কাঁটা সেই ব্রেক্সিট

বর্ষা, জিএসটি বিল পাশের দিকেই তাকিয়ে বাজার

জিএসটি, বর্ষা না ব্রেক্সিট— ভারতের কাছে কোনটি সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ? বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির কাছে বর্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পর পর দু’বছর প্রায় খরা পরিস্থিতির পরে একটি ভাল বর্ষা অত্যন্ত জরুরি।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৬ ০২:৩৪
Share:

জিএসটি, বর্ষা না ব্রেক্সিট— ভারতের কাছে কোনটি সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ? বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির কাছে বর্ষা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পর পর দু’বছর প্রায় খরা পরিস্থিতির পরে একটি ভাল বর্ষা অত্যন্ত জরুরি। পূর্বাভাস অনুযায়ী এ বার যদি আকাশ সদয় হয়, তবে অর্থনীতি সত্যিই ঘুরে দাঁড়াতে পারে। দেরিতে এলেও সুখের কথা, আকাশ এখন ভাল রকম জল ঢালছে দেশের প্রায় সর্বত্র। কোনও কোনও অঞ্চলে ঘাটতি মিটে গিয়ে গত সপ্তাহে বৃষ্টি হয়েছে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, আগামী কয়েক সপ্তাহে ভাল বৃষ্টি হবে সর্বত্রই।

Advertisement

ভাল বর্ষার পাশাপাশি যদি পণ্য-পরিষেবা বা জিএসটি বিল এ বার সংসদে উতরে যায়, তবে তো সোনায় সোহাগা। বিভিন্ন রাজ্য এবং রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে আলোচনা যে-জায়গায় পৌঁছেছে তাতে আশা করা যায়, এ বার এই বিল দিনের আলো দেখতে পারে। বর্ষা এবং জিএসটিকে সঙ্গে পেলে মোদীর অর্থনীতি কিন্তু সত্যি সত্যিই দৌড়বে। এরই মধ্যে বড় কাঁটা হল ব্রেক্সিট। ব্রিটেনের ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া যখন সত্যি সত্যিই সম্পূর্ণ হবে, তখন কিন্তু টালমাটাল অবস্থা হবে ইউরোপের। এর ভাল রকম ধাক্কা পৌঁছবে ভারতেও।

প্রত্যাশা মাফিক বর্ষা এবং কেন্দ্রীয় কর্মীদের বেতন বৃদ্ধির খবরে বাজার এখন বেশ চনমনে। বর্ষায় উৎপাদন বাড়বে এবং বেতন-পেনশন বাড়ায় ঊর্ধ্বমুখী হবে চাহিদা। দুইয়ে মিলেই অর্থনীতিকে ঠেলে উপরের দিকে তুলবে, এমনটাই আশা করছেন শেয়ার বাজারের বিপুল সংখ্যক লগ্নিকারী।

Advertisement

গত সপ্তাহের শেষ দু’দিনে একটু সংশোধন হলেও বাজার কিন্তু মোটের উপর বেশ তেজীই ছিল। ফলে ২৭,০০০ ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে সেনসেক্স। চলতি সপ্তাহেই শুরু হবে ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিক ফলাফল প্রকাশের পালা। প্রথম দিকে ভাল ফল প্রকাশিত হতে শুরু করলে আগুন কিন্তু আর ছাইচাপা থাকবে না। মার্কিন মুলুকে ভিসা আইনের প্রস্তাবিত সংশোধন অবশ্য আশঙ্কার কালো মেঘ ডেকে এনেছে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির আকাশে। ফলে এদের শেয়ারে কিন্তু ক্ষয়-ক্ষতি হতে পারে।

চলতি অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসে বিভিন্ন শহরে বাড়ির চাহিদা বেড়েছে। বেড়েছে কর সংগ্রহও। দুটোই ভাল সময়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ভাল রকম চাঙ্গা হয়েছে নতুন ইস্যুর বাজারও। ভাল নতুন ইস্যুতে আবেদনের জোয়ার দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ ছোট লগ্নিকারীরা ফিরছেন, যা বাজারের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চাঙ্গা হচ্ছে কর্পোরেট বন্ডের বাজারও। ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরে সুদ কমায় অল্প ঝুঁকি নিতে পিছপা নন, এমন অনেক মানুষ একটু বেশি সুদের লক্ষ্যে বেসরকারি বন্ডে লগ্নির পথ বেছে নিচ্ছেন। সুযোগ নিতে বাজারে বন্ড নিয়ে হাজির হচ্ছে বেশ কয়েকটি সংস্থা। এদের মধ্যে আছে দেওয়ান হাউসিং ফিনান্স, এডেলওয়েজ হাউসিং ফিনান্স ও শ্রেয়ী ইনফ্রাস্ট্রাকচার। ‘এএএ’ (‘ট্রিপল এ’) রেটিংযুক্ত দেওয়ান হাউসিং প্রথম দফায় ২০০০ কোটি টাকার বন্ড বাজারে ছাড়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এডেলওয়েজ (‘এএ’ রেটিং যুক্ত) ইতিমধ্যেই ৫০০ কোটি টাকার বন্ড ছেড়েছে। ইস্যু খুলেছে গত শুক্রবার। সুদ দেওয়া হচ্ছে ৯.৫% থেকে ১০% পর্যন্ত। বাজার থেকে বন্ড/ডিবেঞ্চার ইস্যু করে ৩০০ কোটি টাকা তুলতে চায় শ্রেয়ী ইনফ্রাস্ট্রাকচার। রেটিং ভাল হলে এই সব বন্ডে তহবিলের একাংশ লগ্নি করার কথা ভাবা যেতে পারে।

শেয়ার বাজার ২৭ হাজারে প্রবেশ করায় গত দু’বছরে মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করেছেন এমন অনেকেই লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন। ধীরে ধীরে লাভজনক হয়ে উঠছে এসআইপি-তে লগ্নিও। ফলে বাড়ছে মিউচুয়াল প্রকল্পে লগ্নি। অন্য দিকে সোনাও এখন সমান তেজী। অর্থাৎ সুসময় চলছে গোল্ড বন্ড, গোল্ড ফান্ড এবং গোল্ড ইটিএফের লগ্নিকারীদের জন্যও। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এখন ভালই বলতে হবে।

দেখতে দেখতে জুলাই মাসের ১০ দিন কেটে গেল। অর্থাৎ আয়কর রিটার্ন ফাইল করার জন্য হাতে আছে আর তিন সপ্তাহ সময়। কর বকেয়া থাকলে রিটার্ন ফাইল করার আগে তা জমা করুন। মনে রাখতে হবে, আয় ৫ লক্ষ টাকার বেশি হলে, রিফান্ডের ব্যাপার থাকলে এবং বয়স ৮০ বছরের কম হলে অনলাইনে রিটার্ন ফাইল করা বাধ্যতামূলক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন