অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে উত্থান-পতনে জমজমাট ছিল গত সপ্তাহটি। জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি, অশোধিত তেল, শেয়ার, সোনা, ডলার ইত্যাদি ক্ষেত্রে উত্থান ও পতন দু’ই-ই দেখা গিয়েছে গত সপ্তাহে। সুদের ক্ষেত্রে কী হয়, তা জানার জন্য আর খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে না। ছোট করে দেখে নেওয়া যাক কোন ক্ষেত্রের কী অবস্থা।
জাতীয় আয়: শুক্রবার প্রকাশিত হয়েছে চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ছ’মাসের জাতীয় আয় বৃদ্ধির পরিসংখ্যান। বছরের দ্বিতীয় তিন মাসে অর্থনীতির চাকা প্রথম তিন মাসের তুলনায় কিছুটা মন্থর হলেও বাজারের আশঙ্কার তুলনায় পরিসংখ্যান মন্দ নয় বলে মনে করা হচ্ছে। এপ্রিল-জুনে ৫.৭% বৃদ্ধির তুলনায় জুলাই-সেপ্টেম্বরে জাতীয় উৎপাদন বা আয় বেড়েছে ৫.৩% হারে। আগের বছর একই সময়ে তা ছিল ৫.২%। সরকারের আশা, গোটা বছরে বৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৫.৫%।
অশোধিত তেল: একনাগাড়ে পতন চলছে অশোধিত তেলের দামে। বিশ্ব বাজারে ব্রেন্ট ক্রুড-এর দাম এক সময়ে ছিল ব্যারেলে ১১৫ ডলার। তা শুক্রবার নেমে এসেছে ৭০ ডলারেরও নীচে। ভারতের মতো তেল আমদানিকারী দেশের জন্য এটি অবশ্যই বড় সুখবর। এর ফলে বিদেশি মুদ্রায় বড় রকমের সাশ্রয় হবে। দেশে কমছে পেট্রোল, ডিজেলের দাম। খুশি গাড়ি নির্মাতারা। শুক্রবার নজির গড়েছে মারুতি-সুজুকির শেয়ারের দরও।
শেয়ার: বাজার তুঙ্গে। প্রায় প্রতিদিন নতুন নজির গড়ছে সেনসেক্স ও নিফটি। বাজারে চলছে শক্তিশালী ‘বুল রান’। নথিবদ্ধ সব শেয়ারের বাজার দর (মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন) ছাড়িয়েছে ১০০ লক্ষ কোটি টাকা। ২০০৩ সালে তা ছিল ১০ লক্ষ কোটি টাকা, যা ৫০ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছয় ২০০৯ সালে। এই পরিসংখ্যান ইঙ্গিত দেয়, শেয়ারে দীর্ঘ মেয়াদে লগ্নি করে কী ধরনের লাভ হতে পারে। ২০১৩-’১৪ সালে ভারতের জাতীয় আয় ছিল প্রায় ১১৪ লক্ষ কোটি টাকা। বাজার যে-গতিতে বাড়ছে, তাতে মনে হচ্ছে শেয়ারের মোট বাজার দর আর কিছু মাসের মধ্যেই জাতীয় আয়কে ছাপিয়ে যেতে পারে। মাঝেমধ্যে সংশোধন সাপেক্ষে বাজার এখন চাঙ্গাই থাকবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সোনা: অপ্রত্যাশিত ভাবে সোনা আমদানির শর্ত শিথিল করায় দাম আরও নেমেছে সপ্তাহ শেষে। ২০১৩-র নির্দেশ অনুযায়ী আমদানি করা সোনার কমপক্ষে ২০% রফতানির শর্ত ছিল। এই ৮০:২০ শর্ত রিজার্ভ ব্যাঙ্ক তুলে নেওয়ায় সোনার জোগান বাড়ার সম্ভাবনা। ফলে পড়ছে এই হলুদ ধাতুর দাম। শনিবার প্রতি ১০ গ্রাম পাকা সোনা ও হলমার্ক সোনা নেমেছে যথাক্রমে ২৬,৪৪৫ টাকা এবং ২৫,৪৬৫ টাকায়।
ডলার: অশোধিত তেলের দাম অনেকটা কমলেও দ্রুত বেড়ে ওঠা ডলারের দাম ভাবাচ্ছে ভারতীয় অর্থনীতিকে। শুক্রবার ডলার ৬২ পেরিয়ে পৌঁছেছে ৬২.০৩ টাকায়।
সুদ: সুদ কমানো নিয়ে বিতর্ক চলছে গত দু’বছর ধরে। এত কাল মূল্যবৃদ্ধি তুঙ্গে থাকায় সুদ কমানোর দাবিতে কর্ণপাত করেনি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। সম্প্রতি তা অনেকটা নেমে আসায় এবং আশানুরূপ আর্থিক বৃদ্ধি না-ঘটায় এ বার তারা সুদ কমানোর কথা বিবেচনা করতে পারে। এখনই না-হলেও ফেব্রুয়ারির মধ্যে সুদ কমতে পারে। বাজারের বর্তমান অবস্থায় সুদ কমানো হলে ৩০ হাজার ছুঁতে সেনসেক্সের খুব বেশি সময় লাগবে না।