—প্রতীকী ছবি।
আশঙ্কাই সত্যি হল। টাকার দাম কমতে কমতে পেরিয়ে গেল ৯০ টাকার গণ্ডি। ডলারের নিরিখে ধারাবাহিক ভাবে পতনের ফলে বুধবার টাকার দাম কমে দাঁড়ায় ৯০.১১ টাকা। বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে স্থিতিশীল হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই টাকার। বিশ্ব জুড়ে বিনিয়োগকারীরা ভারতীয় বাজার থেকে জমা পুঁজি তুলে নেওয়ার ফলে নজিরবিহীন ভাবে তলানিতে ঠেকেছে ভারতীয় মুদ্রার দর। বেশির ভাগ দেশেরই স্থানীয় মুদ্রার বিপরীতে ডলার শক্তিশালী হওয়ার কারণে কয়েক সপ্তাহ ধরেই এই প্রবণতা দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার টাকার দর এক ডলারের বিপরীতে ৪২ পয়সা নেমে থিতু হয়েছিল ৮৯.৯৫ টাকায়। বুধবার বাজার খোলার পর সকাল ১০টা নাগাদ ডলারের নিরিখে ১৫ পয়সা কমে যায় দাম। টাকার দাম সর্বকালের সর্বনিম্ন হয়েছে বুধবার। টাকার দাম নিম্নগামী কেন? শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে বাণিজ্য, অর্থনীতি-সহ নানা কারণে কেউ বেশি দিন বিনিয়োগ ধরে রাখতে সাহস পাচ্ছেন না। গোদের উপর বিষফোড়ার মতো যোগ হয়েছে বিশ্ব বাজারের টালমাটাল পরিস্থিতি। অর্থনীতিবিদদের একাংশের মতে টাকার পতন কোনও আশ্চর্য ঘটনা নয়। তবে পতনের গতি অপ্রত্যাশিত।
দুর্বল টাকার কারণে রফতানি থেকে আয় কমছে। আমদানি খরচ বাড়াচ্ছে তলানিতে ঠেকা টাকার দাম। বিশেষত আমদানি ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। দুর্বল টাকার কারণে সমস্যায় অপরিশোধিত তেল, ইলেকট্রনিক্স এবং শিল্প পণ্য। বিদেশি ঋণপ্রাপ্ত সংস্থাগুলির ঋণ পরিশোধের খরচ বেড়ে গিয়েছে। এতে বিপাকে পড়তে পারে দেশীয় অর্থনীতি। আর্থিক ক্ষেত্রে বেশ কিছু অনিশ্চয়তার প্রভাব পড়ছে শেয়ার ও মুদ্রায়। ঘাটতিকে লক্ষ্যের মধ্যে বেঁধে রাখার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে পারে কেন্দ্রও। ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তি নিয়ে কোনও ঘোষণা না হওয়ার ফলেও টাকার মূল্য কমছে। বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি ভারতে শেয়ার বিক্রি করে ডলারে বিনিয়োগ করতে উৎসাহী। ফলত শেয়ার বাজারের সূচকও নিম্নমুখী। বিদেশি বিনিয়োগ ভারতের বাজার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টাকার দামকেও টেনে নীচের দিকে নামিয়ে আনছে।
বাজারের হাল দেখে আর্থিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের হস্তক্ষেপের দাবি তুলেছেন। টাকার দুর্বলতা নিয়ে কয়েক দিন আগে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর সঞ্জয় মলহোত্র জানিয়েছিলেন, বাজারের জোগান এবং চাহিদার অঙ্কই কারণ। তাঁরা মুদ্রার দামে হস্তক্ষেপ করতে চান না। কিন্তু পরিস্থিতি সঙ্গিন হওয়ায় এ বার রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মত অর্থনীতিবিদদের একাংশের।