বিজয় মাল্যের মাথায় কার হাত ছিল, তরজা সংসদে

পাখি উড়েছে। কিন্তু তার পলায়নের দায় কার, তা নিয়ে আজ তোলপাড় চলল সংসদে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির দেনা না মিটিয়ে ‘বিয়ার ব্যারন’ বিজয় মাল্য দেশ ছাড়তে পারলেন কী করে, তা নিয়ে নরেন্দ্র মোদী-অরুণ জেটলিকে তীব্র আক্রমণ করলেন রাহুল গাঁধী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৬ ০৩:৪৪
Share:

পাখি উড়েছে। কিন্তু তার পলায়নের দায় কার, তা নিয়ে আজ তোলপাড় চলল সংসদে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির দেনা না মিটিয়ে ‘বিয়ার ব্যারন’ বিজয় মাল্য দেশ ছাড়তে পারলেন কী করে, তা নিয়ে নরেন্দ্র মোদী-অরুণ জেটলিকে তীব্র আক্রমণ করলেন রাহুল গাঁধী। জেটলি পাল্টা প্রশ্ন তুললেন, বফর্স মামলায় সিবিআইয়ের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও অস্ত্র ব্যবসায়ী ওত্তাভিও কুত্রোচ্চিকে কেন পালাতে দিয়েছিল তৎকালীন কংগ্রেস সরকার?

Advertisement

পাঁচ রাজ্যে ভোটের আগে মাল্যকে ঘিরে শাসক বনাম বিরোধী এই চাপানউতোর আপাতত জারি থাকবে বলেই মনে করছেন অনেকে। মূলত কিংফিশার এয়ারলাইন্স চালাতে ২০০৪ থেকে বিভিন্ন সময়ে ১৩টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন মাল্য। ক্রমাগত লোকসানে ঝাঁপ বন্ধ হয়েছে সেই উড়ান সংস্থার। এখন টাকা ফেরত পেতে সুপ্রিম কোর্ট ও মুম্বই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে ব্যাঙ্কগুলি। গত কাল কেন্দ্রে সর্বোচ্চ আদালতে জানায়, সম্ভবত ২ মার্চ মাল্য দেশ ছেড়েছেন এবং লন্ডনে রয়েছেন।

এই স্বীকারোক্তির পরেই আজ সংসদে সরকারকে চেপে ধরেন রাহুল গাঁধী। দুই কক্ষেই তুমুল হল্লা করে কংগ্রেস। যা দেখে অনেকে পরে বলেছেন, মাস ছয়েক আগে একই ভাবে ললিত মোদীকে দেশ ছাড়তে সাহায্য করার অভিযোগে মোদীকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছিলেন সনিয়া-রাহুল। এ বার তাঁদের অস্ত্র মাল্য। কিন্তু এটাও ঠিক, বিজেপির পাল্টা তোপের জন্যও তৈরি থাকতে হবে তাঁদের।

Advertisement

যেমন জেটলি আজ বলেছেন, ‘‘মনে রাখতে হবে, মাল্যকে উপর্যুপরি ঋণ পেতে সাহায্য করেছিল ইউপিএ সরকার। ২০০৯ থেকে তাঁর ঋণ অনাদায়ী। তা সত্ত্বেও ২০১০ সালে সেই ঋণের পুনর্গঠন করা হয়েছিল।’’ স্বাভাবিক ভাবেই এই ব্যাখ্যা মানতে চাননি রাহুল। সংসদের বাইরে তিনি বলেন, ‘‘ঋণ দিয়েছিল ব্যাঙ্ক। সেটা বড় কথা নয়। প্রশ্ন হল, তাকে দেশের বাইরে পালাতে দেওয়া হল কেন? এই সরকার কালো টাকা সাদা করার ‘ফেয়ার অ্যান্ড লাভলি’ প্রকল্প শুরু করেছে। কালোবাজারি, মাফিয়ারা তার ফাঁক গলে বেরিয়ে যাচ্ছে!’’ পরে টুইটারেও রাহুল লেখেন, ‘‘কোনও গরিব মানুষ চুরি করলে তাকে মারধর করে জেলে পোরা হয়। এক জন শিল্পপতি সরকারের ৯ হাজার কোটি টাকা চুরি করে নিয়েছে। তাকে ফার্স্ট ক্লাসে বসিয়ে লন্ডনে পাঠিয়ে দিচ্ছে সরকার!’’ তাঁর নামে ‘লুক আউট নোটিস’ থাকা সত্ত্বেও মাল্য কী ভাবে এখনও রাজ্যসভার সদস্য হয়ে রয়েছেন, সেই প্রশ্ন তোলেন রাহুল।

এরই পাল্টা কফিন থেকে বফর্স বের করে আনেন জেটলি। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, ‘‘রাহুলকে বুঝতে হবে, ব্যাপারটা কুত্রোচ্চির মতো নয়। বফর্স মামলায় কুত্রোচ্চির বিরুদ্ধে সুইস কর্তৃপক্ষ ভারতকে তথ্য দিয়েছিলেন। সিবিআইয়ের তরফে তদন্তকারী কে মাধবন তখন কেন্দ্রকে চিঠি লিখে তাঁকে আটকাতে বলেছিলেন। তার পরেও কুত্রোচ্চিকে ভারত ছাড়তে দেওয়া হয়।’’ জেটলির দাবি, কুত্রোচ্চির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা ছিল। কিন্তু মাল্য যখন দেশ ছাড়েন, তখন তাঁকে আটকানোর জন্য কোনও সংস্থার তরফে কোনও নির্দেশ ছিল না। পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত এবং কোর্টের নির্দেশ ছাড়া কারও বিদেশ যাওয়া আটকানো যায় না।

সংবাদ সংস্থার যদিও দাবি, ২০১৫-র ১৬ অক্টোবর মাল্যর বিরুদ্ধে লুক আউট নোটিস জারি করেছিল সিবিআই। তার পরেও অক্টোবর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে চার বার বিদেশে গিয়েছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ২ মার্চ পাকাপাকি দেশ ছাড়েন তিনি। সূত্রের দাবি, মাল্য দেশ ছাড়লে তা জানাতে অভিবাসন দফতরকে অনুরোধ করেছিল সিবিআই। কিন্তু তাঁকে আটকাতে বলেনি। প্রশ্ন হল, কেন? সূত্রটির দাবি, মাল্য তদন্তে সহযোগিতা করছিলেন। তাঁর নামে চার্জশিটও নেই। তাই তাঁকে বিদেশে যেতে বাধা দেননি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।

এখানেই কারও কারও অভিযোগ, কেন্দ্রের নির্দেশেই এই শিথিলতা দেখিয়েছে সিবিআই। জেটলি অবশ্য বলেছেন, ‘‘সরকারের কারও গাফিলতির প্রমাণ মিললে তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকার কড়ায়-গণ্ডায় সমস্ত টাকা আদায়ে বদ্ধপরিকর। তবে ব্যাঙ্কগুলি আরও আগে সক্রিয় হলে এই বিড়ম্বনা এড়ানো যেত। তারাই দেরি করেছে।’’ জবাবে বিরোধীদের বক্তব্য, টাকা ফেরত না পেলে ব্যাঙ্কগুলি যে আদালতে যাবে, সে তো জানা কথা। আসলে পরিকল্পনা মাফিকই মাল্য দেশ ছেড়ে যাওয়ার পরে হম্বিতম্বি হচ্ছে। এক কংগ্রেস নেতার দাবি, ‘‘মাল্যর সঙ্গে দিল্লি ও কর্নাটকের বিজেপি নেতাদের ঘনিষ্ঠতা দুনিয়া জানে। ললিত মোদীর মাধ্যমে বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গেও গভীর সম্পর্ক ছিল তাঁর।’’

অবশ্য এ-ও শোনা যায়, মাল্য-ঘনিষ্ঠদের মধ্যে কংগ্রেস নেতাও কম নেই। আসলে সব শিবিরের সঙ্গেই বরাবর সুসম্পর্ক রেখেছেন বিয়ার ব্যারন। দীপাবলির সময়ে প্রত্যেক সাংসদকে উপহার পাঠিয়েছেন নিয়ম করে। তবে তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠানোয় বিজেপির অগ্রণী ভূমিকা ছিল। সেটাই বিরোধীদের সুবিধে করে দিচ্ছে। সুবিধে করে দিচ্ছে রাহুলের।

প্রয়াত প্রমোদ মহাজনের কথা তুললেন এক জেডিইউ নেতা— ‘‘প্রমোদ বলতেন, সব বুলেটই যে ঘাতক হবে, তা নয়। কিন্তু প্রতিটি বুলেট একটু একটু করে ক্ষত তৈরি করে। ললিত মোদী, সুষমা স্বরাজ, বসুন্ধরা রাজে, বিজয় মাল্যদের তেমনই এক একটা বুলেট হিসেবে ব্যবহার করছেন রাহুল। তিনি দেখাতে চাইছেন, শিল্পপতিরা দুর্নীতি করলে, টাকা চুরি করে পালালেও বাধা দেয় না বিজেপি। এবং এই বোমাবর্ষণ যে এখনই বন্ধ হবে না, সেটা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন