ধাক্কা সামাল দিতে তিন বর্ম

ব্রিটেন মিলিয়ে দিল বেজিং ও ব্রাসেলসকে।শুক্রবার সকালে যখন ‘ব্রেক্সিট’-এর খবর শুনে শেয়ার সূচক ও টাকার দাম পড়তে শুরু করেছে, অরুণ জেটলি তখন বেজিংয়ে। আর রঘুরাম রাজন সুইৎজারল্যান্ডের বাসেলে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৬ ০৯:০৬
Share:

ব্রিটেন মিলিয়ে দিল বেজিং ও ব্রাসেলসকে।

Advertisement

শুক্রবার সকালে যখন ‘ব্রেক্সিট’-এর খবর শুনে শেয়ার সূচক ও টাকার দাম পড়তে শুরু করেছে, অরুণ জেটলি তখন বেজিংয়ে। আর রঘুরাম রাজন সুইৎজারল্যান্ডের বাসেলে। মোদী সরকারের সঙ্গে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের সম্পর্ক যে সুমধুর, এমন নয়। সেই ব্যক্তিগত সংঘাত সরিয়ে রেখে, দেশের অর্থনীতিতে ব্রেক্সিট-এর ধাক্কা সামলাতে আজ একই সঙ্গে মাঠে নামলেন জেটলি ও রাজন।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে সত্যিই ব্রিটেন বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে প্রাথমিক ভাবে যে শেয়ার বাজার ও টাকার দামে ধাক্কা লাগবে, তা জানাই ছিল। কারণটা হল, ব্রিটেনকে ঘিরে অনিশ্চয়তার জেরে লগ্নিকারীরা শেয়ার বাজারে লগ্নির থেকে সোনা, মার্কিন ট্রেজারি বিল বা জার্মানির ঋণপত্রে লগ্নি করাটা কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করতে পারেন। গোটা এশিয়ার শেয়ার বাজারেই আজ সেই ধাক্কা লেগেছে। তাই অর্থমন্ত্রী ও গভর্নর, এক সুরে সেই ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

Advertisement

আজ সকালে শেয়ার বাজার খুলতেই ছবিটা খারাপ দেখে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ রঘুরাম রাজনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ব্রেক্সিট-পরবর্তী পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতেই জেটলির সঙ্গে বেজিং না গিয়ে দিল্লিতে ছিলেন অর্থবিষয়ক সচিব শক্তিকান্ত দাস। তিনি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। তার পরেই মাঠে নামে অর্থ মন্ত্রক ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ভারতের অর্থনীতির ভিত যথেষ্ট মজবুত এবং মোদী সরকার সংস্কারের পথেই রয়েছে দাবি করে লগ্নিকারীদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন জেটলি। বলেন, বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডারও যথেষ্ট মজবুত। তাতে সায় দিয়ে রাজন জানান, প্রয়োজন মতো বাজারে টাকা বা ডলারের নগদ জোগান বাড়িয়ে পরিস্থিতি আয়ত্তে রাখবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। সরকার ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক পরিস্থিতি সামলাতে তৈরি বলে দু’জনেই জানিয়ে দেন। আশ্বাসবাণীতে কিছুটা কাজও হয়।

তাতেই যে আশঙ্কা চলে যাচ্ছে, তা নয়। দীর্ঘমেয়াদেও ব্রেক্সিট ভারতের অর্থনীতিতে ধাক্কা দিতে পারে। কারণ ব্রিটেনে মন্দা দেখা দিলে ভারত থেকে সে দেশে রফতানির পরিমাণ কমবে। এমনিতেই গত আট মাস ধরে রফতানি পড়ছে। বস্তুত সেই ২০০৭-এ বিশ্ব জুড়ে আর্থিক মন্দার সূচনাপর্ব থেকেই এ দেশের রফতানি ক্ষেত্র শান্তিতে নেই। ব্রিটেন তথা ইউরোপীয় ইউনিয়নে লগ্নি করা এ দেশের প্রায় ৮০০ সংস্থার আয় ও বৃদ্ধি কমার আশঙ্কাও রয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, প্রাথমিক ধাক্কা কত ভাল ভাবে সামাল দেওয়া হচ্ছে, তার উপরে দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক স্বাস্থ্যের কতখানি ক্ষতি হবে, তার অনেকটাই নির্ভর করছে। কারণ, গত তিন বছর ধরেই এশিয়ার মুদ্রাগুলির মধ্যে টাকার দাম অন্যদের তুলনায় কম ছিল। তিন বছর আগে দায়িত্ব নেওয়ার পর ডলার এনে টাকার দামের পতন রুখতে, অনাবাসী ভারতীয়দের জন্য বন্ড ছেড়েছিলেন রাজন। সেপ্টেম্বরে রাজনের বিদায়ের পরেই তা সুদ-সহ ফেরাতে ২ হাজার কোটি ডলার প্রয়োজন পড়বে। পরিস্থিতি ঠিকমতো সামাল দেওয়া না গেলে তখন টাকার দামে ফের ধাক্কা লাগতে পারে। এর মধ্যে ব্রেক্সিট-এর ধাক্কায় টাকার দাম আরও কমলে, এ দেশে আমদানি করা জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। মূল্যবৃদ্ধির হারও ফের বাড়তে শুরু করবে। তখন রঘুরাম রাজন গভর্নরের পদে না থাকলেও রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে সুদের হার কমাতে বলাটা মোদী সরকারের পক্ষে মুশকিল হবে।

বস্তুত, ব্রেক্সিট-এর ধাক্কা সামাল দিতে মোদী সরকার চাইছে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আরেক দফা সুদের হার কমাক। এখনই না হলেও, অন্তত সেপ্টেম্বরে বিদায়ের আগে অগস্টে শেষবারের মতো ঋণনীতি ঘোষণার সময়। ব্রেক্সিট-এর ফলে ফেডেরাল রিজার্ভের সুদের হার বৃদ্ধি পিছিয়ে যেতে পারে বলে তা রাজনের পক্ষে সহজ হবে বলেও অর্থ মন্ত্রকের মত। রাজন আজ কিছুই খোলসা না করে মন্তব্য করেছেন, ‘‘আমরা সবার কথাই ভাবি, কিন্তু একই সঙ্গে পরিসংখ্যানের ভিত্তিতেও সিদ্ধান্ত নিতে হয়।’’ তবে তাঁর মতে, বিশ্ব জুড়ে যে শেয়ার বাজারে পতন ঘটছে, তা প্রাথমিক ধাক্কার জেরে। সব দেশেরই সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেবে, যাতে দীর্ঘমেয়াদে সেই ধাক্কা না লাগে।

এ দেশে ব্রেক্সিট-ধাক্কা থেকে বাঁচতে তিনটি বর্ম রয়েছে বলে রাজনের মত। এক, অর্থনীতির ভিত মজবুত। এ বছর বর্ষা ভাল হওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার আশা করা যায়। দুই, স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণের পরিমাণ খুবই কম। তিন, বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার। রাজনের যুক্তি, প্রাথমিক ভাবে ভারতের বাজার থেকে বিরাট পরিমাণে বিদেশি লগ্নি বেরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। কয়েক দিন পরেই লগ্নিকারীরা ফের লগ্নি করতে শুরু করবেন। ঋণনীতি কমিটি রূপায়ণ, জিএসটি বিল পাশ করানো হবে বলে সরকার তাঁকে জানিয়েছে। সে ক্ষেত্রে ভারত লগ্নির গন্তব্য হয়ে উঠতে পারে। জেটলিরও দাবি, নিরাপদ লগ্নির ঠিকানা খুঁজতে গেলে মজবুত ভিত ও বৃদ্ধির চড়া হারের ভারতও লগ্নিকারীদের তালিকায় এগিয়ে থাকবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন