সুব্রত রায়।— ফাইল চিত্র।
জামিনের টাকা জোগাড়ের একের পর এক চেষ্টা মাঠে মারা গিয়েছে। ফলে প্রায় দেড় বছর হতে চলল তিহাড় জেলেই পড়ে আছেন সহারা-কর্তা সুব্রত রায়। এই পরিস্থিতিতে সুব্রতবাবুর আর্জি ছিল, মানবিকতার খাতিরে মুক্তি দেওয়া হোক তাঁকে। কারণ, জেলের কুঠুরিতে বন্দি অবস্থায় তাঁর পক্ষে জামিন, লগ্নিকারীদের ফেরানো ইত্যাদি খাতে ৩৬,০০০ কোটি টাকার ব্যবস্থা করা মুশিকল। জবাবে সোমবার সুপ্রিম কোর্ট রীতিমতো কড়া ভাষায় জানাল, ‘‘নিজের দোষেই জেলে আছেন আপনি।’’
এ দিন সহারার তরফে আইনজীবী কপিল সিব্বল তাঁর আবেদনে বলেন, সুব্রতবাবুকে এ ভাবে বন্দি করে রাখা আদালতের পক্ষে ঠিক হয়নি। কারণ, তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার যে-মামলা চলছে তা এখনও শেষ হয়নি। ফলে তিনি আদপে দোষী কি না সেটাই প্রমাণিত হয়নি। পাশাপাশি, অন্য কোনও বড় ব্যবসায়ী গোষ্ঠীকে এর আগে সহারার মতো এতটা ভুগতে হয়নি বলে অভিযোগ করেন সিব্বল।
এ দিন সিব্বলের কোনও যুক্তিই অবশ্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সামনে ধোপে টেকেনি। উল্টে টি এস ঠাকুরের নেতৃত্বাধীন আদালতের বেঞ্চ বলে, ‘‘সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, সুব্রতবাবু আদালতে বলছেন তাঁর ১ লক্ষ ৮৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ আছে। অথচ যখন তার মাত্র এক পঞ্চমাংশ দিতে বলা হচ্ছে, তখন তিনি তা মেটাতে পারছেন না।’’ লগ্নিকারীদের মেটানোর মতো বিপুল সম্পত্তি গোষ্ঠীর ঝুলিতে রয়েছে বলে আদালতে দাবি করার পরেও কেন সুব্রতবাবু নিজের স্বাধীনতা বলি দিয়ে জেলে থাকছেন ও সম্পদের কোনও অংশই বেচছেন না, এই পাল্টা প্রশ্নই তুলেছে শীর্ষ আদালত। এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতেই জেলে থাকার জন্য খোদ সুব্রতবাবুকেই দায়ী করেছে ক্ষুব্ধ বিচারপতিদের বেঞ্চ।
লগ্নিকারীদের থেকে বেআইনি ভাবে তোলা টাকা ফেরত না-দেওয়া ও সেই মামলায় নির্দেশ সত্ত্বেও সুপ্রিম কোর্টে হাজির না-হয়ে আদালত অবমাননার অভিযোগে গত বছর গ্রেফতার হন সুব্রতবাবু। বিচারাধীন বন্দি হিসেবে ঠাঁই হয় তিহাড়ে। পরে জামিন হিসেবে ১০ হাজার কোটি টাকা জমার শর্তে সহারা-কর্তার মুক্তিতে আদালত রাজি হলেও, তা এখনও জমা দিতে পারেনি সংস্থা।
বারবারই জেলে বসে সম্পত্তি বিক্রির অসুবিধার কথা তুলে সুব্রতবাবুর মুক্তির আর্জি জানিয়ে আসছে সহারা। এই সমস্যার সমাধান হিসেবে এ দিন সুপ্রিম কোর্ট রিসিভার নিয়োগের প্রস্তাব দিলে, তা মানতে রাজি হননি সিব্বল। টাকা জোগাড়ের জন্য আগেই অবশ্য সহারার সম্পত্তি কিনতে ইচ্ছুকদের সঙ্গে তিহাড়েই সুব্রতবাবুর আলাপ-আলোচনার ব্যবস্থা করে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। যার মেয়াদ শেষ ১৬ অগস্ট।