প্রতীকী ছবি।
সবুরে ‘মাউস’ ফলে।
ভারতে বহু ব্র্যান্ডের পণ্যের খুচরো ব্যবসায় (মাল্টি ব্র্যান্ড রিটেল) পা রাখার অপেক্ষায় সেই ২০০৭ সাল থেকে ওত পেতে ছিল ওয়ালমার্ট। শিকে ছেঁড়েনি এখনও। কিন্তু দীর্ঘ ১১ বছর পেরিয়ে এ দেশে একেবারে মানুষের বাড়ির দরজায় পণ্য বিক্রি করে আসার রাস্তা খুলে ফেলল তারা। কোনও খুচরো বিপণি না খুলে। নেট-বাজারের দৌলতে। স্রেফ ‘মাউস’-এর পিঠে চেপে।
বুধবারই মার্কিন রিটেল বহুজাতিকটি জানিয়েছে, ভারতীয় ই-কমার্স সংস্থা ফ্লিপকার্টের ৭৭% অংশীদারি ১,৬০০ কোটি ডলারে (প্রায় ১.০৫ লক্ষ কোটি টাকা) কিনে নিচ্ছে তারা। অনেকে বলছেন, বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এই রিটেল সংস্থা এ বার ভারতের বিপুল সম্ভাবনাময় নেট বাজারে কড়া টক্করের মুখে ফেলবে আমেরিকার ই-কমার্স দৈত্য অ্যামাজনকে। শেষমেশ প্রতিযোগিতা কমিশন সমেত সংশ্লিষ্ট সব নিয়ন্ত্রকের ছাড়পত্র যদি মেলে, তবে আগামী দিনে এখানে এই ‘ঘুরপথে’ খুচরো ব্যবসার বাজারেও তারা বড় শক্তি হয়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে রিটেল দৈত্যের এই ‘ঘুরপথে’ প্রবেশ নিয়েই চটেছে আরএসএসের সংগঠন স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ। ক্ষুব্ধ বিজেপি সমর্থিত ব্যবসায়ী সংগঠনও। স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের নেতা অশ্বিনী মহাজন বলেন, ‘‘নীতি আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্ত এই চুক্তিকে সমর্থন করছেন। কিন্তু তা অনৈতিক। কৃষক, ব্যবসায়ীদের স্বার্থের বিরোধী।’’ তাঁর মতে, বাণিজ্যমন্ত্রী সুরেশ প্রভুর উচিত ওয়ালমার্ট কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকই না করা।
ভারতে বহু ব্র্যান্ডের পণ্যের খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির দরজা খোলেনি এখনও। সেই কারণে এক দশকেরও আগে এ দেশে পা রাখা ওয়ালমার্ট ভারতে এত দিন ধরে আটকে থেকেছে শুধু পাইকারি ব্যবসায়। ন’টি রাজ্যে ‘বেস্ট প্রাইস’ ব্র্যান্ড নামে ২১টি ‘ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি’ বিপণিতে। স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ ও ব্যবসায়ীদের সংগঠন কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্সের অভিযোগ, সরাসরি খুচরো ব্যবসায় পা রাখার ছাড়পত্র পায়নি বলেই এখন নেট-বাজারের ঘুরপথে ক্রেতাদের পণ্য বিক্রির রাস্তা খুলতে চাইছে ওয়ালমার্ট। তাদের আশঙ্কা, শেষমেশ তা হলে, মাথায় হাত পড়বে ছোট ব্যবসায়ীদের। কপাল পুড়বে চাষিদেরও। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাদের আবেদন, ই-কমার্স নিয়ে জাতীয় নীতি তৈরির আগে এই চুক্তি কার্যকর করতে দেওয়া না হোক। অনেকের আবার প্রশ্ন, দেশের প্রধান ই-কমার্স সংস্থার এ ভাবে বহুজাতিকের কাছে বিকিয়ে যাওয়া ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’রও খুব ভাল বিজ্ঞাপন কি?