Investment

পুঁজি থাকলেই চোখ বুঁজে লগ্নি নয়, বিনিয়োগের বাজারে পা রাখার আগে চোখ থাকুক অর্থনীতিতে

ভারতের মত কৃষিপ্রধান দেশে বর্ষা এবং শস্য উৎপাদনের বড় প্রভাব থাকে অর্থ ব্যবস্থায়। কৃষি উৎপাদন ভাল হলে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা থাকে। বহু পণ্যের বিক্রিবাটা বাড়ে। গ্রাম এবং ছোট শহরে দু’চাকা ও চারচাকার গাড়ির চাহিদা বৃদ্ধি পায়।

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৬:৫১
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

হাতে পুঁজি থাকলেই কি চোখ-কান বুঁজে লগ্নি করা উচিত? একেবারেই নয়। তার জন্যও দরকার প্রস্তুতি।

শুরুতেই বলে রাখা ভাল, বাজারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত লগ্নিতে সফল হতে গেলে অর্থনীতিকে ভাল ভাবে বুঝতে হবে। নিয়মিত নজর রাখতে হবে অর্থ ব্যবস্থার ওঠাপড়ার দিকে। জানতে হবে কোন কোন বিষয় অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে। আর তার প্রভাব কেমন হতে পারে শেয়ার বাজারের উপর। আবার এই শেয়ার এবং ঋণপত্রের বাজারের অবস্থার বড় প্রতিফলন দেখা যায় মিউচুয়াল ফান্ডের দুনিয়ায়। পাশাপাশি, সুদের ওঠাপড়াও হয় অর্থনীতির অবস্থার উপর ভিত্তি করে। তাই অর্থনীতিকে বোঝা জরুরি। শুধু দেশ নয়, নজর রাখতে হবে বিশ্ব পরিস্থিতির উপরেও।

ভারতের মত কৃষিপ্রধান দেশে বর্ষা এবং শস্য উৎপাদনের বড় প্রভাব থাকে অর্থ ব্যবস্থায়। কৃষি উৎপাদন ভাল হলে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা থাকে। বহু পণ্যের বিক্রিবাটা বাড়ে। গ্রাম এবং ছোট শহরে দু’চাকা ও চারচাকার গাড়ির চাহিদা বৃদ্ধি পায়। বাড়ে সোনার চাহিদা। চাঙ্গা হয় কৃষিনির্ভর শিল্প। খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকে। যা মূল্যবৃদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। সুদও থাকে নীচের দিকে। এই সূত্রেই বলা যায়, নজর রাখতে হবে মূল্যবৃদ্ধি এবং সুদের ওঠাপড়ার দিকেও। খুচরো মূল্যবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। যা এখন ৪% (২% কম-বেশি)। মূল্যবৃদ্ধির হার এর মধ্যে বা কম থাকলে শীর্ষ ব্যাঙ্ক রেপো রেট (যে সুদে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয়) কমানোর কথা বিবেচনা করে। অন্য দিকে, মূল্যবৃদ্ধির হার লক্ষ্যমাত্রা ছাপিয়ে গেলে সুদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে। আসলে রেপো কমা মানে বাজারে নগদ টাকার জোগান বৃদ্ধি। তাতে কম সুদে শিল্প সংস্থাগুলি ঋণ পেতে পারে। শিল্প ক্ষেত্র চাঙ্গা হয়। উৎসাহিত হয় শেয়ার বাজার। আর সুদ বাড়লে ঘটনাক্রম হয় এর উল্টো। রেপো রেট কমলে শিল্প ঋণের সুদ কমে ঠিকই, তবে একই সঙ্গে কমে জমার সুদও। বাজারে ঋণপত্রের দাম বাড়ে। সুদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে প্রকৃত সুদ বা ইল্ডের পতন হয়।

নজর রাখা জরুরি কর সংগ্রহের উপরও। জিএসটি সংগ্রহ বৃদ্ধির অর্থ দেশে ব্যবসা বাড়ছে। আর আয়কর সংগ্রহ বৃদ্ধি ব্যবসায়িক সংস্থা এবং সাধারণ মানুষের আয় বৃদ্ধির লক্ষণ। যাকে অর্থনীতির উন্নতির লক্ষণ বলে ধরা যায়। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ কর আদায় বাড়লে রাজকোষ স্ফীত হয়। সহজ হয় বাজেট সামাল দেওয়া এবং উন্নয়নের কাজ। সংস্থাগুলি বেশি আগাম কর জমা দিলে ধরে নেওয়া যায় তাদের মুনাফা বাড়ছে। এর ইতিবাচক প্রতিফলন দেখা যায় শেয়ার বাজারে।

অর্থনীতির আর একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। রফতানি কমা এবং আমদানি ফুলেফেঁপে ওঠা ভাল লক্ষণ নয়। এমনটা হলে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ে। বিদেশ থেকে আয় কমলে মাথা তোলে ডলারের দাম, টাকা নামতে থাকে। ডলারের দাম বাড়লে সরকার এবং আমদানি নির্ভর শিল্পের লোকসান। তখন আমদানিকৃত কাঁচামালের খরচ বাড়ে। জিনিসপত্রের দাম বাড়ে দেশের বাজারে। তবে রফতানি প্রধান শিল্প এবং পরিষেবা সংস্থাগুলির লাভ হয়। শেয়ার বাজারেও তার প্রভাব পড়ে।

পশ্চিম দুনিয়ার মূল্যবৃদ্ধি এবং সুদের ওঠাপড়াও যেন নজর না এড়ায়। সেখানে সুদ কমলে ভারতে বিদেশি লগ্নি বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়ে। যা বাজারকে চাঙ্গা রাখে। অন্য দিকে, বিদেশি লগ্নি বাজার ছাড়লে সূচক নামার আশঙ্কা থাকে। এখন যা হচ্ছে।

অর্থনীতির আর একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক। বিশেষ করে আমেরিকা, রাশিয়া ও ইউরোপেরবিভিন্ন দেশের সঙ্গে। সম্প্রতি আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে কিছুটা টোল পড়েছে। কারণ, ভারতীয় পণ্যে ৫০% শুল্ক চাপিয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। এর মধ্যে ২৫% রাশিয়া থেকে অশোধিত তেল কেনার জন্য। এই শুল্ক নীতি ভাল রকম ধাক্কা দিয়েছে ভারতের রফতানিতে। এই ক্ষতি সামলাতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পৃথক ভাবে বাণিজ্য চুক্তির পথে হাঁটতেচাইছে দিল্লি। বিভিন্ন দেশের মধ্যে সংঘর্ষ, যুদ্ধ ও ভূ-রাজনৈতিক অবস্থার বড় প্রভাব থাকে অর্থনীতিতে। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি অস্থির থাকলে পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হয়। যন্ত্রাংশ সরবরাহের জোগানশৃঙ্খল বিঘ্নিত হলে ধাক্কা খায় পণ্য উৎপাদন। যা হয়েছিল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর।

আর যে সব বিষয় অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে, তার মধ্যে রয়েছে বিদেশি মুদ্রার ভান্ডারের অবস্থা, বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম, প্রাকৃতিক বিপর্যয়, প্রতিরক্ষা খাতে খরচ বৃদ্ধি, স্বনির্ভরতা বৃদ্ধি ইত্যাদি। এখন নেটের সাহায্যে সহজেই বিভিন্ন আর্থিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায়। আর অর্থনীতি সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান থাকলে অবস্থা বিশ্লেষণ করতে বেশি সময় লাগবে না। শেয়ার বা মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নির আগে এটুকু অবশ্যই করা দরকার। অসুবিধা হলে পরামর্শদাতার সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।

(মতামত ব্যক্তিগত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন