সহজে ব্যবসা করার মাপকাঠি

ভারতের দাবি খতিয়ে দেখতে রাজি বিশ্বব্যাঙ্ক

সহজে ব্যবসা করার সুযোগের নিরিখে বিশ্বব্যাঙ্কের তালিকায় তেমন এগোতে না-পেরে মোদী সরকার দাবি তুলেছিল, এটি তৈরির পদ্ধতি পাল্টানো হোক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:৩৩
Share:

সহজে ব্যবসা করার সুযোগের নিরিখে বিশ্বব্যাঙ্কের তালিকায় তেমন এগোতে না-পেরে মোদী সরকার দাবি তুলেছিল, এটি তৈরির পদ্ধতি পাল্টানো হোক। সোমবার বিশ্বব্যাঙ্কের নতুন ভারতীয় প্রধান জুনেইদ আহমেদ জানান, এই দাবি খতিয়ে দেখবেন তাঁরা। তবে যে-সব ক্ষেত্রে ভারত উন্নতি করেছে, সেগুলিও যে রিপোর্টে ধরা পড়েছে, তালিকার যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে সে কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

Advertisement

সহজে ব্যবসা করার পরিবেশ (ইজ অব ডুয়িং বিজনেস) তৈরির নিরিখে প্রকাশিত ওই রিপোর্টে এ বার ১৩০ নম্বরে জায়গা পেয়েছে ভারত। গত বার ছিল ১৩১। আর মাত্র একটি ধাপ ওপরে ওঠায় হতাশায় ডুবেছে সংস্কারকে পাখির চোখ করে এগোনো মোদী সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এ বিষয়ে সব মন্ত্রকের কাছে এক মাসের মধ্যে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন। কারণ তাঁর লক্ষ্য, আগামী দু’এক বছরের মধ্যে দেশকে সেরা ৫০টির মধ্যে তুলে নিয়ে আসা। এই তালিকায় স্থান কোথায়, তার উপরে বিদেশি লগ্নিও অনেকটাই নির্ভর করে। যে কারণে মোদী ক্যাবিনেট সচিব-সহ সব মন্ত্রকের সচিবদেরও রিপোর্টটি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন।

অর্থ মন্ত্রকের অভিযোগ, দু’বারের রিপোর্ট তৈরির মাঝের সময়ে হওয়া এক ডজন সংস্কারকে এ বার কার্যত মাথায়ই রাখেনি বিশ্বব্যাঙ্ক। তা ছাড়া সেটি তৈরি হয়েছে দিল্লি ও মুম্বইয়ের পরিস্থিতির বিচারে। অথচ দেশের বিভিন্ন শহরেই লগ্নি ও ব্যবসার পরিবেশ সহজ করতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের কাজ হচ্ছে।

Advertisement

এই দাবির মধ্যে যে যুক্তি রয়েছে, তা বিশ্বব্যাঙ্কের কর্তারাও মানছেন। আহমেদ বলেন, একই মডেল যে সব ক্ষেত্রে খাটবে না, তা বোঝা যাচ্ছে। সে জন্য তালিকা তৈরির পদ্ধতির পরামর্শ খতিয়ে দেখা হবে। ভারত, ব্রাজিল, রাশিয়ার মতো বড় দেশগুলিও কেন্দ্রীয় স্তর থেকে নীচের স্তরে সংস্কারের কাজকে নিয়ে গিয়েছে। যদিও একই সঙ্গে তাঁর যুক্তি, এই একই পদ্ধতিতে বিভিন্ন দেশ থেকে ভাল সাড়াও মিলেছে। কোনও দেশ ভাল করতে পারছে না বলেই যে তারা পিছিয়ে থাকছে, সেটা না-ও হতে পারে। অন্যান্য দেশ আরও ভাল করছে বলেও একটি দেশ পিছিয়ে যেতে পারে। তাঁর দাবি, যে-সব ক্ষেত্রে ভারত উন্নতি করেছে, সেগুলিও রিপোর্টে ধরা পড়েছে। যেমন, শিল্পে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার সময় ও খরচ কমানোর প্রশংসা করা হয়েছে। কিন্তু ব্যবসা শুরু করা, নির্মাণ-কাজের অনুমতি পাওয়া বা ঋণ জোগাড় করার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অন্যদের তুলনায় পিছিয়ে থাকাতেই তালিকায় ভারত তেমন ওপরে উঠতে পারেনি।

বিশ্বব্যাঙ্কের রিপোর্ট নিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থ বিষয়ক সচিব শক্তিকান্ত দাস যুক্তি দিয়েছিলেন, আগামী বছর জিএসটি, সহজে সংস্থা গুটিয়ে নেওয়ার পথ প্রশস্ত করতে দেউলিয়া আইন, প্রাকৃতিক সম্পদ বণ্টনে সুস্পষ্ট নীতি, অনলাইনে কর জমার ব্যবস্থা তৈরির কাজ শেষ হয়ে গেলে ভারত তালিকায় অনেক উঠে আসবে। কিন্তু এ বছর জুন পর্যন্ত যে-সব কাজ হয়েছে, শুধু সেগুলিই ধরা পড়েছে এ বারের রিপোর্টে। বিশ্বব্যাঙ্ক কর্তারও যুক্তি, রিপোর্ট তৈরি করতে হলে একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে কাজের মূল্যায়ন করতে হয়। তিনি বলেন, ‘‘আগামী বছরের রিপোর্টে জিএসটি, দেউলিয়া আইনের মতো সংস্কার প্রতিফলিত হলে ভারত তালিকায় অনেকটা উঠতে পারে।’’

বিশ্বের বিভিন্ন শহর বসবাসের জন্য কতখানি সুবিধাজনক, তারও তালিকা তৈরি করছে বিশ্বব্যাঙ্ক। কোনও শহরে থাকার খরচ, গণ-পরিবহণ, আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, নিরাপত্তা, প্রশাসন, দুর্নীতি, সামাজিক মেলবন্ধনের মতো মাপকাঠির ভিত্তিতে ওই ‘ইজ অব লিভিং’ সূচক তৈরি হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন