গুদাম কম, উধাও চেকপোস্ট

সরবরাহের খরচ কমবে জিএসটি-তে

রাজ্যের বাণিজ্য কর দফতরের সিনিয়র জয়েন্ট কমিশনার খালেদ আনোয়ার বলেন, এখন যে-রাজ্যে পণ্য তৈরি হচ্ছে, সেখান থেকে সরাসরি ভিন্ রাজ্যে ডিস্ট্রিবিউটর বা ক্রেতাদের কাছে তা সরবরাহ করতে পারবে উৎপাদনকারী সংস্থা।

Advertisement

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৭ ০৪:৩১
Share:

শম্বুক-গতি: লম্বা লাইন। দীর্ঘ অপেক্ষা। আশা এই ছবি বদলের।

জিএসটি-জমানায় শুধু যে রাজ্যগুলির মধ্যে চেকপোস্ট উধাও হয়ে যাচ্ছে, তা নয়। সেই সঙ্গে রাজ্যে-রাজ্যে গুদাম চালু রাখার চক্কর থেকেও মুক্তি পাওয়ার কথা উৎপাদনকারী সংস্থাগুলির। সেই কারণে সরকারি কর্তা ও বিশেষজ্ঞদের আশা, নতুন করের দৌলতে সার্বিক ভাবেই কমবে পণ্য সরবরাহের খরচ। যার প্রভাব পড়ার কথা পণ্যের দামে। তবে ক্রেতাদের একাংশের অভিযোগ, জিএসটি-র বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। ‘সেই সুযোগে’ নতুন করের দোহাই দিয়ে চাল-ডাল-নুন-তেলেরও দাম বাড়াচ্ছেন অনেক দোকানি।

Advertisement

রাজ্যের বাণিজ্য কর দফতরের সিনিয়র জয়েন্ট কমিশনার খালেদ আনোয়ার বলেন, এখন যে-রাজ্যে পণ্য তৈরি হচ্ছে, সেখান থেকে সরাসরি ভিন্ রাজ্যে ডিস্ট্রিবিউটর বা ক্রেতাদের কাছে তা সরবরাহ করতে পারবে উৎপাদনকারী সংস্থা। তার জন্য সর্বত্র গুদাম চালু ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বইতে হবে না। ফলে সব মিলিয়ে সরবরাহ খরচ কমার কথা উৎপাদনকারী সংস্থার।

জিএসটি বিশেষজ্ঞ তথা বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্সের পরোক্ষ কর বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান তিমিরবরণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ দেশে শুধু পণ্য সরবরাহেই খরচ পড়ে বিক্রির অঙ্কের প্রায় ৮%। উন্নত দেশে যা ৪ শতাংশের মতো। জিএসটি জমানায় এই খরচ কমবে। যার প্রভাব পণ্যের দামেও পড়ার কথা।’’

Advertisement

কেন কমবে সরবরাহ খরচ?

এর পিছনে মূলত দু’টি কারণ খুঁজে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা— প্রথমত, আগে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে পণ্য নিয়ে যেতে হলে, তার উপর কেন্দ্রীয় বিক্রয় কর (সিএসটি) চাপত। যা দিতে হত তা কিনতে যাওয়া ডিস্ট্রিবিউটর বা ক্রেতা সংস্থাকে। পরে অন্য রাজ্যে নিয়ে গিয়ে ফের কর গুনে সেই পণ্য বেচলেও সিএসটি-র টাকা (ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট হিসেবে) ফেরত পাওয়া যেত না। তাই ডিস্ট্রিবিউটররা উৎপাদনকারী সংস্থাকে বলত, ডিস্ট্রিবিউটরদের রাজ্যের গুদাম থেকেই পণ্য সরবরাহ করতে। যাতে পণ্যের উপর গোনা রাজ্যভিত্তিক ভ্যাট ইনপুট ক্রেডিট হিসেবে ফেরত পাওয়া যায়। এই কারণে উৎপাদনকারী সংস্থাকে বিভিন্ন রাজ্যে গুদাম তৈরি করতে হত। খরচ করতে হত তা পরিচালনার জন্যও। কিন্তু জিএসটি-জমানায় এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে পণ্য নিয়ে গেলে প্রথমে গুনতে হয় আইজিএসটি। কিন্তু পরে বিক্রেতার রাজ্যে নিয়ে গিয়ে সিজিএসটি এবং এসজিএসটি গুনে বিক্রির সময়ে ফেরত মেলে আগের করের টাকা। তাই রাজ্যে-রাজ্যে গুদামের খরচ আর না লাগারই কথা।

দ্বিতীয়ত, জিএসটিতে চেকপোস্ট ব্যবস্থা উঠে যাওয়ায় পণ্য সরবরাহে সময় নষ্ট কমবে। সঙ্গে কমবে খরচও।

আগে এক রাজ্য থেকে পণ্য নিয়ে অন্য রাজ্যে ঢুকতে গেলে বহু সময় নষ্ট হত চেকপোস্টে। নথি পরীক্ষার জন্য ট্রাকের লম্বা সারি ও অনন্ত অপেক্ষাই ছিল চেনা দৃশ্য। জিএসটিতে এই ছবিও বদলানোর কথা। আনোয়ার মনে করেন, সরবরাহ খরচ কমার প্রভাব পণ্যের দামে পড়বে। তিমিরবাবুর মতে, সুবিধা মিলবে রফতানিতেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন