চুক্তি: সংযুক্তি নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছেন হিসিঙ্গার। জার্মানির এসেন-এ। ছবি: এএফপি।
চাহিদায় ভাটা। অথচ উপচে পড়ছে জোগান। এই অবস্থায় ইউরোপে ইস্পাত ব্যবসায় টিকে থাকতে পরস্পরের হাত ধরা ছাড়া যে উপায় নেই, সেই ইঙ্গিত বারবারই দিচ্ছিল দুই সংস্থা। এ বার সেই দীর্ঘ আলোচনার ফসল কুড়িয়ে যৌথ উদ্যোগে সামিল হওয়ার কথা ঘোষণা করল ভারতের ইস্পাত সংস্থা টাটা স্টিল ও জার্মানির থাইসেনক্রুপ। যার হাত ধরে তৈরি হবে ইউরোপের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইস্পাত সংস্থা। আর্সেলরমিত্তলের পরেই। তবে এই সংযুক্তির দরুন খরচ কমানোর পথে হাঁটবে তারা। যার জেরে ছাঁটাই হতে পারেন ৪,০০০ জন পর্যন্ত কর্মী।
টাটারা জানিয়েছে, দুই সংস্থা ইতিমধ্যেই যৌথ উদ্যোগ ‘থাইসেনক্রুপ টাটা স্টিল’ তৈরির জন্য সমঝোতাপত্র সই করেছে আমস্টারডামে। নেদারল্যান্ডসের যে শহর হবে তাদের সদর দফতর। যৌথ উদ্যোগে দু’পক্ষের হাতেই থাকবে ৫০% করে অংশীদারি। সংস্থার বার্ষিক ব্যবসা দাঁড়াবে ১৫০০ কোটি ইউরো (প্রায় ১,১৫,০০০ কোটি টাকা)। এর ছাদের তলায় কাজ করবেন প্রায় ৪৮ হাজার কর্মী। বছরে ফ্ল্যাট স্টিল রফতানির পরিমাণ ছোঁবে প্রায় ২.১০ কোটি টন।
মুম্বইয়ে ওই যৌথ উদ্যোগের কথা ঘোষণা করে টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন জানান, এই সংযুক্তির হাত ধরে আগামী পাঁচ বছরে দ্রুত ব্যবসা বাড়ানোর সুযোগ পাবে টাটা স্টিল। টিকে থাকতে পারবে ইউরোপের ইস্পাত বাজারে।
অন্য দিকে, এসেন-এ সাংবাদিক সম্মেলন করেন থাইসেনক্রুপের চিফ এগ্জিকিউটিভ হেনরিখ হিসিঙ্গার-সহ অন্যান্য শীর্ষ কর্তারাও। হিসিঙ্গারের দাবি, ইউরোপীয় ইস্পাতের বাজারে বাড়তি উৎপাদনের হাত ধরে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, তা সমাধানের লক্ষ্যেই টাটা স্টিলের সঙ্গে এই সংযুক্তির সিদ্ধান্ত। কারণ, এই সমস্যা থেকে বেরোনোর রাস্তা কারও পক্ষেই একা খোঁজা সম্ভব ছিল না। তার উপর চিনের মতো দেশ থেকে সস্তার আমদানি, নির্মাণ শিল্পের ঝিমিয়ে পড়া সেই সমস্যা আরও বাড়িয়ে দেয়।
উল্লেখ্য, এক দিকে লোকসানে নাজেহাল হয়ে ব্রিটেনে পোর্ট ট্যালবট বাদে ইস্পাত ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ। অন্য দিকে জার্মান বহুজাতিক থাইসেনক্রুপের ইউরোপীয় ইস্পাত ব্যবসার সঙ্গে নিজেদের কর্মকাণ্ডকে মেশানোর প্রয়াস। ইউরোপের ব্যবসা ঢেলে সাজার মাধ্যমে নিজেদের যাবতীয় লোকসান ঝেড়ে ঘুরে দাঁড়াতে এ ভাবেই দুই সমান্তরাল পথে নিজেদের ঘুঁটি সাজাচ্ছিল টাটা স্টিল। তার পরে যার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে এক পাউন্ডে তারা ইউরোপে ইস্পাতের রড, রেল ইত্যাদি তৈরির ব্যবসা বেচতে রাজি হয়েছিল ব্রিটেনেরই লগ্নি সংস্থা গ্রেবুল ক্যাপিটালকে। ফলে ব্রিটেনে ব্যবসার কমিয়ে আনার পরে এ বার জার্মান সংস্থাটির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগেই ইউরোপে ছন্দে ফেরার চেষ্টায় টাটারা।
নতুন পথে
থাইসেনক্রুপ পরিচিতি
• জার্মান বহুজাতিক, বিশ্ব জুড়ে শাখার সংখ্যা ৬৭০
• বিশ্বে ইস্পাত তৈরিতে অন্যতম বড় সংস্থা
• ১৮১১ সালে তৈরি ক্রুপ ও ১৮৯১-এ তৈরি থাইসেন এজি মিশে যায় ১৯৯৯ সালে। গঠিত হয় থাইসেনক্রুপ
• তৈরি পণ্যের তালিকায় ইস্পাত, স্টেনলেস স্টিল পণ্য, গাড়ি, জাহাজের অংশ, লিফ্ট ইত্যাদি
• মোট সম্পদ ৩,৫০০ কোটি ইউরো বা ২,৭৪,৬৮০ কোটি টাকা
• মুনাফা ২৯.৬০ কোটি ইউরো বা ২৩২৩ কোটি টাকা
• কর্মী সংখ্যা ১,৫৬,৪৮৭
জোটের পরে
• উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ করার আশা টাটা স্টিলের
• সদর দফতর নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে
• প্রায় ৪ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা