পুজোতেও পতন বহাল বাজারে

ছিপ ফেলা যায় শেয়ার কিনতে

সব মিলিয়ে ভালই কেটেছে এ বারের পুজো। বর্ষা আগেই বিদায় নেওয়ায়, চার দিনের জায়গায় সকলে এ বার মহালয়া থেকে শুরু করে দিন দশেক চুটিয়ে ঠাকুর দেখেছেন।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০১৮ ০২:০৮
Share:

সব মিলিয়ে ভালই কেটেছে এ বারের পুজো। বর্ষা আগেই বিদায় নেওয়ায়, চার দিনের জায়গায় সকলে এ বার মহালয়া থেকে শুরু করে দিন দশেক চুটিয়ে ঠাকুর দেখেছেন। কিন্তু এমন আলো ও হইচইয়ে যখন সারা বাংলার রাস্তাঘাট ভেসে যাচ্ছে, তখনও মুখ কিছুটা ভারই ছিল শেয়ার বাজারের।

Advertisement

নবমী বাদে পুজোর সব দিনই খোলা ছিল বিএসই। এই ক’দিনে বাজার পড়েছে বেশ খানিকটা। শুক্রবার সেনসেক্স খুইয়েছে ৪৬৪ পয়েন্ট। নেমেছে ৩৪,৩১৬ অঙ্কে। অন্য দিকে, ১৫০ পয়েন্ট কমে আর এক সূচক নিফ্‌টি থিতু হয়েছে ১০,৩০৪ অঙ্কে। অর্থাৎ পুজোর কয়েক দিনেও বাজারের দুর্বলতা কাটেনি। বরং বলা যায় বেড়েছে আরও কিছুটা। এর কারণগুলো দেখে নেব এক নজরে।

• সেপ্টেম্বরে বেশ খানিকটা মাথা তুলেছে পাইকারি বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার। অগস্টে যা ৪.৫৩ শতাংশে ছিল, তা-ই ওই মাসে বেড়ে হয়েছে ৫.১৩%। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এই হার ছিল ৩.১৪%। এই বৃদ্ধি শিল্প এবং বন্ড বাজারের জন্য মোটেও শুভ নয়। কারণ মূল্যবৃদ্ধি মাথা তুললে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদের হার কমানোর পথে হাঁটতে পারে না। বরং তার উপরে রাশ টানতে তখন তা বাড়ানো হতে পারে। আর সেটা হলে শিল্পের ঋণের খরচ বাড়ে। তখন ধাক্কা খেতে পারে বিনিয়োগ। ভুগতে পারে অর্থনীতি।

Advertisement

• বেড়েছে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হারও। যদিও আশঙ্কার তুলনায় তা কিছুটা কম। সেপ্টেম্বরে এই হার ছুঁয়েছে ৩.৭৭%। যেখানে অগস্টে তা ছিল ৩.৬৯%।

• অপ্রত্যাশিত ভাবে কমে গিয়েছে রফতানি। সেপ্টেম্বরে এর পরিমাণ কমেছে ২.১৫%। অথচ ওই সময় আমদানি বেড়েছে ১০.৪৫%। এর ফলে বাড়ছে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি। আরও শক্তিশালী হচ্ছে ডলার। পড়ছে টাকার দাম।

• বহু ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফসি) সঙ্কট এখনও কাটেনি। ফলে লগ্নিকারীরা সব এনবিএফসির স্বাস্থ্য নিয়েই আশঙ্কায় ভুগছেন। সেগুলির শেয়ার ধরে রাখতে ভয় পাচ্ছেন। যে কারণে এই শ্রেণির শেয়ারগুলি কিছুতেই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না।

• সামগ্রিক ভাবে বর্ষায় ঘাটতি।

তার উপরে পরিসংখ্যান বলছে, চলতি মাসের প্রথম তিন সপ্তাহে (১-১৯ অক্টোবর) ভারতের মূলধনী বাজার থেকে ৩১,৯৭৭ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি। এর মধ্যে তারা শেয়ার বেচেছে ১৯,৮১০ কোটির। বন্ড বিক্রি করেছে ১২,১৬৭ কোটির। এর জন্য দায়ী মূলত মার্কিন-চিন শুল্ক যুদ্ধের জের, বিশ্ব বাজারে মাথা তোলা অশোধিত তেলের দর ইত্যাদি।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির ভারতের বাজার থেকে বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার প্রবণতা ক্রমাগত বাড়ছে। যা উদ্বিগ্ন করছে শেয়ার বাজারকে। এর আগে পুরো সেপ্টেম্বরে শেয়ার ও ঋণপত্রের বাজার মিলিয়ে ভারত ছেড়েছিল প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার বিদেশি লগ্নি। আর তারও আগে, জুলাই-অগস্টে অবশ্য সংস্থাগুলি ঢেলেছিল ৭,৪০০ কোটি। কিন্তু অক্টোবরে এত দ্রুত প্রায় ৩২ হাজার কোটির লগ্নি দেশে থেকে সরে যাওয়ার ধাক্কা ভালই মালুম পেয়েছে এ দেশের মূলধনী বাজার।

তবে সব ছবিই নিরাশার নয়। মুখ ভার করা বাজারে এই মুহূর্তে আশার আলো কর্পোরেট সংস্থাগুলির ত্রৈমাসিক আর্থিক ফলাফল। বেশ কয়েকটি নজরকাড়া ফলাফল ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে গত সপ্তাহে। যে কারণে লগ্নিকারীরা এ বার এর হাত ধরেই বাজারে সুদিন ফেরার আশায় দিন গুনছেন।

বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিসের নিট লাভ ১০ শতাংশ বেড়ে ছুঁয়েছে ৪,১১০ কোটি টাকা। আয় ১৭.৩ শতাংশ বেড়ে পৌঁছেছে ২০,৬০৯ কোটিতে। ফল প্রত্যাশার তুলনায় ভালই হয়েছে। এর আগে ভাল ফল পেশ করেছিল টিসিএস-ও। রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজের ত্রৈমাসিক লাভ ১৭.৩৫ শতাংশ বেড়ে পৌঁছেছে ৯,৫১৬ কোটিতে। এটিই সংস্থার সর্বোচ্চ ত্রৈমাসিক মুনাফা। এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের নিট লাভ ২০.৬ শতাংশ বেড়ে পেরিয়েছে ৫,০০০ কোটি। ৮৮০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ইন্ডাসইন্ড ব্যাঙ্কের নিট মুনাফা পৌঁছেছে ৯২০ কোটিতে। ছোট ব্যাঙ্কের মধ্যে সাউথ ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কের নিট লাভ ৪.৩২ কোটি থেকে উঠে এসেছে ৭০.১৩ কোটিতে। ভাল ফল প্রকাশ করেছে এসবিআই লাইফ এবং আইসিআইসিআই লম্বার্ড-ও।

এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত ফল বেশ ভাল। দেখতে হবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির হিসেব কী বলে। সর্বোচ্চ জায়গা থেকে সূচক নেমেছে কমবেশি ১০ শতাংশ। পতনে দাঁড়ি পড়েছে, বলা যায় না। তবে অনেকেই বলছেন, বাজার এখন যেখানে তাতে ফলাফলের নিরিখে ভাল শেয়ার কেনা শুরু করা যেতে পারে। নতুন করে লগ্নি শুরু করা যেতে পারে ভাল মানের ছোট-মাঝারি শেয়ারেও।

আশার কথা আরও আছে। ক’দিন হল পেট্রল-ডিজেলের দাম কিছুটা কমছে। কিছুটা মাথা নামিয়েছে ডলারও। তবে বাড়ছে সোনার দর। মনে করা হচ্ছে ধনতেরস পর্যন্ত তার দাম চড়াই থাকবে।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন