চাহিদা চড়া, নতুন ব্যবস্থায় টান জোগানেই

বিক্রেতাদের অভিযোগ, রাজ্য নিজস্ব মদ নিগম গড়ায় নামী-দামি হুইস্কি, রাম, বিয়ার ইত্যাদির জোগান তলানিতে ঠেকছে। ফলে চাহিদা চড়া থাকলেও সরবরাহে টান পড়ায় মার খাচ্ছে ব্যবসা। কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা আঙুল তুলছেন নিগম-জমানায় মাথা তোলা নানা জটিলতার দিকে। যা বাধা হচ্ছে লাভের পথে।

Advertisement

গার্গী গুহঠাকুরতা

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৫০
Share:

উৎসবের মরসুমে চাহিদা তুঙ্গে এ বারও। কিন্তু তা মেটানোর জন্য ভারতে তৈরি বিদেশি মদের (আই এম এফ এল) জোগান বাড়ানো যাচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলল সংশ্লিষ্ট মহল।

Advertisement

এমনিতে এগুলি ভিন্‌ রাজ্য থেকে আনার কার্যত কোনও নীতি নেই রাজ্যের। কিন্তু বিক্রেতাদের অভিযোগ, রাজ্য নিজস্ব মদ নিগম গড়ায় নামী-দামি হুইস্কি, রাম, বিয়ার ইত্যাদির জোগান তলানিতে ঠেকছে। ফলে চাহিদা চড়া থাকলেও সরবরাহে টান পড়ায় মার খাচ্ছে ব্যবসা। কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা আঙুল তুলছেন নিগম-জমানায় মাথা তোলা নানা জটিলতার দিকে। যা বাধা হচ্ছে লাভের পথে।

তাঁদের যুক্তি, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ থেকে রাজ্যে ঢুকতে প্রতি ট্রাক বিদেশি মদে খরচ ২৫-৪৫ লক্ষ টাকা। আগে পাইকারি ব্যবসায়ীরা এই মদ এনে মোটা লাভ রেখে বেচত দোকানিদের কাছে। কিন্তু নিগমই পাইকারি বিক্রেতা হওয়ায় এই সুযোগ নেই বলে অভিযোগ। কারণ প্রথমত, এখন মদ সংস্থাগুলির সরাসরি সরকারি গুদামে পণ্য পৌঁছোনোর কথা। কিন্তু এখনও সেই ব্যবস্থা নেই তাদের।

Advertisement

এমনকী এক সংস্থার পূর্বাঞ্চলীয় কর্তার দাবি, ট্রাক ভর্তি মদ নিজেদের গুদামে রাখার পরিকাঠামোও নেই। অথচ বারবার অল্প পরিমাণে মদ আনলে, সেই খরচ লাভের অংশ খেয়ে নেবে। যে কারণে এখনও বেশ কিছু ব্র্যান্ড নিগমের গুদামে পৌঁছে দিচ্ছে পুরনো ব্যবস্থার পাইকারি ব্যবসায়ীরাই। কিন্তু নতুন সরবরাহ ব্যবস্থায় যা তাঁদের করার কথা নয়, ঝুঁকি নিয়ে সে জন্য মোটা টাকা গচ্ছিত রাখতে নারাজ তাঁরা। যেমন, এক ব্যবসায়ী জানান, ‘‘এক পয়সাও লাভ করতে না পারলে খামোখা লক্ষ লক্ষ টাকা লগ্নি করা অর্থহীন।’’

এই পরিস্থিতিতে পাইকারি ব্যবসায়ীদের লাভের কিছুটা উৎপাদকরাই দিচ্ছেন। ফলে লাভের টাকা পুরো তুলতে পারছে না সংস্থাগুলিও। তাদের নিজস্ব পরিকাঠামো ও বণ্টন ব্যবস্থা তৈরি না হওয়া পর্যন্ত এ ভাবে কম লাভে ব্যবসা চালানো ছাড়া উপায় নেই বলেই জানান ওই কর্তা।

এ ছাড়া, দোকানিদের কাছে ধারে মদ বেচার ফলে বাজারেও প্রচুর পাওনা টাকা পড়ে বলে ক্ষোভ পাইকারি বিক্রেতাদের। সব মিলিয়ে এই সব কারণেই উৎসবের চাহিদা পূরণের জন্য উৎপাদকদের থেকে পর্যাপ্ত মদ তোলার ঝুঁকি তাঁরা নিচ্ছেন না। সংশ্লিষ্ট শিল্পের দাবি, ফলে সরকারি নিগম আসায় এ ধরনের আইএমএফএলের বিক্রি ৫০ শতাংশের বেশি কমেছে। রাজ্যের অবশ্য দাবি আইএমএফএলের উৎপাদকরাও আগামী দিনে এখানে কারখানা তৈরি করতে পারবে। সাময়িক ভাবে সমস্যা তৈরি হলেও আখেরে রাজ্যের লাভই হবে।

এই গেরোয় মার খাচ্ছে রাজ্যও। শিল্পমহলের মতে, মদ বেচে রাজ্যের আয়ের ৪৫% আইএমএফএলের দখলে। ৩৫% দিশি মদের, ২০% বিয়ারের। কিন্তু বিদেশি মদের জোগান কমায় গত ক’মাসে তাই সরকারও কম আবগারি শুল্ক পেয়েছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল ফরেন লিকর ম্যানুফ্যাকচারার্স, হোলসেলার্স অ্যান্ড বন্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের এক প্রতিনিধি বলেন, ‘‘যে ব্র্যান্ডের মদ মাসে ৩৬ হাজার বোতল বিক্রি হত, তা নেমেছে ১৫ হাজারে। এ ধরনের মদ থেকে ৫০%-৮০% শুল্ক পায় রাজ্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন