অমিত মিত্র ও সুশীল মোদী
সেপ্টেম্বরে জিএসটি থেকে আয় হয়েছিল ৯৫,১৩১ কোটি টাকা। অক্টোবরে তা নেমেছে ৮৩,৩৪৬ কোটিতে। ছোট ও মাঝারি শিল্পগুলি সমস্যায় পড়েছে বলেই এই ছবি ফুটে উঠছে বলে অভিযোগ তুললেন অমিত মিত্র।
বৃহস্পতিবার ফিকি-র বার্ষিক সাধারণ সভায় পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রীর দাবি, ‘‘জিএসটি-র রাজস্ব আয়ের পরিসংখ্যান নিয়ে স্বচ্ছতা নেই। কিন্তু বাস্তব হল, এক মাসে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা আয় কমেছে। প্রক্রিয়াগত জটিলতায় ছোট-মাঝারি সংস্থাগুলি রিটার্ন ফাইল করতে পারছে না। উৎপাদনও ৪০% মার খেয়েছে।’’
রাজনৈতিক ভাবে বিজেপি নেতা তথা বিহারের অর্থমন্ত্রী সুশীল মোদী অমিতবাবুর বিপরীত মেরুতে। সম্প্রতি জিএসটি-র ভারপ্রাপ্ত কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর বৈঠক ডাকার এক্তিয়ার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সুশীল। কিন্তু এই একটি বিষয়ে তাঁরা প্রায় একমত। সুশীলেরও মতে, এই ছোট-মাঝারি শিল্পের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবস্থার সরলিকরণই বড় চ্যালেঞ্জ।
জম্মু-কাশ্মীরের অর্থমন্ত্রী হাসিব দ্রাবুর মতে, জিএসটি-র পরে ঝামেলা এড়াতে ছোট-মাঝারি সংস্থাগুলির কাছ থেকে বড় সংস্থাগুলি পণ্য বা পরিষেবা নিতে চাইছে না।
অমিতবাবুর হিসেব, জিএসটি-তে রাজ্যগুলির প্রথম চার মাসে রাজস্ব আয়ে ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ৩৯,১১১ কোটি টাকা। রাজ্যগুলি কেন্দ্রের থেকে ক্ষতিপূরণ পেয়ে যাবে। কিন্তু এর ফলে কেন্দ্রের আয় নিয়েও চিন্তার কারণ রয়েছে। তাঁর দাবি, ধরা হয়েছিল, চলতি অর্থবর্ষে ৫৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দরকার হবে। তা প্রায় ৯০ হাজার কোটিতে পৌঁছবে।
এই সংশয় থেকেই এ দিন কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এখনই জিএসটি-র আওতায় পেট্রোপণ্যকে না আনার পক্ষে সওয়াল করা হবে। সুশীল ফিকি-র সভায় বলেন, পেট্রোলিয়াম, বিদ্যুৎ ও আবাসন ক্ষেত্রকে নতুন করের আওতায় আনাই এখন লক্ষ্য। কিন্তু অমিতবাবুর যুক্তি, জিএসটি-র বাইরে থেকেই রাজ্যগুলির গড়ে ৪০% আয় হয়। জিএসটি-ব্যবস্থা স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত পেট্রোল-ডিজেলকে এর আওতায় আনা উচিত নয়। সুশীল অবশ্য মনে করিয়েছেন, পেট্রোল-ডিজেল জিএসটি-র আওতায় এলেও তাতে ২৮% হারে কর চাপতে পারে। রাজ্যগুলি বাড়তি কর চাপাতে পারে।
অমিতবাবুই কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দিল্লিতে এ দিন বৈঠক ডেকেছিলেন। কিন্তু তাঁর ডাকার এক্তিয়ার নিয়ে আগে প্রশ্ন তুলেছিলেন সুশীল। যুক্তি ছিল, জিএসটি-র পরে ওই কমিটিকে নতুন কোনও কাজ দেওয়া হয়নি। এ দিন অমিতবাবুর ডাকা বৈঠকে বিজেপিশাসিত রাজ্যের মন্ত্রীরা যোগ দেননি। তবে প্রায় সব অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিরই মন্ত্রী বা আমলারা ছিলেন। এমনকী গুজরাত, মণিপুরের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যেরও কর অফিসাররা ছিলেন। অমিতবাবু বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি তো বৈঠক পিছোতে বলেননি। তিনি গুজরাতে ভোট দিতে যাবেন বলে বৈঠকে থাকতে পারবেন না বলে চিঠি দিয়েছেন।’’
বৈঠকে সিদ্ধান্ত, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের কাছে রাজ্যের জন্য করের ভাগ বাড়াতে সওয়াল করা হবে। জিএসটি আইনে মুনাফাখোর বিরোধী ধারায় গ্রেফতারির ব্যবস্থা রাখা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তুলেছেন অমিত মিত্র।