অবশেষে বিক্রি হতে চলেছে রুগ্ণ রাজ্য সরকারি সংস্থা অ্যাপোলো জিপার কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, দীর্ঘ দিন ধরে ধুঁকতে থাকা এই সংস্থাকে নিলামে তুলে রাজ্যের কোষাগারে আসবে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। আর রাজ্য সরকারও এই প্রক্রিয়া শেষ করতে চাইছে চলতি বছরের মধ্যেই।
মূলত জিপার (জামাকাপড়ের চেন) তৈরি করত অ্যাপোলো জিপার। ইতিমধ্যেই ওই সংস্থার কারখানার যন্ত্রপাতি কিনতে চেয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম জিপার নির্মাতা ওয়াইকেকে। ৭৫ বছরেরও বেশি পুরনো ওই জাপানি সংস্থা সূত্রে খবর, অ্যাপোলো জিপারের কারখানার যন্ত্রপাতি উচ্চমানের। তাই তার জন্য চড়া দাম দিতেও পিছপা নয় পৃথিবীজুড়ে জিপার বিক্রি করা সংস্থাটি।
সে ক্ষেত্রে সংস্থা নিলামে তোলার প্রক্রিয়াও দু’ভাগে বিভক্ত হওয়ার কথা। সরকারি সূত্রে খবর, কারখানা ও তার জমি বিক্রির জন্য একটি দরপত্র চাওয়া হবে। আর একটি আলাদা দরপত্র চাওয়া হবে যন্ত্রপাতি বিক্রির জন্য। তবে শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে চূড়ান্ত পদ্ধতি কী হবে, তা নিয়ে সরকারি স্তরে আলোচনা এখনও চলছে।
আবাসন প্রকল্পের জন্য কলকাতা ও তার আশেপাশে জমির চাহিদা এই মুহূর্তে তুঙ্গে। কিন্তু দমদম বিমানবন্দরের কাছে অ্যাপোলো জিপারের কারখানার আধ একর জমি যেন শিল্পের কাজেই ব্যবহৃত হয়, তা নিশ্চিত করতে চায় রাজ্য। আটকাতে চায় আবাসন ও অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রকল্প। সরকারি সূত্রে খবর, এই কারণেই শিল্পের জমিতে শিল্প করার শর্ত রাখা হবে দরপত্রে।
উল্লেখ্য, বহু বছর আগেই রুগ্ণ সংস্থার তালিকায় নাম লিখিয়েছে অ্যাপোলো জিপার। ১৯৯৯ সালে পূর্বতন বাম সরকারের আমলেই এই সংস্থার দায় ঘাড় থেকে নামানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু সেটা করার জন্য কোন পথে এগোনো হবে, তা নিয়ে টালবাহানা চলে বেশ কিছুদিন। প্রথমে ঠিক হয়, সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগের (পিপিপি মডেল) রাস্তায় হাঁটা হবে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা কাজে আসেনি। কারণ, রাজ্যের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে সংস্থা চালাতে আগ্রহই দেখায়নি কোনও বেসরকারি সংস্থা।
এর পরে পরিকল্পনা হয় অ্যাপোলো জিপারের কারখানা ও সংলগ্ন জমিতে ছোট ও মাঝারি ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের জন্য তালুক গড়ার। সেই সূত্রে ওঠে রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের প্রসঙ্গ। এমনিতে কারখানাটি বিমানবন্দরের কাছে হওয়ায় সড়ক যোগাযোগ ও অন্যান্য নাগরিক পরিষেবা বেশ আকর্ষণীয়। ফলে সেখানে শিল্পতালুক তৈরি হলে, তা বিপণন করা সহজ হবে বলেই মনে করেছিল রাজ্য। এ জন্য নিগমের তরফে অগ্রিম বাবদ প্রায় ৪৩ লক্ষ টাকা জমাও রাখা হয়। কথা ছিল, ছোট-ছোট মডিউল তৈরি করে তা বিক্রি করা হবে নানা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প সংস্থাকে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, লাল ফিতের ফাঁসে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতেও সময় নষ্ট হয়।
শেষ পর্যন্ত ২০০৬ সালে সংস্থার ফাইল হাতে পায় নিগম। সংস্থা বিক্রি করে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাদের। সেই অনুযায়ী, শুরু হয় সংস্থার মূল্যায়ন ও বিভিন্ন সমীক্ষার কাজ। সেই কাজ শেষের পরই এখন সংস্থা নিলামে তোলার সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে রাজ্য।