গত ক’দিন ধরে বাজারের ক্রমাগত পতনে ত্রাহি ত্রাহি রব সর্বত্র। কিছু মানুষ অবশ্য এই পরিস্থিতিতেও নিজেদের ভাগ্যবান বলে মনে করছেন। বিশেষত দীর্ঘসূত্রতা যাঁদের রক্তে, এ বার তাঁদের কপালে শিকে ছিঁড়েছে। কর সাশ্রয়ের জন্য যাঁদের এখনও লগ্নি করা হয়নি, তাঁরা ইএলএসএস প্রকল্পে একদম শেষ লগ্নে রুপোর দরে সোনায় লগ্নির সুযোগ পাবেন। শেয়ার বাজারের বড় পতনে ইকুইটি-নির্ভর কর সাশ্রয়কারী বিভিন্ন প্রকল্পের ন্যাভ অনেকটাই নেমেছে। আজ আর কাল এই দু’দিন সময় আছে কমা জলে মাছ ধরার।
শেয়ার বাজারে যেন চলছে চৈত্রের সেল। ছোট-বড় সব শেয়ারই বিকোচ্ছে চড়া ডিসকাউন্টে। যে-সেনসেক্স গত মার্চের গোড়ায় ছুঁয়েছিল ৩০ হাজার, তা গত শুক্রবার নেমেছে ২৭,৪৫৯ অঙ্কে। অর্থাত্ সেনসেক্স পড়েছে প্রায় ৮.৫%। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তা নেমেছে আরও অনেক বেশি। এই পরিস্থিতিতে কিছু মানুষের ভাগ্যে ‘পৌষ মাস’ দেখা দিলেও ‘সর্বনাশ’ কবলিত মানুষের সংখ্যা অনেক অনেক বেশি। সঙ্কট কত দিনে কাটবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
বাজেটের পর থেকে সময়টা আদৌ ভাল যাচ্ছে না বাজারের। এক দিকে দেশের ভিতরে যখন তেমন ইতিবাচক ঘটনা ঘটছে না, তখন অন্য দিকে ছোট-বড় প্রতিকূলতার খবর আসছে বিদেশ থেকে। শেষ ধাক্কাটা এসেছে ইয়েমেন থেকে। পশ্চিম এশিয়ার অশান্তির জেরে তেলের দাম এক লাফে বেশ খানিকটা বেড়ে ওঠায় ভারতের সুদিনের মেয়াদ ছোট হয়ে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই আশঙ্কার জেরেই বড় পতন। বাজারকে এই পরিস্থিতি থেকে তুলতে হলে একাধিক শক্তির (ট্রিগার) প্রয়োজন। কিন্তু তেমন কোনও ট্রিগার এখনই চোখে পড়ছে না।
তবে গত সপ্তাহের একমাত্র ভাল খবর হল স্পেকট্রাম বিক্রি করে সরকারি কোষাগারে ১.১০ লক্ষ কোটি টাকা ঢোকার সম্ভাবনা। এ ছাড়া, আবহাওয়া দফতরের আগাম ঘোষণা, গোড়ার দিকে গ্রীষ্মের মরসুম কাটলে বর্ষা স্বাভাবিক হবে। বাজারের কাছে এটাও বড় স্বস্তির খবর।
আর মাত্র দিন পনেরো পরেই শুরু হবে চতুর্থ ত্রৈমাসিক তথা ২০১৪-’১৫ সালের কোম্পানি ফলাফল প্রকাশের পালা। ফল অবশ্য খুব একটা ভাল হওয়ার কথা নয়। এ ছাড়া, এপ্রিলে আছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতির পর্যালোচনা। সুদ যদি আর এক দফা কমানো হয়, তবে তা বাজারের পক্ষে যাবে। বাজেটের পরপরই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে ২৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমিয়েছিল, তার সঙ্গে তাল রেখে সব ব্যাঙ্ক কিন্তু এখনও সুদ কমানোর পথে হাঁটেনি, সবাই বসে নতুন অর্থবর্ষের জন্য। অর্থাত্ এপ্রিলের গোড়াতেই হয়তো আমরা ঋণ ও আমানত, দু’টির উপরেই সামান্য হলেও সুদের হার কমতে দেখব।
শেয়ার বাজারে অনিশ্চয়তা দেখা দিলে দর বাড়ে সোনার। এই নিয়মের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গত কয়েক দিনে এই হলুদ ধাতুটির দাম গুটি গুটি এগিয়েছে বেশ খানিকটা। চৈত্র মাস কেটে গেলে, বিয়ের মরসুম শুরু হলে এবং অক্ষয় তৃতীয়া উপলক্ষে সোনার বাজার আরও চাঙ্গা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। অর্থাত্ যাঁদের হাতে গোল্ড ইটিএফ আছে, তাঁরা মাসখানেক অপেক্ষা করলে হয়তো ভাল দাম পাবেন। বছরের শেষ দু’দিনে মিউচুয়াল ফান্ডের ফিক্সড ম্যাচিওরিটি প্ল্যানে (এফএমপি) তিন বছরের বেশি মেয়াদে লগ্নি করলে ৪টি মূল্যবৃদ্ধি সূচক প্রয়োগ করে কর বাবদ অতিরিক্ত সুবিধা পেতে পারেন। এর ফলে অর্জিত সুদ এক রকম করমুক্ত হতে পারে। এই প্রকল্প থেকে এখন আশা করা যায় ৮.৫% সুদ।
অনেকটা দাম বেড়েছে ডলারেরও। এক দিকে তেল ও অন্য দিকে ডলারের দাম বেড়ে ওঠায় আবার ঊর্ধ্বমুখী হবে তেল আমদানির বিল। যা অর্থনীতির পক্ষে শুভ নয়। দীর্ঘ মেয়াদে ভারতীয় অর্থনীতির অগ্রগতি নিয়ে অবশ্য এখনও প্রশ্ন ওঠেনি। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক মনে করে, আগামী বছর তা এগোতে পারে ৭.৮% হারে। অর্থাত্ যাঁরা লম্বা মেয়াদের জন্য শেয়ার ধরেছেন, তাঁদের চিন্তার তেমন কারণ নেই। ছোট মেয়াদে যাঁদের বেচতে হবে, তাঁদের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকতে পারে। যাঁরা শেয়ারে বা ফান্ডে লগ্নি করতে চান, তাঁদের জন্য এটি খুব ভাল সময়।