ইনফোসিসের প্রত্যাশা ছাপানো আর্থিক ফলাফল সত্ত্বেও শুক্রবার শিল্পোৎপাদনের তথ্যে হতাশ হয়ে সূচক বেশ কিছুটা মেদ ঝরায়। অগস্ট মাসে শিল্পোৎপাদন বেড়েছে মাত্র ০.৪%। আর এপ্রিল থেকে অগস্ট এই পাঁচ মাসে ২.৮%।
এই গতিতে বাড়লে ২০১৪-’১৫ সালে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির হার ৫.৫% থেকে ৬ শতাংশে পৌঁছনো বেশ শক্ত হবে বলে মনে করছেন অনেকেই। ফলে এই পরিসংখ্যানে মুষড়ে পড়ে শেয়ার বাজার। অথচ ক’দিন আগে প্রকাশিত পরিসংখ্যানে অগস্টে পরিকাঠামো শিল্পে ৫.৮% বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছিল।
এই বিপরীতমুখী তথ্যে বাজার কিছুটা বিভ্রান্তও। অর্থনীতি সত্যি সত্যি কী গতিতে এগোচ্ছে তার স্পষ্ট কোনও ইঙ্গিত মিলছে না। আশঙ্কার অন্যতম কারণ, অগস্টে মূলধনী পণ্য এবং ভোগ্যপণ্য শিল্পে উৎপাদন যথাক্রমে ১১.৩% এবং ১৫% হ্রাস পাওয়া। এই দুই শিল্পে উৎপাদন কমা অর্থনীতি সম্পর্কে আদৌ ভাল ইঙ্গিত দেয় না। উৎসবের মরসুমে এর কোনও বদল হয় কি না সেটাই এখন দেখার। কেন্দ্র অবশ্য এই পরিসংখ্যানকে বড় কোনও গুরুত্ব দিতে রাজি নয়।
ফলাফলের মরসুমে প্রথম বলেই ছক্কা মেরে তাক লাগিয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিস। আশার তুলনায় ভাল ফল প্রকাশ করে গোড়াতেই নজর কাড়ে নবনিযুক্ত বিশাল সিক্কার অধীনে থাকা সংস্থাটি। বছরের দ্বিতীয় তিন মাসে তারা ১৩,৩৪২ কোটি টাকা আয়ের উপর ঘরে তুলেছে ৩০৯৬ কোটি নিট মুনাফা। প্রতিটি ৫ টাকার শেয়ার পিছু আয় দাঁড়িয়েছে ৫৪.১৯ টাকা। সংস্থার শেয়ারহোল্ডারদের জন্য আর একটি ভাল খবর ১:১ অনুপাতে বোনাস শেয়ার ঘোষণা। গত ১০ বছরে সংস্থা বোনাস শেয়ার ইস্যু করেছিল দু’বার। ২০০৪ সালে ৩:১ অনুপাতে ও ২০০৬ সালে ১:১ অনুপাতে। এ ছাড়া শেয়ারহোল্ডাররা অন্তর্বর্তী ডিভিডেন্ড পাবেন শেয়ার পিছু ৩০ টাকা করে। সংস্থার ১.৬৫ লক্ষ কর্মীর প্রত্যেকে পাবেন ১০০% পরিবর্তনশীল বোনাস।
মোটের উপর সূচক দুর্বল হয়ে পড়লেও ইনফোসিসের ফলাফল এবং বোনাসের খবরে বাজার খুশি। তাই শুক্রবার সেনসেক্স ৩৪০ পয়েন্ট নামলেও ইনফোসিস শেয়ার দর ২৪৩ টাকা বেড়ে পৌঁছয় ৩৮৮৯ টাকায়। এখন থেকে শুরু করে আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত প্রকাশিত হবে ত্রৈমাসিক তথা ষাণ্মাসিক ফলাফল। প্রথম দিকের ফলাফল ভাল হলে দেওয়ালির রাতে মুরত লেনদেনে বাজার চাঙ্গা থাকবে বলে আশা করা যায়। পাশাপাশি অবশ্য মাথায় রাখতে হবে বিশ্ব বাজারের প্রভাবও।
মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ এখনই সুদ বাড়াচ্ছে না, এই খবরে বৃহস্পতিবার তাৎক্ষণিক ভাবে চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল শেয়ার বাজার। কিন্তু পরের দিনই সূচক খুইয়ে বসে উত্থানের অনেকটাই। এই অস্থির বাজারে সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধায় পড়ছেন লগ্নিকারীরা। বুঝতে পারছেন না কখন কেনা এবং কখন বিক্রি করা ঠিক হবে। ছোট মেয়াদে বাজারের গতিবিধি সম্পর্কে নিশ্চিত করে কেউই কিছু বলতে পারছেন না। তবে মাঝারি থেকে দীর্ঘ মেয়াদে বেশির ভাগ মানুষই কিন্তু আশাবাদী। তার কারণ
• আগামী দিনে মোদী সরকার দ্রুত আর্থিক সংস্কারের পথে হাঁটবে।
• মোদীর ‘মেক-ইন-ইন্ডিয়া’ উদ্যোগে সুদূরপ্রসারী ফল ফলবে।
• মোটা বিনিয়োগ আসবে জাপান, চিন এবং মার্কিন মুলুক থেকে।
• উদীয়মান অর্থনীতিগুলির মধ্যে ভারতের আকর্ষণই এখন সর্বাধিক।
• বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনে বিজেপি ভাল ফল করলে কেন্দ্রে সরকারের হাত আরও শক্ত হবে।
• মার্কিন অর্থনীতির উন্নতি হলে ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য বাড়বে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী ১ অক্টোবর থেকে ঋণপত্র নির্ভর ফান্ডের (ডেট ফান্ড) ডিভিডেন্ডের উপর ডিভিডেন্ড বণ্টন-কর ২২.০৭২% থেকে বেড়ে হয়েছে ২৮.৩২৫%। ফলে ব্যক্তিগত লগ্নিকারীরা পাবেন আগের তুলনায় কম ডিভিডেন্ড। এতে আকর্ষণ কমবে ডিভিডেন্ড প্রদানকারী প্রকল্পগুলির। বিশেষত যাঁরা ১০ ও ২০% করের আওতায় পড়েন এমন লগ্নিকারীদের কাছে। তুলনামূলক ভাবে ৩ বছরের বেশি মেয়াদে বৃদ্ধির (গ্রোথ) সুবিধাযুক্ত প্রকল্প বেশি লাভজনক। ইক্যুইটি প্রকল্পের উপর ডিভিডেন্ড অবশ্য করমুক্তই থাকবে।