিযোগ, সরকারি ব্যাঙ্কে বারবার এমন ঘটনা ঘটলেও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। রাজনৈতিক প্রভাবও তাতে বাধা দেয়। তাই পুরো ব্যাঙ্কিং পরিষেবার খোলনলচে বদল জরুরি।