সম্ভাবনা দেখলে রাজ্যে ফের লগ্নিতে রাজি টাটা

টাটা গ্লোবাল বেভারেজেস-এর বার্ষিক সভায় গত বছর বলেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রতি টাটা গোষ্ঠীর বৈষম্যমূলক আচরণের প্রশ্নই নেই। তাঁরা লগ্নি করবেন ব্যবসায়িক সম্ভাবনার ভিত্তিতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৬ ০২:০৬
Share:

শহরে সাইরাস মিস্ত্রি। —নিজস্ব চিত্র।

টাটা গ্লোবাল বেভারেজেস-এর বার্ষিক সভায় গত বছর বলেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রতি টাটা গোষ্ঠীর বৈষম্যমূলক আচরণের প্রশ্নই নেই। তাঁরা লগ্নি করবেন ব্যবসায়িক সম্ভাবনার ভিত্তিতে। বুধবার একই মঞ্চ থেকে ফের সেই সুরেই টাটা গোষ্ঠীর কর্ণধার সাইরাস মিস্ত্রি বললেন, বিনিয়োগের সুযোগ এলে রাজ্যে টাকা ঢালার কথা ভাববেন টাটারা, তা রাজনীতির ছবি যাই হোক না কেন। তবে সরাসরি সিঙ্গুর প্রসঙ্গে এ বারও মুখ খোলেননি তিনি।

Advertisement

সদর দফতর কলকাতায় হওয়ায় প্রতি বছরই টাটা গ্লোবাল বেভারেজেস (টিজিবি)-এর বার্ষিক সভা হয় এই শহরে। ফলে সিঙ্গুরে টাটাদের প্রকল্প নিয়ে জটের পর থেকেই সংস্থার বার্ষিক সভাতেও সে প্রসঙ্গ ওঠে। সিঙ্গুর পরবর্তী অধ্যায়ে রাজ্যে তাঁদের ভবিষ্যৎ লগ্নির সম্ভাবনা নিয়ে শেয়ারহোল্ডারদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হত রতন টাটাকেও।

এ দিনও সেই একই চিত্র। রাজ্য নিয়ে তাঁদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চান সংস্থার কয়েক জন শেয়ারহোল্ডার। টাটাদের এ রাজ্যে লগ্নির আর্জি জানিয়ে এক শেয়ারহোল্ডারের মন্তব্য, ‘‘চাণক্য বলে গিয়েছেন, রাজনীতির সঙ্গে শিল্প বা ব্যবসার কোনও যোগ থাকা উচিত নয়। রাজনৈতিক নেতা বা দল আসবে, যাবে। কিন্তু ব্যবসা বা লগ্নি তাতে ব্যাহত হওয়ার কথা নয়।’’

Advertisement

টাটা সন্স-এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেওয়ার পরে প্রথম দু’বছর টিজিবি-র সভায় পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে শেয়ারহোল্ডারদের এ ধরনের প্রশ্ন কার্যত এড়িয়ে গিয়েছিলেন মিস্ত্রি। গত বছরই এ নিয়ে কিছুটা মুখ খোলেন তিনি। শেয়ারহোল্ডারদের প্রশ্নের জবাবে জানান, এ রাজ্যে লগ্নির ক্ষেত্রে তাঁদের তরফে বিরূপ ধারণার বশবর্তী হওয়ার প্রশ্নই নেই। বস্তুত গত কয়েক বছরের চেয়ে এ বার কিছুটা খোশমেজাজেই ছিলেন সাইরাস। এক শেয়ারহোল্ডারের প্রশ্ন ছিল, ‘‘সংস্থার বার্ষিক রিপোর্টে তাঁর হাসি মুখের ছবি থাকলেও কেন বার্ষিক সভায় তাঁকে তেমন দেখা যায় না?’’ উত্তরে হেসেই তিনি বলেন, ‘‘আচ্ছা, সেটাই হবে।’’

সংস্থার অরাজনৈতিক অবস্থান প্রসঙ্গে সাইরাস বলেন, ‘‘আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি, টাটা গোষ্ঠী সম্পূর্ণ ভাবে অরাজনৈতিক। আমরা রাজনীতিতে অংশ নিই না।’’ এর পরে তিনি পশ্চিমবঙ্গে লগ্নির প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। সাইরাসের দাবি, টাটাদের হৃদয়ে ও তাঁদের বিনিয়োগের ইতিহাসে পশ্চিমবঙ্গের বিশেষ জায়গা রয়েছে। তাঁদের ব্যবসায়িক মানচিত্রেও সব সময়েই পশ্চিমবঙ্গ রয়েছে।

তবে গত বারের সুরেই এ দিন তিনি বলেন, ‘‘লগ্নির সুযোগ তৈরি হতে হবে। রাজনৈতিক পরিবেশ যাই হোক, সেটা হলে আমরা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেব।’’ এর পর অন্য এক শেয়ারহোল্ডারের প্রশ্নের জবাবেও তিনি জানান, লগ্নির সুযোগ এলে তখন সিদ্ধান্ত নেবেন টাটারা।

উল্লেখ্য, গত বছরও তিনি বলেছিলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ বা যে-কোনও রাজ্যে লগ্নির সিদ্ধান্তই ব্যবসায়িক হিসেব কষে হয়। এখানেও টাটা গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থা লগ্নি করেছে তাদের বাণিজ্যিক চাহিদা অনুযায়ী।’’ পাশাপাশি, উদাহরণ হিসেবে টেনে এনেছিলেন টাটা গোষ্ঠীর তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টিসিএস-এর রাজ্যে প্রকল্প চালুর কথা। বাম আমলে এই লগ্নির কথা ঘোষণা করা হয়েছিল।

গত বারের মতো এ দিনও সিঙ্গুর প্রসঙ্গ অবশ্য এড়িয়ে গিয়েছেন সাইরাস। শেয়ারহোল্ডারদের এ নিয়ে প্রশ্নের কোনও আলাদা জবাব দেননি তিনি। এক জনের প্রশ্ন ছিল, আদালতের বাইরে সিঙ্গুর বিতর্ক মেটানো নিয়ে কোনও ভাবনা-চিন্তা রয়েছে কি না তাঁদের। উত্তর দেননি তিনি। পরে এ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবেও মন্তব্য করেননি। উল্লেখ্য, সিঙ্গুর মামলা এখনও সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন।

বার্ষিক সভায় আদান-প্রদানের ধরনেও স্বকীয়তার পরিচয় রাখেন সাইরাস মিস্ত্রি। শেয়াহোল্ডারদের সব প্রশ্ন শেষ হলে চেয়ারম্যান হিসেবে জবাবি ভাষণ দিতেন রতন টাটা। এ দিন সাইরাস কয়েক জন শেয়ারহোল্ডারের প্রশ্ন শোনার পরেই প্রথম দফায় সেগুলির উত্তর দেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও কিছু শেয়ারহোল্ডারকে বলার সুযোগ দেন তিনি। তার পর ফের সেই সব প্রশ্নের জবাব দেন।

বার্ষিক সভা শেষে সামান্য হলেও কিছুক্ষণ সময় মঞ্চের সামনেই আলাপচারিতায় কাটাতেন রতন টাটা। সাংবাদিকদের প্রশ্ন শুনে উত্তরও দিতেন। সাইরাস এত দিন সে পথে হাঁটেননি। এ বার অবশ্য সভার পরে মঞ্চ থেকে নেমে এসে একজনকে টিজিবি-র বার্ষিক প্রতিবেদনের উপর অটোগ্রাফ দেন। কয়েক জনের ছবি তোলার আর্জিও মেটান। তবে রতন টাটা-র মতো সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেননি তিনি। স্মিত হেসে ‘ধন্যবাদ’ বলে এড়িয়ে গিয়েছেন।

জিএসটি প্রসঙ্গে। সভায় সাইরাস জানান, পণ্য-পরিষেবা কর চালু হলে সাময়িক ভাবে গোড়ায় অন্য পণ্যের মতোই চায়ের দামও বাড়তে পারে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এই করের সুবিধা মিলবে। পাশাপাশি, চিনে টিজিবি-র ব্যবসা ঢেলে সাজার ইঙ্গিত দেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন