রাজ্যের উদ্যোগ পুঁজি তহবিল চালু হতে বছর গড়াতে পারে

বছরের গোড়ার দিকে সিডবি-র সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে বিশেষ ‘ভেঞ্চার ক্যাপিটল’ বা উদ্যোগ পুঁজি তহবিল গড়ার কথা জানিয়েছিল রাজ্য। কিন্তু সেবি-র অনুমোদন না-পেলে তা চালু করা সম্ভব ছিল না।

Advertisement

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:১৮
Share:

বছরের গোড়ার দিকে সিডবি-র সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে বিশেষ ‘ভেঞ্চার ক্যাপিটল’ বা উদ্যোগ পুঁজি তহবিল গড়ার কথা জানিয়েছিল রাজ্য। কিন্তু সেবি-র অনুমোদন না-পেলে তা চালু করা সম্ভব ছিল না। অবশেষে চলতি সপ্তাহে সেই অনুমোদনের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি-র কাছে আবেদন জানানোর প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করেছে রাজ্য। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, অনুমোদন পেয়ে ওই তহবিল কার্যকর হতে এই বছর গড়িয়ে যাওয়াব সম্ভাবনাই বেশি।

Advertisement

শিল্পের অভাবে রাজ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে। বড় শিল্প কার্যত নেই। তাই ছোট ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগকেই উৎসাহ দিতে চায় রাজ্য। সেই লক্ষ্যে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট কলকাতার (আইআইএমসি)-র সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছিল রাজ্যের ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতর। ইতিমধ্যেই ওই দফতরে জেলা কেন্দ্রগুলির কর্মী-অফিসারদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে আইআইএমসি। সার্বিক ভাবে দফতরের ‘নলেজ পার্টনার’ হিসেবেও কাজ করছে আইআইএমসি।

পাশাপাশি, ভর্তুকির সুবিধার সঙ্গে সঙ্গে উদ্যোগ পুঁজি ঢালারও পরিকল্পনা করে দফতর। এই মুহূর্তে ছোট ও মাঝারি শিল্পের ক্ষেত্রে উদ্যোগ পুঁজির চাহিদা বাড়ছে। তাতে এক দিকে যেমন ব্যাঙ্কঋণের উপর নির্ভরতা কমছে, তেমনই অংশীদারি (ইকুইটি) হাতে নিয়ে উদ্যোগ পুঁজি সংস্থাগুলির লগ্নি বাড়ার পথও সুগম হচ্ছে। সেই পথে হেঁটেই সিডবি-র সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ২০০ কোটি টাকার ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল এমএসএমই ভে়ঞ্চার ক্যাপিটল ফান্ড’ গঠন করার কথা দীর্ঘ দিন আগেই জানিয়েছিল ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতর। এর মধ্যে রাজ্য সরকার দেবে ১০০ কোটি টাকা। ৩০ কোটি টাকা দেবে সিডবি। বাকি টাকা বিভিন্ন লগ্নিকারী সংস্থা বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তোলার দায়িত্ব সিডবি-র। কিন্তু এই তহবিল গড়ার জন্য সেবি-র অনুমোদন জরুরি।

Advertisement

সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, সেই অনুমোদনের জন্য আবেদন জানাতেই অনেকটা সময় চলে গিয়েছে। ফলে তহবিল গড়ে তা কার্যকরের ক্ষেত্রেও দেরি হচ্ছে। যদিও সরকারি তরফের পাল্টা দাবি, আবেদন জানানোর আগে আরও জরুরি কিছু কাজ থাকে। সেগুলি সম্পূর্ণ না-করে আবেদন জানানো যায় না। সেই কাজগুলি ধাপে ধাপে করা হয়েছে। যেমন, তহবিল গড়ার ব্যাপারে রাজ্য সরকার ও সিডবি-র পরিচালন পর্ষদ সায় দিয়েছে। পাশাপাশি একটি ওয়েবসাইটও চালু হয়েছে, যেটি শিল্প সংস্থা ও লগ্নিকারী সংস্থার মধ্যে সমন্বয় গড়ে তুলবে।

কী ভাবে কাজ করবে এই তহবিল? ছোট-মাঝারি শিল্প দফতর এবং আইআইএমসি সূত্রের খবর, তহবিলের ৮০% বিভিন্ন ছোট বা মাঝারি শিল্প সংস্থায় ‘ইকুইটি’ হিসেবে লগ্নি করা হবে। কিন্তু কোন কোন সংস্থা সেই লগ্নি পাবে তা খতিয়ে দেখতে আলাদা ‘ইনভেস্টমেন্ট কমিটি’ গঠন করা হবে। সেখানে রাজ্য, সিডবি, আইআইএমসি, এবং শিল্পমহলের প্রতিনিধিরা থাকবেন। রাজ্যের ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতরের সচিব রাজীব সিংহ জানিয়েছেন, শীঘ্রই সেই কমিটি তৈরি করে আগামী মাসের মাঝামাঝি তার প্রথম বৈঠক ডাকার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।

‘স্টার্ট আপ’ সংস্থাতেও এই তহবিল থেকে লগ্নি করা হবে। আইআইএমসি-র শিক্ষক কথা ‘ইনোভেশন পার্ক’-এর ডিরেক্টর অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি এই লগ্নি পাওয়ার যোগ্য কি না, তা খতিয়ে দেখবে আইআইএমসি-র নিজস্ব কমিটি। সেই পরীক্ষায় উতরোলে ওই সেন্টারের সুবিধাও মিলতে পারে।

যদিও অনেকেরই বক্তব্য, সরকারি অর্থ এ ভাবে কোনও সংস্থায় ঢালার পরে যদি সংস্থাটি না-চলে, তা হলে সেই অর্থের অপচয় হবে। বিশেষ করে যেখানে ‘স্টার্ট আপ’ সংস্থাগুলির বেশিরভাগই শেষ পর্যন্ত আর ব্যবসা চালাতে না-পেরে মুখ থুবড়ে পড়ে। এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্তদের পাল্টা দাবি, উদ্যোগ পুঁজির অনেক সুবিধাও রয়েছে। এটি ব্যাঙ্কঋণের উপর নির্ভরতা কমায়। আর সার্বিক ভাবে শিল্পোদ্যোগে উৎসাহ দেওয়াই এই তহবিলের মূল উদ্দেশ্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন