ক্রমশ বাড়ছে চাপ, রাজত্ব হারাচ্ছেন মাল্য

একে একে খসে পড়ছে মাছরাঙার রঙিন পালকগুলো! এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তাঁকে শুক্রবার সশরীর হাজির হওয়ার জন্য সমন পাঠিয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৬ ০৩:৩২
Share:

কিংগ্‌ফিশার হাউস। ছবি: পিটিআই।

একে একে খসে পড়ছে মাছরাঙার রঙিন পালকগুলো!

Advertisement

এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) তাঁকে শুক্রবার সশরীর হাজির হওয়ার জন্য সমন পাঠিয়েছিল। তিনি জানিয়েছেন, এপ্রিল পর্যন্ত সময় চাই। সেই ‘সময়’ তাঁকে দেওয়া হবে কি না, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তার মধ্যেই আজ মুম্বইয়ে তাঁর গর্বের ‘কিংগ্‌ফিশার হাউস’ নিলামে তোলা হয়েছিল। কিন্তু কেনার লোক মেলেনি।

এটুকু জেনে কেউ যদি মনে করেন, মাছরাঙা (কিংগ্‌ফিশার)-র রঙিন সাম্রাজ্য এখনও অটুট রাখতে পেরেছেন ‘লিকার ব্যারন’ বিজয় মাল্য, তা হলে তিনি ভুল করবেন। বাস্তবটা হল, ‘কিংগ্ অফ গুড টাইমস’ আস্তে আস্তে হারিয়ে ফেলছেন নিজের সাম্রাজ্যের রাশ।

Advertisement

ইউনাইটেড স্পিরিটসের চেয়ারম্যান পদ আগেই ছাড়তে হয়েছিল। এ বার রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ক্রিকেট দলের শীর্ষকর্তার পদও গেল মাল্যর। এক সময় এই আরসিবি-র গ্যালারিতেই বলিউড নায়িকাদের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যেত মাল্যকে। আজ রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স স্পোর্টস সংস্থার তরফে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে জানানো হয়েছে, সংস্থার ডিরেক্টরের পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন মাল্য। বাকি রয়েছে শুধু ইউবি গোষ্ঠী। ব্যবসায়িক মহলের অনেকেই মনে করছেন, ইউবি গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণও মাল্য এবং তাঁর পরিবারের হাত থেকে বেরিয়ে যেতে পারে।

রাজ্যসভায় মাল্যর অনেক সতীর্থর তাই ধারণা, কিংগ্‌ফিশারের মালিক নিজে হয়তো লন্ডনের কোনও প্রাসাদোপম বাংলোয় আরও কিছু দিন নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দেবেন। ভারতের তদন্তকারী সংস্থাগুলি খুব সহজে তাঁর নাগাল পাবে, এমন ইঙ্গিত এখনও নেই। তা ছাড়া, এ দেশের ১৭টি ব্যাঙ্কের কাছে তাঁর দেনার পরিমাণ ৯ হাজার কোটি টাকা হলেও বিজয় মাল্য যে দেউলিয়া হয়ে পড়েছেন, তা নয়। কারণ অসংখ্য সংস্থায় তাঁর শেয়ার ও বিদেশে সম্পত্তির পরিমাণ এই টাকার চেয়েও বেশি! কিন্তু তা সত্ত্বেও এ দেশে বিজয় মাল্যর গর্বের সাম্রাজ্য যে ধুলোয় মিশছে, তাতে সন্দেহ নেই।

সিবিআই-ইডির তদন্ত এড়িয়ে মাল্যর বিদেশযাত্রার পরে নরেন্দ্র মোদী সরকার এবং অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির দিকে আঙুল তুলেছিল কংগ্রেস। বিদেশে যাওয়ার আগে জেটলির সঙ্গে মাল্য বৈঠক করেন বলেও কংগ্রেস অভিযোগ তুলেছিল। আজ জেটলি এ প্রসঙ্গে মুখ খুলে জানিয়েছেন, ‘‘প্রতিটি সরকারি সংস্থা ওঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেবে। ব্যাঙ্কগুলি প্রতিটি পয়সা উদ্ধারের জন্য ঝাঁপাবে।’’

সিবিআই, ইডি, এসএফআইও-র মতো তদন্তকারী সংস্থাগুলির মধ্যে এখন প্রতিযোগিতা চলছে, কে মাল্যর বিরুদ্ধে কত কড়া পদক্ষেপ করতে পারে! ইডি যেমন আইডিবিআই-এর ৯০০ কোটি টাকা ঋণ শোধ না হওয়ার মামলার তদন্ত করছে। সিবিআই-ও মাল্যর বিরুদ্ধে তদন্ত করছে। দুই সংস্থারই মূল বিষয় হল, হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা কোথায় কাজে লাগিয়েছেন মাল্য? সেই অর্থ বিদেশে গেছে কি না, তারও খোঁজ চলছে। দ্বিতীয়টির সম্ভাবনাই বেশি বলে তদন্তকারীদের বক্তব্য।

দেনা শোধ না হওয়ায় মাল্য-র সাধের কিংগ্‌ফিশার এয়ারলাইন্সের সম্পত্তি নিলাম শুরু করেছে ব্যাঙ্কগুলি। আজ স্টেট ব্যাঙ্কের তরফে নিলামে তোলা হয় মুম্বইয়ের কিংগ্‌ফিশার হাউস। ১৭ হাজার বর্গফুটের বাড়িটির ন্যূনতম দাম ধরা হয়েছিল ১৫০ কোটি টাকা। কিন্তু কোনও ক্রেতা মেলেনি। বেশি চড়া দামের জন্যই এমনটা হল বলে অনেকের ধারণা। তাই নতুন করে শর্ত বেঁধে ফের নিলামে তোলা হবে। আগেই নিলাম শুরু হয়েছে ন’টি ছোট-বড় গাড়ির। এমন নয় যে এগুলি নিলাম করে দেনার অঙ্ক শোধ হবে। শুধু স্টেট ব্যাঙ্কের কাছেই মাল্যর দেনা ২ হাজার কোটি। অধৈর্য্য হয়েই কিংগ্‌ফিশারের সম্পত্তি নিলামের কাজ শুরু করে দিয়েছে ব্যাঙ্কগুলি।

সকলেই বুঝতে পারছেন, মাল্য যতই টুইট করে বলুন যে তিনি দেশ ছেড়ে পালাননি, তাঁরা হৃতগৌরব বা হৃতসাম্রাজ্য, কোনওটিই পুনরুদ্ধারের আশু সম্ভাবনা নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন