কম কর্মীতে শিকেয় প্রশিক্ষণও, ব্যাঙ্কে ভোগান্তি গ্রাহকের

আমানতে টিডিএস কাটা আটকাতে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ১৫জি ফর্ম জমা দিতে গিয়েছিলেন এক গ্রাহক। ব্যাঙ্কের কর্মী বলেন পুরনো পদ্ধতিতেই ফর্ম ভর্তি করতে। অথচ এখন সেই পদ্ধতি বদলে গিয়েছে। ব্যাঙ্কে গ্রাহকের নামে পূরণ করা ফর্ম তৈরিই থাকে। গ্রাহক শুধু সই করলেই হল।

Advertisement

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৮ ১৭:৩৭
Share:

আমানতে টিডিএস কাটা আটকাতে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ১৫জি ফর্ম জমা দিতে গিয়েছিলেন এক গ্রাহক। ব্যাঙ্কের কর্মী বলেন পুরনো পদ্ধতিতেই ফর্ম ভর্তি করতে। অথচ এখন সেই পদ্ধতি বদলে গিয়েছে। ব্যাঙ্কে গ্রাহকের নামে পূরণ করা ফর্ম তৈরিই থাকে। গ্রাহক শুধু সই করলেই হল। কিন্তু কী ভাবে কোথা থেকে সেই নতুন ফর্ম মিলবে, ব্যাঙ্কের ওই কর্মী তা জানেনই না!

Advertisement

প্রবীণ নাগরিকদের জন্য একটি জমা প্রকল্পে টাকা রাখতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের গড়িয়াহাট শাখায় গিয়েছিলেন এক গ্রাহক । সেখানকার কর্মী বলেন, ওই ধরনের কোনও প্রকল্প তাঁদের ব্যাঙ্কে নেই। পরে ব্যাঙ্কের উচ্চপদস্থ অফিসারের সঙ্গে পরিচয়ের সুবাদে জানা গেল, ওই প্রকল্প বিলক্ষণ রয়েছে সেখানে। অর্থাৎ, ওই কর্মী জানতেনই না যে, তাঁর ব্যাঙ্কে ওই প্রকল্প আছে!

লম্বা লাইন, দীর্ঘ অপেক্ষার পাশাপাশি এমন অজস্র কারণে ব্যাঙ্কে হয়রানির অভিযোগ শোনা যাচ্ছে গ্রাহকদের তরফ থেকে। তাঁদের অনেকেই বলছেন, প্রায়শই দেখা যায় কর্মীরা অনেক বিষয়েই খুঁটিনাটি তেমন জানেন না। পরিষেবা এবং ব্যাঙ্কের নিয়মকানুনের বিষয়ে যেন তাঁরা অনেক সময়ই অন্ধকারে। বিশেষত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে। অনেক ব্যাঙ্ক কর্তাও মানছেন, কিছু ক্ষেত্রে নিয়ম না জেনে এমন ঋণ দেওয়া হয়েছে, যা পরে উদ্ধার করতে কালঘাম ছুটছে তাঁদের। এবং এই সমস্ত কিছুর জন্যই কর্মী সংখ্যা কম হওয়া ও তার জেরে প্রশিক্ষণে ঘাটতিকে দুষছে কর্মী সংগঠনগুলি। একমত বিশেষজ্ঞরাও।

Advertisement

ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি দেবব্রত সরকার বলেন, ‘‘অনেক ক্ষেত্রেই ঋণ দিতে কী কী নথি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন, তা নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা থাকে না সংশ্লিষ্ট অফিসার বা কর্মীর।’’ ব্যাঙ্কের কর্তা এবং ইউনিয়নগুলি উভয় পক্ষই মানছে, দক্ষতায় এই টানের বড় কারণ উপযুক্ত প্রশিক্ষণের অভাব। আগে ব্যাঙ্কে কর্মী নিয়োগের পরে প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক ছিল। কিন্তু এখন তা কার্যত শিকেয়।

এ ভাবে প্রশিক্ষণ ছাড়াই কাজে নামিয়ে দেওয়ার পিছনে কর্মীর অভাবকেই দায়ী করছেন অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক অফিসার্স কনফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদক সঞ্জয় দাস। তাঁর দাবি, ‘‘১৯৯১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে অফিসার ও কর্মী নিয়োগ কার্যত বন্ধ ছিল। তার উপর কম্পিউটারে কম লোক লাগার ধারণা থেকে ছিল স্বেচ্ছাবসরের হিড়িক। প্রশিক্ষণের অভাবে পরে সেই ঘাটতি আর পূরণ হয়নি।’’ তাঁর মতে, এক সময়ে পাঁচ জন করণিক পিছু এক জন অফিসার থাকতেন। পরে এক জন করণিক পিছু দু’জন অফিসার রাখার সিদ্ধান্ত হয়। ফলে এক দিকে করণিক কমেছে। অফিসারও বাড়েনি।

ইউনিয়নের অভিযোগ, কর্মী বাড়ানো না হলেও কাজ কমেনি। বরং বেড়েছে। অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রাজেন নাগর বলেন, ‘‘গত দু’বছরে ব্যাঙ্কের অনেক নিয়ম বদলেছে। চালু হয়েছে নতুন পরিষেবা। বেড়েছে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার। কিন্তু উপেক্ষিত হয়েছে প্রশিক্ষণ।’’ তাঁর দাবি, অনেক সময় প্রশিক্ষণ কর্মসূচি থাকলেও বিভাগীয় কর্তারা কর্মী বা অফিসারদের ছাড়তে চান না। কারণ, এমনিতেই কর্মী কম থাকায় কাজ আটকে যাওয়ার আশঙ্কা।

ইউকো ব্যাঙ্কের এক প্রাক্তন এগ্‌জিকিউটিভ ডিরেক্টরের মতে, ভাল কর্মীদের ধরে রাখাও মস্ত চ্যালেঞ্জ। সব মিলিয়ে তাই ভোগান্তি গ্রাহকেরই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন