বন্ধন-এর গ্রাহকদের দরজায় বিশ্বব্যাঙ্কের ভারতীয় শীর্ষ কর্তা

বাজেটের সকাল অরুণ জেটলির কাছে যতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, হয়তো ততটাই উত্তেজনার ছিল বোদরা গ্রামের ৩৩ জন ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতা মহিলার কাছে! বাজেটের দিনই দক্ষিণ ২৪ পরগনার ওই গ্রামে তাঁদের দরজায় হাজির হয়েছিলেন ভারতে বিশ্ব ব্যাঙ্কের শীর্ষ কর্তা ওনো রুল।

Advertisement

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৪ ০৩:০৪
Share:

মন দিয়ে শোনা। বোদরা গ্রামে এন কে মইনি, ওনো রুল এবং চন্দ্রশেখর ঘোষ (বাঁ দিক থেকে)।

বাজেটের সকাল অরুণ জেটলির কাছে যতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, হয়তো ততটাই উত্তেজনার ছিল বোদরা গ্রামের ৩৩ জন ক্ষুদ্র ঋণগ্রহীতা মহিলার কাছে! বাজেটের দিনই দক্ষিণ ২৪ পরগনার ওই গ্রামে তাঁদের দরজায় হাজির হয়েছিলেন ভারতে বিশ্ব ব্যাঙ্কের শীর্ষ কর্তা ওনো রুল।

Advertisement

রুল শুনতে এসেছিলেন, ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থা বন্ধনের কাছে ধার নিয়ে কী ভাবে নিজেদের আর্থিক উন্নয়নের স্বপ্নকে বাস্তব করছেন উদয়াস্ত পরিশ্রম করা ওই মহিলারা। সঙ্গে স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার (সিডবি) ভারপ্রাপ্ত এমডি এন কে মইনি এবং বন্ধনের কর্ণধার চন্দ্রশেখর ঘোষ। বিশ্বব্যাঙ্কের শাখা আইএফসি-র মাধ্যমে বিশ্বব্যাঙ্কের এবং সিডবি-র পৃথক অংশীদারি রয়েছে বন্ধনে। ক্ষুদ্র ঋণ দেওয়ার জন্য বন্ধনকে ধারও দেয় তারা। এখন বন্ধন ব্যাঙ্কিং-লাইসেন্স পাওয়ার পর সেই নতুন পরিসরেও চন্দ্রশেখরবাবুর সংস্থার পাশে থাকার আশ্বাস দিচ্ছেন রুল ও মইনি। তবে তাঁদের বক্তব্য, তার জন্য সাহায্য চেয়ে প্রস্তাব দিতে হবে বন্ধনকেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রেও আইএফসি এবং সিডবি অংশীদারি নিতে পারে। আবার ব্যাঙ্কিং পরিষেবার পরিকাঠামো নির্মাণে উপদেষ্টার ভূমিকাও নিতে পারে তারা।

Advertisement

রুল অবশ্য জানিয়েছেন, গ্রামে এই ঢুঁ মারা একেবারেই ক্ষুদ্র ঋণ পরিষেবায় বন্ধনের সাফল্য দেখতে। পরে বন্ধনের কার্যালয়ে সংস্থাটির কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করেন তাঁরা। চন্দ্রশেখরবাবু জানান, ব্যাঙ্কিং পরিষেবার কাজ কতটা এগিয়েছে, সে বিষয়ে তাঁরা বিশ্বব্যাঙ্ক ও সিডবি কর্তাদের অবহিত করেছেন।

বোদরা গ্রামে পা রেখে এক বাড়িতে ‘সরস্বতী’ নামে গোষ্ঠীর মহিলাদের মুখোমুখি হন রুল, মইনি ও অন্যান্যরা। খুঁটিয়ে জানতে চান, কত বছর ধরে ঋণ নিচ্ছেন, তা দিয়ে কী ব্যবসা করছেন, আয় বেড়েছে কি না, সন্তানেরা (বিশেষত মেয়ে) স্কুল-কলেজে পড়ছে কি না ইত্যাদি। কথা বলেন নমিতা কর্মকার, মিতালি কর্মকার, শম্পা দাস, অঞ্জনা দাস, শঙ্করী মণ্ডলের মতো গোষ্ঠী সদস্যদের সঙ্গে। উঠে আসে অনেক ঘাম ঝরানো লড়াইয়ের আখ্যান।

যেমন, রূপালি দাস বলছিলেন, তাঁর ছেলে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। গত ছ’ বছর ধরে ঋণ নিয়ে ধাপে ধাপে ব্যবসায় উন্নতির পর তিনি নিজেও এ বছর স্নাতকে বাংলা নিয়ে ভাঙড় কলেজে ভর্তি হয়েছেন! অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ায় আগে যা করা হয়নি। গরিব মানুষের আর্থিক উন্নতির জন্য পশুপালন ইত্যাদির সুবিধাও দেয় বন্ধন। এমনই এক জন রহিমা বিবি। তাঁর কাছে রুল জানতে চেয়েছেন, তিনি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে পেরেছেন কি না। জবাবে রহিমা বিবি ও বন্ধনের প্রতিনিধিরা রুলকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট দেখালে ফের প্রশ্ন, আধার কার্ড রয়েছে? তাঁকে জানানো হয়, ভোটার কার্ড রয়েছে। অর্থাৎ উন্নতি সত্যিই কতটা হয়েছে, তা রীতিমতো যাচাই করে দেখেন রুল।

চিদম্বরমের মতো জেটলিও বাজেটে সকলের কাছে ব্যাঙ্কিং পরিষেবা পৌঁছনোর কথা বলেছেন। জানিয়েছেন, কর্মসূচি শুরু হবে ১৫ অগস্ট থেকে। রুল হয়তো দেখে গেলেন বন্ধন তার কতটা করছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন