সোনার ভাণ্ডার। মুম্বইয়ের সিদ্ধিবিনায়ক মন্দির।
আমদানির খরচ কমিয়ে অর্থনীতির হাল ফেরাতে এ বার মন্দিরের গোপন ভল্টে জমে থাকা সোনার বিপুল সম্ভারকে কাজে লাগাতে চান নরেন্দ্র মোদী। জ্বালানি ছাড়া যে পণ্য আমদানিতে সাধারণত কেন্দ্রের সবচেয়ে বেশি বিদেশি মুদ্রা (ডলার) খরচ হয়, তা হল সোনা। ভারতে সোনার চাহিদা বরাবরই বেশি। এখন বছরে তা দাঁড়িয়েছে গড়ে ৮০০ থেকে ১,০০০ টন। প্রধানমন্ত্রী চান, দেশের মন্দিরগুলির কাছে যে বিপুল সোনা গচ্ছিত আছে, তা সুদের বিনিময়ে জমা রাখুক তারা। এই সুযোগ দিয়ে মে মাসে প্রকল্প চালু হতে পারে বলেও সংশ্লিষ্ট মহলের খবর। তবে তা কতটা সফল হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে অনেকের। কারণ প্রথমত, সুদ চড়া না-হলে, মন্দিরগুলি ওই প্রকল্পে কতটা আগ্রহ দেখাবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া শক্ত। আর দ্বিতীয়ত, যাঁরা মন্দিরে সোনা দিয়েছেন, কেন্দ্রের এমন প্রস্তাবে আপত্তি আছে তাঁদের অনেকেরই।
মুম্বইয়ের সিদ্ধিবিনায়ক মন্দির, দক্ষিণ ভারতের পদ্মনাভ স্বামী মন্দির ইত্যাদিতে আজ বহু বছর ধরে সোনা দিয়ে আসছেন অনেকে। ফলে মন্দিরগুলির গোপন, সুরক্ষিত অ্যাকাউন্টে জমে উঠেছে সোনার বিপুল সম্ভার। যেমন সিদ্ধিবিনায়ক মন্দিরেই নিরাপত্তার পাশাপাশি ওই সম্পদ পাহাড়ার কারণে বসাতে হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির ক্লোজ সার্কিট টিভি। নিয়োগ করতে হয়েছে ৬৫ জন সিকিউরিটি অফিসারকে। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, সব মিলিয়ে প্রায় ৩,০০০ টন সোনা মজুত আছে এ দেশের মন্দিরগুলির ভাঁড়ারে। যার প্রায় ৬০ শতাংশই রাখা থাকে মার্কিন মুলুকের কেন্টাকিতে অবস্থিত ইউএস বুলিয়ন ডিপোজরিতে।
মোদী চান, সুদের বিনিময়ে ওই সোনা (গয়না ইত্যাদি) জমা রাখুক মন্দিরগুলি। যাতে তা গলিয়ে সোনা ব্যবসায়ীদের কাঁচামাল হিসেবে ধার দেওয়া যায়। তাতে সোনা আমদানির প্রয়োজন কমবে। গচ্চা যাবে কম বিদেশি মুদ্রা। ফলে বাণিজ্য ঘাটতি এবং চলতি খাতে বিদেশি মুদ্রার লেনদেনে ঘাটতি (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ডেফিসিট)— দু’টিতেই রাশ টানা সহজ হবে কেন্দ্রের পক্ষে।
সোনার এমন বড় ভাণ্ডার থাকা বেশ কয়েকটি মন্দির প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছে, সুদের বিনিময়ে সোনা জমা রাখার প্রকল্পে তাদের আপত্তি নেই। তবে সেই সুদের হার কী হবে, তার উপরই পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে বলে মনে করে তারা। যেমন, সিদ্ধিবিনায়ক মন্দিরের অছি পরিষদের চেয়ারম্যান নরেন্দ্র মুরারী রাণে বলেন, ‘‘সরকারি বা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে নিরাপদে এবং ভাল সুদের বিনিময়ে সোনা রাখার প্রকল্প যদি চালু হয়, তাতে আমরা খুশিই হব।’’ একই মত অন্যান্য মন্দিরগুলিরও।
উল্লেখ্য, এর আগে ১৯৯৯ সালেও সোনা জমা রাখার প্রকল্প চালু হয়েছিল। তাতে ০.৭৫ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ সুদ দিয়েছিল স্টেট ব্যাঙ্ক। কিন্তু তা তেমন ভাবে জনপ্রিয় হয়নি। এ পর্যন্ত জমা পড়েছে মাত্র ১৫ টন সোনা। এ বারও মন্দিরগুলি গোড়াতেই জানিয়েছে, সুদ ওই তুলনায় বেশ খানিকটা বেশি হলে তবেই একমাত্র প্রকল্পে সামিল হওয়ার কথা ভাববে তারা।
সমস্যা আসতে পারে মন্দিরে সোনাদানকারীদের কাছ থেকেও। দেশের বিভিন্ন মন্দিরে প্রায় ২০০ কেজি সোনা দেওয়া এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীর উষ্মা, ‘‘আমি তো সোনা দেবতার কাছে দিয়েছি। মন্দির কর্তৃপক্ষের কাছে নয়।’’ ফলে বিগ্রহকে দেওয়া অলঙ্কার গলানোর পরিকল্পনায় অনেকে আপত্তি তুলতে পারেন বলেও মনে করা হচ্ছে।
এই সমস্ত সমস্যা টপকে মোদী-সরকার মন্দিরে জমে থাকা সোনার পাহাড়কে অর্থনীতির চাকা ঘোরানোয় কাজে লাগাতে পারে কি না, সে দিকেই এখন নজর সকলের।