অবশেষে লক্ষ্য পূরণ। রবার্তো আজেভেদো। ছবি: রয়টার্স।
উনিশ বছর।
তৈরি হওয়ার পর প্রায় দু’দশক পরে এই প্রথম অবাধ বাণিজ্য নীতি নিয়ে একসঙ্গে পথ চলতে সব সদস্য দেশকে রাজি করাতে পারল ডব্লিউটিও।
চলতি মাসের মাঝামাঝি খাদ্য সুরক্ষা নিয়ে ভারতের দাবি মার্কিন মুলুক মেনে নেওয়ায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা বা ডব্লিউটিও-র মঞ্চে এই ঐকমত্যের সম্ভাবনা এমনিতেই জোরালো হয়েছিল। তার পর অবশেষে বৃহস্পতিবার রাতে (ভারতীয় সময় অনুযায়ী) ডব্লিউটিও-র এক কর্তা জানালেন বছরের পর বছর আটকে থাকা, মাসের পর মাস দর কষাকষি আর দিনের পর দিন দম বন্ধ করা টানাপড়েনের পরে সত্যিই অবাধ বাণিজ্য নিয়ে বাধা কেটেছে। ফলে এ বার ১৬০টি সদস্য দেশের মধ্যে বাণিজ্য আরও অবাধ করতে নয়া নীতি জারি করবে ডব্লিউটিও। তা চালু হলে সারা বিশ্বের আয় বাড়বে ১ লক্ষ কোটি ডলার। তৈরি হবে ২ কোটি ১০ লক্ষ কাজের সুযোগও। যার অনেকটাই হবে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে।
এ দিন জেনিভায় বিশেষ বৈঠকে বসেছিল ডব্লিউটিও-র শীর্ষ পরিচালন কমিটি। তার শেষে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল রবার্তো আজেভেদো সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “আলাপ-আলোচনাকে ফের পথে ফেরানো সম্ভব হল।” একই সঙ্গে তাঁর সতর্কবার্তা, “আগামী দিনে এ ধরনের নীতি তৈরির ক্ষেত্রে আরও অনেক দ্রুত একমত হওয়া জরুরি। নতুন কোনও সাফল্যের জন্য ফের ১৭-১৮ বছর অপেক্ষা করা অসম্ভব।” যদিও অনেকে বলছেন, শেষমেশ সাফল্য এল ঠিকই। কিন্তু তা পেতে হল মূল দোহা-রাউন্ডের আলোচনা থেকে অনেকখানি আপস করে।
১৯৯৫ সালে তৈরি হওয়ার পর থেকেই ডব্লিউটিও-র প্রধান লক্ষ্য পৃথিবী জুড়ে বাণিজ্য যথাসম্ভব অবাধ করা। কর এবং পরিমাণগত বিধিনিষেধ সরল করে সেই লক্ষ্যে এগোনো। এ নিয়ে ২০০১ সালে পুরোদস্তুর আলোচনা শুরু হয় দোহায়। কিন্তু সমঝোতা হয়নি। কারণ, বাণিজ্য-নীতি নিয়ে তখন থেকেই মতান্তর শুরু হয়েছিল আমেরিকা, ইউরোপের মতো উন্নত দুনিয়ার সঙ্গে ভারত, চিনের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলির।
এর পর অবাধ বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়তে ২০১৩ সালে চুক্তি (ট্রেড ফেসিলিটেশন এগ্রিমেন্ট) হয়েছিল ইন্দোনেশিয়ার বালিতে। কিন্তু অচলাবস্থা তৈরি হয় তা নিয়েও। কারণ, ওই চুক্তিতে খাদ্যপণ্যে ভর্তুকির সীমা (১০%) বেঁধে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। আপত্তি তোলা হয়েছিল খাদ্যপণ্য মজুত করা নিয়েও। তা নিয়ে বেঁকে বসে ভারত।
দিল্লির যুক্তি ছিল, দরিদ্রদের ভর্তুকিতে খাদ্য বণ্টনের কারণেই ভারতকে বেশি শস্য মজুত রাখতে হয়। তা ছাড়া, আমেরিকার (১২,০০০ কোটি ডলার) তুলনায় এ দেশে কৃষিতে ভর্তুকিও অনেক কম (১,২০০ কোটি ডলার)। শেষ পর্যন্ত গণবণ্টনের জন্য শস্য মজুত রাখার ব্যবস্থা এবং ওই একই লক্ষ্যে দেওয়া খাদ্যে ভর্তুকি বজায় রাখা নিয়ে ভারতের দাবির সঙ্গে একমত হয় আমেরিকা। জানায়, যতদিন না ডব্লিউটিও-র সদস্য দেশগুলি এ নিয়ে স্থায়ী রফাসূত্র বার করবে, ততদিন চালু থাকবে ওই ভর্তুকি।
ডব্লিউটিও-র অবাধ বাণিজ্য নীতির পথে বাধা যে কাটতে চলেছে, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল তখনই। মাঝে অবশ্য আবার বেঁকে বসেছিল আর্জেন্তিনা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব বাধা কাটিয়ে এ দিন ইতিহাস গড়ল ডব্লিউটিও।