আগের আর্থিক বছরের আতস কাচে দেখলে পরিস্থিতি কিছুটা শুধরেছে। কিন্তু তা বলে পরিসংখ্যান তত ভালও নয়, যতটা আশা করছে শিল্পমহল বা দিল্লি। তাই সেই অর্থে কিছুটা উদ্বেগই জিইয়ে রাখল শিল্প বৃদ্ধি এবং খুচরো মূল্যস্ফীতির হার। যে কারণে বাজেটে শিল্পের হাল ফেরাতে দাওয়াই ঘোষণার দাবি তুলেছে শিল্পমহল। ফের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে আর্জি জানিয়েছে সুদ কমানোরও।
বৃহস্পতিবার কেন্দ্রের প্রকাশিত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে দেশে শিল্প বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ১.৭%। আর জানুয়ারিতে খুচরো বাজারে দামের ভিত্তিতে হিসেব করা মূল্যবৃদ্ধির হার হয়েছে ৫.১১%।
এমনিতে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের শিল্প বৃদ্ধির (০.১%) তুলনায় গত ডিসেম্বরের পরিসংখ্যান কিছুটা ভাল। প্রথম ন’মাসের (এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর) নিরিখেও ২০১৩-’১৪ অর্থবর্ষের (০.১%) তুলনায় বেশ কিছুটা এগিয়ে ২০১৪-’১৫ (২.১%)। কিন্তু তেমনই ডিসেম্বরে শিল্প বৃদ্ধির ওই ১.৭% হার আবার তার ঠিক আগের মাসের (৩.৯%) সাপেক্ষে বেশ কিছুটা কম। যার অন্যতম কারণ খনন শিল্পে উৎপাদন সঙ্কুচিত হওয়া।
স্বাভাবিক ভাবেই বণিকসভাগুলির দাবি, ঝিমিয়ে পড়া শিল্পকে দ্রুত চাঙ্গা করতে আসন্ন বাজেটে সংস্কারের ঝোড়ো ইনিংস খেলুন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। কর-ব্যবস্থা আরও সরল করা হোক। সামগ্রিক ভাবে ব্যবসার পরিবেশ হোক আরও লগ্নিবান্ধব। বাজারে চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি মূলধন জোগাড়ের খরচ কমাতে শীর্ষ ব্যাঙ্কের কাছে সুদ হ্রাসেরও আর্জি জানিয়েছে তারা।
কিন্তু অনেকে মনে করছেন, বাজেট কেমন হল, তা দেখে তবেই সুদ কমানোর সিদ্ধান্ত নেবেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন। তাই এখনই তা কমা শক্ত। তার উপর এ দিনের পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে, ডিসেম্বরের (৪.২৮%) তুলনায় খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধি জানুয়ারিতে ফের বেড়েছে। সুতরাং তা দেখে রাজন এখনই সুদ কমাতে কতটা আগ্রহী হবেন, তা নিয়ে সন্দিহান তাঁরা। অবশ্য এর উল্টো মতও রয়েছে। অনেকে বলছেন, মূল্যবৃদ্ধির এই নতুন পরিসংখ্যানের সঙ্গে পুরনোগুলিকে তুলনা করা অর্থহীন। কারণ, এ বারের হিসাব করা হয়েছে ২০১২ সালকে ভিত্তিবর্ষ ধরে। আগে যা ছিল ২০১০। শুধু তা-ই নয়, কিছুটা বদলানো হয়েছে সেই হিসেবের পদ্ধতি। যেমন, খাদ্যপণ্য এবং জ্বালানির আপেক্ষিক গুরুত্ব কমিয়ে তা কিছুটা বাড়ানো হয়েছে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ক্ষেত্রে। কেন্দ্রের মুখ্য পরিসংখ্যানবিদ টি সি এ অনন্তেরও দাবি, আগের বারের মতো মূল্যবৃদ্ধির অসুর আর মাথাচাড়া দেবে না এই অর্থবর্ষে। তা ছাড়া, এই ৫.১১% মূল্যবৃদ্ধি শীর্ষ ব্যাঙ্কের লক্ষ্যমাত্রারও ভিতরে। কিন্তু এ সব সত্ত্বেও মূল্যবৃদ্ধির সামান্য মাথাচাড়া দেওয়া যে ফের সুদ কমার পথে কাঁটা হবে না, তা হলফ করে বলা কঠিন। বিশেষত যেখানে ওই হার বেড়েছে মূলত ফল, শাকসব্জি-সহ খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণে। যাতে বাঁধ দিতে এতদিন চড়া সুদের জমানা বজায় রেখেছিল শীর্ষ ব্যাঙ্ক।